নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এশিয়া কাপ আবারো ফিরেছে তার ঘরে। অবাক হলেন? ১৯৮৪ সালে যে সংযুক্ত আরব আমিরাতেই বসেছিল এই টুর্নামেন্টের প্রথম আসার। আফগানিস্তান ও শীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে গতকাল পর্দা উঠেছে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের ১৫তম আসরের। কিন্তু মূল আকর্ষণ তো আজ। রাত ৮টায় যে পাক-ভারত লড়াই!
দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরীতার প্রভাব ক্রিকেটেও পড়েছে। প্রায় ১০ বছর ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে অনুষ্ঠিত হয়নি কোন দ্বিপাক্ষীয় সিরিজ। এই কারণে ক্রিকেটের যে কোনো বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় লড়াইয়ে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে একই গ্রুপে রাখাটা আজকাল নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবারের এশিয়া কাপের ছয় দলকে কোন প্রক্রিয়ায় দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে সেটা বলা মুশকিল, তবে ভারত ও পাকিস্তানকে একই গ্রুপে রেখেই যে বাকি কার্যাবলি সংঘটিত হয়েছে সেটা বুঝবার জন্য পান্ডিত্ব অর্জনের প্রয়োজন নেই।
এই ম্যাচ কেন্দ্র করে গণমাধ্যম আর ক্রিকেটপ্রেমীরা যাতই শোরগোল করুক না কেন, দুই দলের ক্রিকেটারদের মাঝে বিরাজ করছে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দুবাইয়ে অনুশীলনের ফাঁকে, শাহীন শাহ আফ্রিদির চোটের খোঁজ নিতে যুজবেন্দ্রে চাহাল, বিরাট কোহলি ও ঋষভ পন্তের সৈহার্দ্যপূর্ণ আলাপচারিতা, অথবা দুই অধিনায়ক বাবর আজম আর রোহিত শর্মার খোশগল্পে মেতে ওঠা অন্তত তাই ইঙ্গিত করে। তবে মাঠের হিসেব ভিন্ন। দেশের জার্সিতে খেলতে নামা আর যুদ্ধের ময়দানে নামা যে এই দুই দলের কাছে প্রায় একই কথা!
এই দুই দলের সর্বশেষ দেখায় ১০ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাবরের দল। আর আসরটি ছিল টি-২০ বিশ্বকাপ। এবারের এশিয়া কাপের সংস্করণও যেহেতু কুড়ি ওভারের, তাই ম্যাচ শুরুর আগে কিছুটা এগিয়ে এশিয়ার ২ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে ভারতই বা ছেড়ে কথা বলবে কেন! তাদের অর্জনের ঝুলিও যে সমৃদ্ধ! এশিয়া কাপে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ১৪ বার, যেখানে ১টি ম্যাচের ফলাফল আসেনি। বাকিগুলোতে ৮ বার জিতেছে ভারত ও ৫ বার পাকিস্তান। এই আসরের আগে একবারই টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এশিয়া কাপ হয়েছিল (২০১৬ সালে বাংলাদেশে)। সেই ম্যাচে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৫ উইকেটে জিতেছিল ভারত। এমনকি সর্বশেষ আসরে (২০১৮) দুবারের দেখায়, প্রতিবারই জিতেছিল ভারত। যথাক্রমে ৮ ও ৯ উইকেটের বিশাল জয় গুলোও আত্মবিশ্বাস যোগাবে রোহিতদের। তবে খেলাটা যেহেতু ক্রিকেট, আর প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান, তখন যে কোন কিছুই সম্ভব। রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ম্যাচে তাই পাকিস্তানকে হালকাভাবে নিলে চরম মূল্য দিতে হতে পারে ভারতকে।
সেটা তো কাগুজে কথা, মাঠের রণকৌশলেই নির্ধারত হয় ম্যাচের ভাগ্য। এই কৌশলে অনেকটা রাখঢাক থাকলেও এবার কি তবে ইচ্ছে করেই নিজেদের একাদশ প্রকাশ করেছে ভারত! স্বভাবতই এই ম্যাচে সকলের চোখ থাকবে বাবর ও কোহলির উপর। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট গোটা বিশ্বের না হয় অন্তত পাকিস্তান দলের ভাবনাই ওলট-পালট করে দিয়েছে। ম্যাচের ঠিক ২০ ঘণ্টা আগে ভারতের অনুশীলনের ১০টি ছবি ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করে বিসিসিআই। যোখানে আপন আলোয় অনুশীলনে মগ্ন ১০ ক্রিকেটার- রোহিত, রাহুল, কোহলি, সূর্যকুমার, হার্দিক, পন্ত, কার্তিক, চাহাল, আবেশ ও অরশদ্বীপ। একাদশ পুরণে সেই ‘রইলো বাকি এক’ যে রবীন্দ্র জাদেজা হচ্ছেন সেটিও অনুমিত।
ভারত যখন একাদশ নিয়ে মধুর যন্ত্রণায় ঠিক সেখানে শেষ সময়ে চোটের ফেরে স্কোয়াড নিয়েই বিপাকে পাকিস্তান। সবশেষ গতপরশুই অনুশীলনের সময় সাইড স্ট্রেইন চোটে পড়ায় অন্তত তিন সপ্তাহ বাইরে থাকতে হবে ২১ বছর বয়সী তরুণ পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমকে। তার বদলে শেষ সময়ে দলে এন্ট্রি হয়েছে হাসান আলীর। তার আগে দলের সবচাইতে মোক্ষম অস্ত্র শাহীন শাহ আফ্রিদিও ছিটকে গেছেন চোটে। নতুন বলে স্যুইং দিয়ে তার এই শূণ্যতা পুরণের দায়িত্বই থাকবে অভিজ্ঞ হাসানের কাঁধে। তাছাড়া শেষদিকে উইকেট টু উইকেটে বৈচিত্র্য রেখে বল করাটা হারিস রউফ নিয়ে গিয়েছেন শিল্পের পর্যায়ে। অন্যদিকে বাবর ও রিজওয়ানের উপরে ব্যাটিং দায়িত্ব বিশাল। গত বছরের ২১ অক্টোবর এই দুইজনের ব্যাটে ভর করে ভারতের ১৫১ রান কোন উইকেট না হারিয়ে অতিক্রম করে পাকিস্তান। দুই দলের সেটাই ছিল কোন সংস্করণে শেষ দেখা। পাক বাহিনীর সাদাব খান ও মোহাম্মদ নাওয়াজ কঠিন পরীক্ষাই নেবেন ভারতীয় ব্যাটারদের।
চোট নিয়ে ভাবনায় যখন পাকিস্তান, ঠিক সেই সময় তারকাদের ফর্মহীনতা ভাবাচ্ছে ভারতকে। রোহিত বড় আসরে সব সময় রান পান ভারতের জার্সিতে। তবে ফর্ম হারানো এই ওপেনার টি-২০ সংস্করণে কদিন আগে কিউই মার্টিন গাপটিলের কাছে হারিয়েছেন রান সংগ্রাহকের শীর্ষ স্থান। ওদিকে কোহলি পাকিস্তানকে পেলেই জ্বলে উঠেছেন বেশিরভাগ সময়। ৭ ম্যাচে ৩টি অর্ধশতকে ৩১১ করেছেন প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টিতে বিরাটের সর্বোচ্চ গড় (৭৭.৭৫) বাবরদের বিপরীতেই। তবে গতকাল স্টার স্পোর্টসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান যা বললেন তাতে পুরাতন বিরাট উধাও। কথায় নেই সেই আগ্রসন বা আত্মবিশ্বাস। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিশ্রামে ছিলেন। সেই সময় মানসিক চাপের কারণে ক্রিকেট থেকেও দূর ছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক, ‘গত ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি এক মাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দশায় পৌঁছে গিয়েছিলাম।’
মাঠের লড়াইয়ের আগে পাক-ভারত দ্বৈরথ নিয়ে কথার লড়াই হবে না তা কি হয়! বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যাওয়া এই বাকযুদ্ধের শুরুটা করেছিলেন সাবেক অষ্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন রিকি পন্টিং। তার মতে, এই ম্যাচে ভারতই জিতবে। এমনকি এশিয়া কাপটিও নিজেদের করে নেবে রোহিতের দল। তবে সেটি যে একেবারে খালি হাতে হতে দেবে না পাকিস্তান, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। অজিদের সাবেক অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনও পাকিস্তানকে সমীহ করলেও তিনি আজকের ম্যাচে ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন। আজকের ম্যাচটি দেখতে মুখিয়ে আছেন ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটার বিরেন্দর শেবাগ, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বরাবরই বাড়তি রোমাঞ্চ ছড়ায়, সবার মতো আমিও এটি দেখার অপেক্ষায়। ক্রিকেট মাঠে শুধু অষ্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বৈরথের সাথে তুলনা করা যায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের।’
তবে ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি এ ম্যাচে এগিয়ে রাখছেন না কাউকেই। টি টোয়েন্টিতে যা খুশিই হতে পারে। একই সাথে তার দলের ক্রিকেতারদের হালকা করতেই তিনি জানালেন এই মহারণ নাকি আর ৮-১০টা লড়াইয়ের মতই, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ‘স্পেশাল’, কিন্তু সেটা দর্শকদের জন্য, ক্রিকেটারদের জন্য নয়। আমি যখন খেলতাম পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকে বিশেষভাবে দেখতাম না।’
দেখা যাক, মাঠের বাইরের এই সৌহার্দ্য জেতে না মাঠের লড়াকু ক্রিকেট!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।