পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা আর্থিকভাবে প্রবল চাপে। সম্প্রতি সরকার দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর পর খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যাওয়ায় আক্ষরিক অর্থেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। গরু, খাসি ও মুরগির গোশত ও মাছের দাম বর্তমানে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আমিষের উৎসগুলোর সীমাহীন দাম বেড়েছে, যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। আমিষের মূল উৎসগুলোর দরজা যখন বন্ধ, তখন ডিমই ছিল স্বল্পমূল্যে আমিষের চাহিদা পূরণের একমাত্র অবলম্বন। তবে গরিবের আমিষ খ্যাত ডিমের উপরেও পড়েছে সিন্ডিকেটের নজর। চাল, ডাল, তেলের সিন্ডিকেট যেমন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়; তেমনি সিন্ডিকেট ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন অনেক পরিবার ডিম কিনে খাওয়ারও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
দশ দিন আগেও যে ফার্মের লাল ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ছিল, বর্তমানে সেই ডিমের ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। প্রতি ডজনে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। প্রতি ডজন ফার্মের সাদা ডিম ১৪৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিম ১৬৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ২১০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু-খাসি-মাছ পরিণত হয়েছে বাৎসরিক খাবারে। মুরগির গোশতও অনেকে মাসে কিংবা সপ্তাহে একবার খাচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাদ্যের সংস্থান করাই কঠিন হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তরা প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে মাছ, দুধ ও গোশতের মতো আমিষ জাতীয় খাদ্য বাজার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন। এবার ডিমের বাড়ায় আমিষের চাহিদা পূরণের এই উৎসেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অচিরেই দেশের জনগণের একটি বিরাট অংশ পুষ্টিহীনতার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে কম করে হলেও একজন মানুষের ৬০-৭০ গ্রাম পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য চামড়া ছাড়া মুরগির গোশত, মাছ, ডিম, মটরশুটি ও লো-ফ্যাট দুধ জাতীয় খাবার খাওয়া আদর্শ।
অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী আর সিন্ডিকেটদের হাতে প্রান্তিক খামারিরা জিম্মি হয়ে আছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেট চক্র সারাদেশে সক্রিয়। তারা ফোনে ফোনে মুরগির দাম ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। সেই দামে খামার থেকে মুরগি সংগ্রহ করে পাইকারদের সরবরাহ করছেন। এই সিন্ডিকেটের জাল না ভাঙলে বাজারে অস্থিরতা কমবে না, খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ডিমের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের হাতেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিমের দাম এলাকা ও সময় ভেদে পরিবর্তন হতে থাকে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েকটি চক্র ফোনে ফোনে বিভিন্ন এলাকায় ডিমের দাম ঠিক করে দেয়। সে দামেই কেনা-বেচা হয় ডিম। অনেক খামারিরা জানান, এমনও হয় যে সকালে এক দাম আবার বিকালে আরেক দামে ডিম কেনেন পাইকার ও আড়তদাররা।
ডিমের দাম কতটা অস্থিতিশীল তা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের প্রতিবেদন দেখলে টের পাওয়া যায়। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত ৭ আগস্ট প্রতি হালি ফার্মের ডিমের দাম ছিল ৪০-৪২ টাকা। অথচ গত রোববার সেই দর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। টিসিবির হিসেবে সাত দিনের ব্যবধানে প্রতি হালির দাম বেড়েছে ১০-১৩ টাকা।
রাজধানী মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মোস্তাক আহমেদের এ সপ্তাহের বাজারের লিস্ট থেকেও বাদ পড়েছে মুরগি ও ডিম। কথা হলে তিনি বলেন, মাছ-গোশতের যে দামÑ তাতে ভরসা ছিল ব্রয়লার। সেটার দামও বাড়তে বাড়তে এখন নাগালের বাইরে। দেড় থেকে দুই কেজির নিচে তো আর ব্রয়লার কেনা যায় না। তাতে যে দাম আসে তা আমার সাধ্যের বাইরে। ওদিকে এক পিস ডিমের পেছনে ১৩ টাকা খরচের সামর্থ্যও আমার নেই। তাই বাধ্য হয়ে এগুলো বাজারের লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছি।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইব্রাহিম। ডিমের আকাশছোঁয়া দাম দেখে তিনি বলেন, আমরা মেসে থাকি। প্রতি বেলায় তো আর মাছ-গোশত খাওয়ার অবস্থা নেই। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ডিম ছিল আমাদের একমাত্র প্রোটিনের উৎস। এই ডিমের দাম যদি আকাশছোঁয়া হয়, তাহলে আমরা আর কি খেয়ে থাকব? যদি ভার্সিটি খোলা না থাকত, তাহলে গ্রামে চলে যেতাম। এখন তো তারও সুযোগ নেই। শুধুমাত্র শাকসবজি খেয়েই এখন আমাদের জীবন কাটাতে হবে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপণ্যের খরচ পোষাতে না পেরে বাজার থেকে খালি ব্যাগ হাতে ফেরার মতো অবস্থা অনেকের। দাম নিয়ে দরকষাকষিতে বিবাদে জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। মূলত পণ্যের দাম নিয়ে অসন্তোষ থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে এমন পরিস্থিতি। ক্রেতাদের দাবি, একটু একটু করে প্রতিদিনই বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, উৎস থেকেই দৈনিক বাড়ানো হচ্ছে ডিম, চাল, তেল, সবজির দাম। কথা কাটাকাটি আর বাগবিতণ্ডার দৃশ্য এখন বাজারের নিয়মিত চিত্র। দাম জেনে পরিকল্পনা করে বাজারে এসেও প্রতিদিনই হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা।
গেল মাস থেকেই ডিমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এই গতিকে আরও এক ধাপ উসকে দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ডিমের দাম ডজন প্রতি বেড়েছে অন্তত ৩০-৩৫ টাকা। দাম বাড়ার বিষয়ে বরাবরের মতো একে অপরকে দোষারোপ করছেন আড়ৎদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
পাইকাররা বলছেন, খামারে দাম বেড়েছে। আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। তাই দাম একটু বেশি বাড়তি এখন। অপরদিকে খামারিরা বলছেন, উৎপাদনে খরচ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে খামার পর্যায়ে মুরগি ও ডিম দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত হারে বেড়েছে। মূলত যাদের হাত হয়ে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে তারাই নানা অযুহাতে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে।
একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাসের ব্যবধানে পোল্ট্রি ফিডের দাম ৩২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দাম বাড়তি রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খামারি পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৩০ টাকা কেজি। স্থানীয় পাইকাররা এ দামে মুরগি কিনে তা রাজধানীর পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে তারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করেন। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে দাম ৩০ টাকার বেশি বাড়ার কথা নয়। সেখানে দাম বাড়ছে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ তিন হাত বদলে অন্তত ২৫ টাকা অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে পণ্য বিতরণ, বিপণনে খরচ বাড়বে, পণ্যমূল্যও বাড়বে। তবে যতটা বাড়ার কথা তার থেকেও বেশি বাড়ানো হচ্ছে। মূলত হাত বদলের সংখ্যা যত বাড়বে দাম ততই বাড়বে। দাম সমানুপাতিকভাবে না বেড়ে অতিরিক্ত বাড়ছে। এই হাত বদলের সংখ্যা কমাতে হবে। নইলে খামারিরাও ঠকবেন, আবার বেশি দামে পণ্য কিনে ভোক্তারাও প্রতারিত হবেন।
এমনিতেই গত দুই বছর করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই করে কেটেছে মানুষের। সেই ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন এমনিতে চরম সঙ্কটে। চিকিৎসা, বাসস্থান, বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোতে ব্যয় কমিয়ে ফেলেছে দেশের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও টিকা নিয়ে করোনাভাইরাস ঠেকানো অনেকাংশে সম্ভব। কিন্তু নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে রীতিমতো অসহায় দেশবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।