Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীচ দিয়ে চলছে যানবাহন ফের দুর্ঘটনার শঙ্কা

উত্তরার সেই বিআরটির ক্রেন, গার্ডার এখনও উন্মুক্ত, মাথার ওপর ঝুলছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারকে চাপায় ৫ জনের মৃত্যুর হয়েছে গত ১৫ আগষ্ট। ভয়াবহ এ খবর দেশ ও বিদেশের গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে। মর্মান্তিক এ ঘটনা নিয়ে এখনো সমালোচনার শেষ হয়নি। মামলা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকায় কর্মরত চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এই ঘটনায় চীনা কোম্পানীর বিচার হলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। সবই ঠিক আছে। কিন্তু ঘটনার চার দিন পরও রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কের দুর্ঘটনাস্থলে এখনো বেরিকেড় বা ঘেড়াও করা হয়নি। সরেজমিন দেখা যায় এখনো উত্তরার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে খোলা অবস্থায় রয়েছে প্রকল্পে গার্ডার, ক্রেন। খেলা অবস্থায় মাথার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে ব্রীজের কাঠামো। যে কোনো সময় সেটা আবার ভেঙ্গে পড়তে পারে। অথচ নীচ দিয়ে বাস, সিএনপি, রিক্সাসহ সব ধরণের যানবাহন চলাচল করছে।

আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, ঢাকার উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারকে চাপা দেওয়ার সময় ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন হেলপার। অনেক পুরানো ক্রেনটির ফিটনেসও ছিল না। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সময়ে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিৎ তাও ছিল না সেখানে। ক্রেনের চালক ও হেলপারেরও ছিলোনা পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা। এ ঘটনায় ক্রেনের চালক, হেলপারসহ সংশ্লিষ্ট ১০ জন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর উঠে এসেছে এমন চিত্র। এদিকে এ ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশে এসেছে চীনা প্রতিনিধিদল। তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করবে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ক্রেনের মূল চালক আল আমিন। তার হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই- তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। চলতি বছরের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। অপরদিকে মাত্র ৩ মাস আগে এ প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে রাকিব। তাঁর ক্রেন চালনার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনাকালে ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন হেলপার।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, গ্রেপ্তার ইফতেখার ও আজহারুল ইসলাম অপারেটরদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও ক্রেনের ফিটনেস যাচাই না করেই গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সড়কে ভারী গার্ডার স্থাপনের কাজে নিয়োজিত করছিলেন। এ ছাড়া গার্ডার স্থাপনের সময় অতিরিক্ত একটি সহায়ক ক্রেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। হাতাহতের ঘটনায় ব্যবহৃত ক্রেনের ওজন সরানোর সর্বোচ্চ সক্ষমতা ছিল ৫০ টন। কিন্তু যে গার্ডারটি সরানো হচ্ছিল, সেটির ওজন ৬০ থেকে ৭০ টন। ক্রেনটির ফিটনেস সার্টিফিকেটও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। আনুমানিক ১৯৯৬-৯৭ সালে ক্রেনটি কেনা হয়েছিল। ত্রæটিপূর্ণ ক্রেনটি কাউন্টার লোড ছাড়াই গার্ডার স্থাপনের কাজ চালানো হচ্ছিল।
অতিরিক্ত লাভের জন্য অল্প পারিশ্রমিকে ভারী গাড়ি চালনার লাইসেন্স না থাকা অপারেটর আল আমিনকে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনের সর্বশেষ ফিটনেস যাচাই করা হয়েছিল ২০২১ সালে। কিন্তু এ বছর ক্রেনের কোনো ধরনের ফিটনেস যাচাই করা হয়নি। দুর্ঘটনার দিন ভারী গার্ডার স্থাপনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন ও পর্যাপ্ত ট্রাফিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হওয়া সত্তে¡ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএমপি ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েছে কাজ করেছে।

তদন্তে চীনা প্রতিনিধিদল, শাস্তিতে আপত্তি নেই
এদিকে গার্ডারচাপায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিআরটি প্রকল্পের সওজ অংশের নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে তদন্তের জন্য চীন থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। প্রতিনিধিদলটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সঙ্গে সৌজন্য
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে বিআরটি প্রকল্পের কাজের সময় ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে ৫ জন নিহত এবং দুজন আহত হন। নিহতরা হলেন রুবেল (৫০), ঝরনা (২৮), জান্নাত (৬), জাকারিয়া (২) ও হৃদয়। আহত হন রিয়া ও তার স্বামী হৃদয়। এ ঘটনায় ঝরনার এক স্বজন বাদি হয়ে মামলা করেন।
এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছে।

গ্রেফতাররা হলেন-ক্রেন চালক আল আমিন হোসেন ওরফে হৃদয় (২৫), হেলপার রাকিব হোসেন (২৩), দুর্ঘটনাস্থলে নিরপাত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান মো. রুবেল (২৮), মো. আফরোজ মিয়া (৫০), ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ (৩৯), হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেডের সত্বাধিকারী মো. ইফতেখার হোসেন (৩৯), হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু (৪৫), ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানীর মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তুষার (৪২), প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (২৯)। ####

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ