Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে বাংলাদেশ

সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত জুন-জুলাই থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব কায়াহ এবং কাইন ও উত্তর-পশ্চিম চীন রাজ্যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ তীব্র করছে দেশটির সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি রাখাইন (আরাকান) রাজ্যেও বিদ্রোহী দমনের নামে গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপ, হেলিকপ্টার দিয়ে টহল জোরদার করেছে।

তবে যে কোনো ধরনের শরণার্থী অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ মিয়ানমারের সীমান্তে বান্দরবানের লাগোয়া সীমান্তের তানপট্টি ও হাকা রাজ্যে গত এক মাস ধরে সংঘর্ষ চলছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো জানা গেছে. এ দুই রাজ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাতে গোলাগুলির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ ঘটনায় বাংলাদেশে যাতে কোনো প্রকার শরণার্থী অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে, তার জন্য বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থানের পাশাপাশি গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের আপত্তি উপেক্ষা করে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে চলেছে বলেও জানা গেছে। এদিকে সীমান্তের শুন্যরেখায় অবস্থানরত ৪ হাজার ৬শ’ রোহিঙ্গা পরিবার (শরণার্থীরা) আতঙ্কে রয়েছেন। যে কোনো মুহূর্তে বাংলাদেশে শরণার্থীর ঢল নেমে আসার শঙ্কায় রয়েছে সীমান্ত এলাকার সাধারণ জনগণ। এসব বিষয়ে সীমান্ত নাগরিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তরপাড়া মসজিদের পাশে ভারী মর্টারশেল নিক্ষেপ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড। স্থানীয়দের খুব সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে করেছে বিজিবি। গতকাল মর্টারশেল নিক্ষিপ্ত এলাকায় এই প্রতিবেদক সরেজমিনে যাবার চেষ্টা করলে বিজিবি জোয়ানরা নিরাপত্তার অজুহাতে ঘটনাস্থলে যেতে বারণ করেন।

অপরদিকে মর্টারশেল বাংলাদেশ সীমান্তে নিক্ষিপ্ত হবার কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর ও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিষয়টিকে আক্রমণ হিসেবে দেখছে না, বরং দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। এ ধরনের ঘটনায় আগেও মিয়ানমারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এবারও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে। গত রোববার সন্ধ্যায় একথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরো জানায়, গত জুন-জুলাই থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব কায়াহ এবং কাইন ও উত্তর-পশ্চিম চীন রাজ্যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ তীব্র করছে দেশটির সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে রাখাইনেও আরাকান আর্মির সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ চলছে। সেখানে বাকি থাকা রোহিঙ্গাদেরও এ যুদ্ধের মাঝে টেনে আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা নয় এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর মানুষসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে দেশটির সেনাবাহিনী। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে প্রায় ২৭১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার পানিসীমা। দুই দেশের স্থল সীমান্তের প্রায় অনেক অংশই ইতোমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে প্রায় সব রোহিঙ্গা পাঠিয়ে দিয়ে সেই বেড়া মেরামতও করেছে দেশটি। সূত্রমতে, বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধ, বিভিন্ন প্রকার সীমান্ত অপরাধ দমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় শাহপরীর দ্বীপ থেকে ২৭১ কিলোমিটার রিং রোডসহ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় বাংলাদেশ। রোড তৈরির কাজ শেষ হলেও বেড়া এখনো নির্মাণ করা হয়নি।

বান্দরবান থেকে মো. সাদাত উল্লাহ জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া দুটি মর্টারসেলের মধ্যে একটি নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিট। রোবববার রাতে রামু সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন থেকে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের ১০ সদস্য দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে একটি সেল নিষ্ক্রিয় করে। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আরও একটি সেল নিষ্ক্রিয় করবে ডিসপোজাল ইউনিট।



 

Show all comments
  • Riyad Mizi Hridoy ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশ বাহিনী আছে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আর বিশ্বের সকল দেশের বাহিনী আছে অন্য দেশের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আর বাংলাদেশের বাহিনী আছে সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য থেকে দেশটাকে শেষ করে দিল
    Total Reply(0) Reply
  • RS Shoel ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    যে মায়ানমার কে বলতাম,,,ওদেরকে পরাজিত করে আমরা সকালে নাস্তা করবো আর আজ সেই মায়ানমার আমাদের মাতৃভূমিতে মর্টার শেল মারে,,,আর আমরা লেজ গুটিয়ে আছি। কোথায় পৌছেছি আজ আমরা,, বুজাই জায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Yeajul Haque ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশ কোনো দায়িত্ব নাই দায়িত্ব একটা বি এন পি কে মা-রা বাংলাদেশ সাধারন মানুষের উপর গুলি করা
    Total Reply(0) Reply
  • Monazim Hossen Nazim ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশ খালি প্রতিবাদে করবে আর কিছুই করতে পারবেনা
    Total Reply(0) Reply
  • kamrul hasan ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৩ এএম says : 0
    সাবাস বাংলাদেশ অবাক তাকিয়ে রয়! জ্ঝলে পুড়ে ছারখার তবু দালালি ছাড়তে নয় !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ