Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠিকাদারি কাজে এফবিআই’র সাজাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৪:৩৬ পিএম

তথ্য গোপন রেখে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার কোলন কর্পোরেশন চট্টগ্রামের ওয়াসা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছে। মূল্যবান তথ্যচুরির দায়ে ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কোলন কর্পোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘কোলন ইন্ডাস্ট্রিস’ কে ৩৬০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির আদালত। বিতর্কিত এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ায় হুমকিতে পড়তে পারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং দেশের ভাবমূর্তি।

জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার কোলন গ্লোবাল কর্পোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কোলন ইন্ডাস্ট্রিস যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যবান তথ্যচুরির এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর হাতে ধরা পড়লে, ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল লেজলি কার্ডওয়েলের আদালত কোলন গ্লোবাল কর্পোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কোলন ইন্ডাস্ট্রিজ কে ৩৬০ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা সহ কালো তালিকা ভুকত করে। এফ বি আই এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোলন ইন্ডাস্ট্রিজ আদালতে স্বীকার করেছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও তারা মূল্যবান তথ্য চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোলন কর্পোরেশনের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘কোলন গ্লোবাল কর্পোরেশন’ বাংলাদেশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি প্রকল্পে কাজ করছে। এমনকি আরো বেশ কিছু প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ নিতে এখন বেশ তৎপর। এই প্রতিষ্ঠানটি এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় চট্টগ্রামে ওয়াসা কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছে। কোলন গ্লোবাল কর্পোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নানা ধরনের বিতর্ক ও সমস্যার জন্ম দিয়েছে। দরপত্রে বিভিন্ন প্রকার তথ্য গোপনের যেমন সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে, একইভাবে সাবকনট্রাক্টরদের কে দিয়ে কাজ করিয়ে তাদের বিল পরিশোধ না করারও প্রচুর অভিযোগ রয়েছে কোলনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও শ্রমিক মারধর, ঠিকাদারের মালামাল চুরিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে অভিযুক্ত কোলনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে রাঙ্গুনিয়া থানায়। এছাড়াও হাইকোর্টেও তাদের নামে একাধিক রিট শুনানি চলমান।

এ বিষয়ে একাধিক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এই প্রতিবেদককে বলেন, যে কোন রকম দুর্নীতিগ্রস্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হলে দেশের উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়বে এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিনষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। যার দায় দেশের সাধারণ জনগণকেই ভোগ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের মূল্যবান তথ্য পাচারেরও আশঙ্কা থাকবে। এ বিষয়ে কোলন কর্পোরেশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি জেনারেল ম্যানেজার জি হু কিম এর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে ওনার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ ফয়জুল্লাহ বলেন, কোলন করপোরেশন কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রজেক্টে কাজ করেছে। রাঙ্গুনিয়ার এই ওয়াসার প্রজেক্ট এর মাধ্যমে বিগত প্রায় এক বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের তথ্য চুরি ও সাজাপ্রাপ্তির বিষয় কিছুই জানি না। কোলনের পক্ষ থেকেও এরকম কিছুই আমাদের জানানো হয়নি। দরপত্র দাখিলের সময় তারা তাহলে তথ্য গোপন করেছে। তাদের জরিমানা এবং তাদের দন্ডিত হবার বিষয়টি জানলে অবশ্যই তাদের দরপত্র অযোগ্য বলে বাতিল হত।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট খোরশেদ আলম বলেন, এরূপ প্রজেক্ট আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই করতে সক্ষম। এসব ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সম্পৃক্ত করার মানেই দেশ থেকে এই দুর্দিনে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাওয়া। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করে কোন কাজ নিয়ে থাকে তবে তাদের অর্থদণ্ডসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। একই সাথে বিদেশি কোম্পানিগুলো যেন দেশীয় ঠিকাদারদের পাওনা পরিশোধ না করে চলে যেতে না পারে সে বিষয়েও দরকার সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন প্রণয়ন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাজাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ