Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে রেল

রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে রেলওয়ের প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

সক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে রেল। লেভেলক্রসিংগুলোতে মানুষের মৃত্যু, দুর্বল আইটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল টিকেটিং অব্যবস্থাপনা, যাতায়াতের জটিল প্রক্রিয়া, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, যাত্রী হয়রানিসহ নানা কারণে রেল এখন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রেলের মতো এমন একটি বৃহত সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থায় সময়ের দাবিগুলো পূরণ না হওয়ায় দিন দিন কমছে রেলের প্রতি যাত্রীদের আস্থা। টিকেটিং সিস্টেমে জটিলতা এখন ঈদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকট আকার ধারণ করে। অরক্ষিত হাজার হাজার লেভেলক্রসিংগুলোতে মানুষের মৃত্যু ও দুর্ঘটনা ঘটলেও এর দায় নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। বরং এসব বিষয়ে সক্ষমতা নেই বলে জানায় রেল কর্তপক্ষ। উঠছে নানা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ। রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের অভিযোগের বিষয়টির প্রতিবাদ করছেন একই প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে নান অভিযোগ করেন নাদিম মাহমুদ মোসলেম নামের প্রকল্পটির অ্যাডমিন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পের কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। রয়েছে আর্থিক দুর্নীতিও। এপকন্স ও ক্যাপিটাল জেবি নামে দুটি ভারতীয় কোম্পানি এই প্রকল্পের কাজ করছে। পাঁচ বছরে প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশও হয়নি। টঙ্গী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যে বেডের কাজ হয়েছে, তা সঠিকভাবে হয়নি। যেভাবে বেড খনন করা, মাটি ও বালি দেয়া, সাবব্লাশ ও ব্লাশ দেয়ার কথা, সেভাবে কাজ পরিচালনা করা হয়নি। এছাড়া প্রকল্পের কাজে তেমন কোনো সেফটি নেই। রেলওয়ে থেকে বহুবার নোটিশ দেয়ার পরও কোম্পানি দুটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ আমার কাছে আছে।

দেশে ঈদ, পূজার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির সময় ট্রেনে যাত্রীর চাপ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন করে ট্রেন। এতে কোচের ক্ষতি হয়। আর্থিকভাবেও রেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া যাত্রীদেরও ভোগান্তি বেড়ে যায়। তাই বিমানের টিকিটের মতো চাহিদা বাড়লে ভাড়া বাড়বে, চাহিদা কম থাকলে ভাড়া কমবে- এই পদ্ধতিতে ট্রেনের টিকিটের দাম বাড়ানো যেতে পারে। এতে রেলের আয়ও বাড়বে। বিমানের টিকিট বিক্রিতে চালু থাকা এই নিয়ম দেশের ট্রেনে চালু করতে জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী)। তবে এ বিষয়ে নিজেদের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বা নির্দেশনা দেয়নি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।

রেলওয়ের সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর রেলওয়ে যেহেতু একটি সরকারি সংস্থা, এখানে লাভ বা আয়ের হিসাব করার প্রয়োজন রয়েছে। বরং রেলওয়ে বছরে কোন খাতে কত টাকা আয় করে, আর কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করে, এই হিসাব জনগণকে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলছে। তাই গত জুনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে নির্দেশনা দেয় সংসদীয় কমিটি। পরে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল। ওই কমিটির প্রতিবেদনে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো, ভূমি ব্যবস্থাপনা, সঠিক রেল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও জনবল কাঠামোর উন্নয়নের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, চাহিদা কম থাকলে দাম কমবে, এমন প্রস্তাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদ্ধতিতে কিছু টিকিট সংরক্ষিত থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে বেশি ভাড়া দিয়ে এই টিকিট কিনতে পারবেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী অঞ্চলের (পশ্চিম) মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানিয়েছেন, বিমানে যাতায়াতে চাহিদা বাড়লে টিকিটের দাম বেড়ে যায়। ভারতের রেল ব্যবস্থাপনায়ও এমন পদ্ধতি চালু আছে। এতে যার জরুরি টিকিট দরকার, সে বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভ্রমণ করবেন। টিকিট নিয়ে বিশৃঙ্খলা কমবে। একই রুটে ট্রেনের ভাড়া বাসের ভাড়ার চেয়ে কম তাই বাস ছেড়ে রেলে ভ্রমণ করতে চান। যা ট্রেনের সক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। তারা ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশন কাউন্টারে গিয়ে বকাবকি করেন। এ নিয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো ট্রেনে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। তাই ট্রেনে চাপ কমাতে ভাড়া কিছুটা বাড়াতে তারা প্রস্তাব করেছেন।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, রেলে যাত্রী পরিবহন বা চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে না। বরং যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে রেলওয়ের প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রেলওয়ের সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। দেশের প্রতিটি জেলায় রেল সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ চলমান আছে।

মন্ত্রী বলেন, দেশের রেল ব্যবস্থা ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ দ্বারা দুই অঞ্চলে বিভক্ত। পর্যায়ক্রমে সকল রেল ব্যবস্থাকে ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। গেজ ব্যবস্থাকে একরকম ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। এছাড়া রেললাইন সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে সবগুলোকেই ব্রডগেজ আকারে করছি। যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। এছাড়া ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনের প্রকল্প হাতে নিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ