মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সন্ত্রাসবাদের মামলায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আগাম জামিন পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যানের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে, গত রোববার রাতে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের হওয়ার পর সোমবার সকালের দিকে পিটিআইয়ের আইনজীবীরা আগাম জামিনের আবেদন করেন। ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শাহবাজ গিলকে গত সপ্তাহে রাষ্ট্রদ্রোহিতার এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এসময় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিলের সাথে খারাপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন ইমরান খান। শনিবার ইসলামাবাদের জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইমরান খান শাহবাজ গিলের সাথে করা আচরণের দায়ে দেশটির শীর্ষ এক পুলিশ কর্মকর্তা, একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।
গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে; যা চরম আকার ধারণ করে রোববার রাতে ইমরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে মামলা হওয়ার পর।
মামলার পর পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের গ্রেফতার নস্যাৎ করে দিতে রাজধানী ইসলামাবাদে তার বানিগালা বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন শত শত নেতাকর্মী। দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, পিটিআইয়ের আইনজীবী ফয়সাল চৌধুরী এবং বাবর আওয়ান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আগাম জামিনের আবেদন করেন। ওই আবেদনে তলব করার সঙ্গে সঙ্গে আদালতে উপস্থিত হতে ইমরান খান প্রস্তুত আছেন বলে জানানো হয়।
আবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো ধরনের অপরাধের রেকর্ড নেই। এছাড়া তিনি কোনো অপরাধে কখনই দোষী সাব্যস্ত হননি। ‘তার পালিয়ে যাওয়ার অথবা আদালতে উপস্থাপিত নথিপত্র ধ্বংস করার কোনো সুযোগ নেই। জামিনের জন্য আদালতের কাছে জামানত হিসেবে অর্থ জমা দিতেও ইমরান খান প্রস্তুত আছেন।’
পরে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মহসিন আখতার কায়ানি পিটিআই চেয়ারম্যানের আবেদনটি গ্রহণ করেন এবং তাতে কী আপত্তি তোলা হয়েছে তা জানতে চান। আওয়ান বিচারককে জানান, আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ফোরামের কাছে যাওয়ার বিষয়ে একটি আপত্তি তোলা হয়েছে। এ পর্যায়ে বিচারপতি কায়ানি বলেন, ইমরান খানের আবেদনে বায়োমেট্রিক্স সম্পর্কিত একটি আপত্তিও আনা হয়েছিল। শুনানি চলাকালে আওয়ান দাবি করেন, ইমরানের বাসভবন ঘেরাও করা হয়েছে এবং এমনকি তিনি সংশ্লিষ্ট আদালতে যেতেও পারবেন না।
এর আগে পাকিস্তানে বিচারক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা হলে যে কোনো সময় গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দলের শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। ফলে তৈরি হয় উত্তেজনা। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে হাজার হাজার সমর্থক অবস্থান নেন। ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হলে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন বলে ঘোষণা দেন তারা।
২০ আগস্ট রাতে ইসলামাবাদের মারগাল্লা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সাত নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ইমরান খানের নামে। একই দিনে রাজধানী ইসলামাবাদে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি দেশের পুলিশ ও অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেন। ধারণা করা হয়, ইমরানকে জব্দ করতেই বর্তমান সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এঘটনার পরপরই পিটিআই শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের নামার আহ্বান জানান নেতাকর্মী ও তার সমর্থকদের।
পিটিআই ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, ‘যদি ইমরান খান গ্রেফতার হন তবে তার দল প্রস্তুত রয়েছে আন্দোলনে নামতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জোট সরকার দলীয় প্রধানকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।’ ইমরানই তাদের ভরসা বলেও জানান তিনি। যড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন কুরেশি।
গত এপ্রিল মাসে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর কড়া সমালোচকে পরিণত হন ইমরান খান। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান শনিবার অভিযোগ করেন যে, তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে আটক করার কারণে শনিবার একটি জনসভায় ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান এবং একজন নারী বিচারকের নিন্দা করেন ইমরান খান। তিনি অভিযোগ করেন, তার দলের সহকর্মীদের ওপর অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। ওই দুজন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় ইমরান খান বলেন, ‘তোমরাও প্রস্তুত থেকো, আমরাও তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’
ইমরানের বক্তব্যের পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার কথা জানায় পুলিশ। পুলিশের তদন্তকারীরা বলছেন, রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে ইমরান খান সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন ভঙ্গ করেছেন। এর আগে, শনিবার পাকিস্তানের গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষণা দেয় যে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থাকার কারণে ইমরান খানের বক্তব্য সরাসরি প্রচার করতে পারবে না দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। তবে ইমরান দাবি করেছেন, সরকার তার ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করতে চাইছে। রোববার রাওয়ালপিন্ডিতে আরেকটি সমাবেশে ইমরান খান ওই ঘোষণার নিন্দা করেছেন। তিনি আরো দাবি করেন, সরকার ইউটিউব দেখায় বাধা তৈরি করছে, যাতে জনগণ তার বক্তব্য শুনতে না পারে।
উল্লেখ্য, গত মাসেই পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের উপ-নির্বাচনে পিএমএল-এনকে হারিয়ে বড় বিজয় পেয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআই। ওই নির্বাচনের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ভোটারদের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী আগাম নির্বাচন দেয়া হলে সেখানে ফলাফল কী হতে পারে, সে বিষয়েও একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা, ইমরানের জনপ্রিয়তা রুখতেই এ ব্যবস্থা নিয়েছে তার বিরোধী শিবির।
অপেক্ষায় আছি, গ্রেফতার করুক : ইমরান খান
এদিকে বর্তমান সরকারকে কাপুরুষ ও ফ্যাসিবাদি আখ্যায়িত ইমরান খান বলেছেন, আমি অপেক্ষায় রয়েছি, যার প্রয়োজন আমাকে গ্রেফতার করুক। ইমরান খানের সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের বৈঠকের সময় তিনি একথা বলেন। সংসদে ফেরার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে সংসদীয় দল। সূত্র জানায়, সংসদীয় দল কোনো অবস্থাতেই পার্লামেন্টে ফিরবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নতুন নির্বাচনের কোনো বিকল্পও মানা হবে না।
সূত্র জানায়, ইমরান খান সংসদীয় দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, আপনারা নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে মিশে যান।
ইমরান খান বলেন, রাতের বেলা মানুষ যেভাবে বের হয়ে আসে, তাতে তারা কোনো কিছু ফাঁকি দিতে পারে না, তারা শুধু জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে চায়, আমি প্রকৃত স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না, নির্বাচন ঘোষণা হলেই আলোচনা হবে।
ইমরানকে গ্রেফতারে বড় সঙ্কটের সৃষ্টি হবে : রশিদ আহমেদ
আওয়ামী মুসলিম লীগ (এএমএল) প্রধান এবং পাকিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেছেন, রাজনীতিবিদদের বাছাই এবং প্রত্যাখ্যান করার খেলা দেশকে একটি বড় সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে, কারণ, ‘দেশের মানুষ পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের পাশে দাঁড়িয়েছে’। রোববার রাওয়ালপিন্ডির লিয়াকতবাগ মাঠে পিটিআই পাওয়ার শো’তে ভাষণ দিতে গিয়ে রশিদ আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি স্পষ্টতই পিটিআই প্রধানের দাবির কথা উল্লেখ করেন যে, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এবং পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফের লন্ডন থেকে ফেরার পথ প্রশস্ত করার জন্য তহবিল মামলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন যে, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার প্রচেষ্টার পিছনে উদ্দেশ্য ছিল তাকে নওয়াজের আজীবন অযোগ্যতা বাতিল করার জন্য সরকারের সাথে একটি চুক্তি করতে বাধ্য করা যাতে উভয়ই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
বর্তমান শাসকদের কটাক্ষ করে রশিদ বলেন, ‘চোর-ডাকাতরা’ ক্ষমতায় এসে তাদের দুর্নীতির মামলা বন্ধ করতে ব্যস্ত। তিনি যোগ করেছেন যে, জাতীয় সুরক্ষা সংস্থাগুলো সর্বদা জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে যখন ‘জাতি ইমরান খানের সাথে আছে’। এএমএল প্রধান মন্তব্য করেন, ‘দেশের প্রকৃত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, এই চোর নয়।’
সবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে বড় চোর’ বলে অভিহিত করে রশিদ বলেছেন, ইমরানের নেতৃত্বাধীন সরকারের আগের মেয়াদে দেশের অর্থনীতি ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখেছে। ‘আমি সব প্রতিষ্ঠানকে বলছি, যদি পারো থামো... দেখো ইমরান খান আসছে।’ এর আগে তার অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইট বার্তায় রশিদ পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া অথরিটি (পেমরা) কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার নোটিশের কথা উল্লেখ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্র্যাকডাউনের সতর্ক করেন। ‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে, সোশ্যাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। ইউটিউবারদেরও ঘিরে ফেলা হবে,’ যোগ করেছেন তিনি। সূত্র : ট্রিবিউন, জিও নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।