গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব বলছে, রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপেতে থাকে ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টি সদস্যরা। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। এছাড়াও অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ করে যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে এসব চক্র।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা এবং তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য মিজানুর রহমান (২১), সোহেল (২০), মাসুদ রানা (২১), সাব্বির (২২), মো. আবু বকর সিদ্দিক (২২), শাকিল (২০), নাঈম মোল্লা (২০), মো. সালমান (২৬), মো. জালাল হোসেন (২১), মো. শাওন (২২), শহিদুল ইসলাম (৪০), রফিক (৩৩), আজিজুর (৩৬), মো. সৈকত মন্ডল (১৯), মো. আরিফ গাজী (২৬) মো. জনি (১৮), মো. রুবেল (২৮), মো. আফজল (১৮), দ্বীন ইসলাম (২৩), মো. তুহিন (১৮), মো. রবিউল আউয়াল হৃদয় (২২), মো.আরমান (২২), মো. সানোয়ার হোসেন (৩১), মো. রুবেল (৩৪), মো. সোহেল (৩৫), মো. শান্ত (২৫), মো. আজাদ (৩৫), মো. আকাশ (২২), মো. নাইম খান (১৬), মো. আপন মিয়া (২০), মো. নাজমুল হোসেন (২৮), মো. মাসুম মিয়া (২৮), মো. শান্ত (২০), মো. সোহেল মাতব্বর(২৩), মো. হৃদয় (১৯), মো. সোহরাব (১৯) এবং মো. ইয়াছিন ব্যাপারীকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১২ টি মোবাইলফোন, ৩ টি সুইচ গিয়ার, ৩ টি এন্টি কাটার, ১২ টি ব্লেড, ১ টি কাঁচি, ৬ টি চাকু, ৩ টি ক্ষুর, ৭ টি বিষাক্ত মলমের কৌটা, ২ টি বিষাক্ত স্প্রে এবং নগদ ৮ হাজার ১১০টাকা উদ্ধার করা হয়।
রোববার বিকেলে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এসব বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেয়ার পর উক্ত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, কখনও ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মূখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। এই সময়ে ভূক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সীমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তারা স্বজনদের খোঁজে দিশাহারা হয়ে বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এসব ছিনতাইকারী সদস্যদের ভূক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব ছিনতাইকারী সদস্যরা নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা।
র্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আরও বলেন, খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। এ সব ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসা যাত্রীরা যেন নিরাপদে দৈনন্দিন কাজগুলো স্বস্তির সম্পন্ন করে বাড়ী ফিরে যেতে পারেন এলক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।