Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কন্তের রাজ্যে মরিনহোদের হানা

নাভিদ হাসান : | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

নব্বইয়ের দশকে ইউরোপের ফুটবল শাষণ করেছিল ইতালিয়ান ক্লাবগুলো। গোটা ইউরোপের গুটি কয়েক ক্লাব ছাড়া অর্থে ও জৌলুসে সিরি ‘আ’র সমকক্ষ ছিল না আর কেউই। ইতালিয়ান লিগে ইন্টার টানা ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, ২০১০/১১ মৌসুমে মিলান তাদের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করে। আর তারপর টানা ৯ বছর চলে জুভেন্টসের রাজত্ব। তুরিনের ক্লাবটি ম্যাচ পাতানোর কেলেঙ্কারির শাস্তি কাটিয়ে, অ্যান্তেনিও কন্তের হাত ধরেই পুনরায় জেগে উঠে ১১/১২ মৌসুম থেকে। মজার তথ্য হচ্ছে সেই কন্তের হাত ধরেই ইন্টার ১০ বছর পর জেতে সিরি ‘আ’র মুকুট। ৫৩ বছর বয়সী এই কোচের বিদায়ে, সেই শ্রেষ্ঠত্ব গত মৌসুমেই তারা হারিয়ে ফেলে ঘরের প্রতিদ্বন্দ্বী মিলানের কাছে। এদিকে হোসে মোরিনহর কল্যাণে রাজধানীর ক্লাব এস রোমা আবারও ফিরে পেতে যাচ্ছে বনেদি ক্লাবের তকমা। সব মিলিয়ে এবারের ইতালিয়ান লিগ বেশ জমজমাট।
স্তেফানো পিওলি যখন ২০১৯ সালের অক্টোবরে মিলানের দায়িত্ব নেন তখনও কেউ আশা করেনি, এতো অল্প সময়ের মাঝে তিনি মিলানকে ইতালির সেরা বানাবেন। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা এবং মিলানের ট্রেডমার্ক ‘এটাকিং’ ফুটবলে তিনি সেটা সম্ভব করেছেন। এই ক্ষেত্রে তার কৌশলের সাথে মানানসই প্লেয়ার দলে ভেড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই পরিকল্পনাতে ক্লাবটির ট্যাকনিক্যাল ডিরেক্টর ও সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার পাওলো মালদিনির অবদান ছিল চোখে পড়ার মত। থিও হার্নান্দেজ, লিয়াও, তোমরি, সান্দ্রো তোনালিদের মত প্রতিভাবান প্লেয়ারদের দলে টেনেছেন নাম মাত্র অর্থ ব্যয় করে। ক্লাবকে বেকায়দায় রেখে ইতালির ইউরো জয়ী গোলকিপার দোনারোম্মা মিলান ছাড়েন। মালদিনি সেখানে ফ্রেঞ্চ কিপার মাইগানাকে এনে তাক লাগিয়ে দেন। তবে অর্থ ব্যায়ে আরও উদার হতে না পারলে কতদিন মিলানের দাপট থাকবে তা বলা মুশকিল। কারণ এই মৌসুমে ফ্রি এজেন্টে দল ছাড়েন কেসি ও রোমাগনলি। তাছাড়া দর দামের গড়িমসিতে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় থাকা রেনাতোকে হারাতে হয়েছে পিএসজির কাছে। এদিকে এই মৌসুমে আক্রমণকে আরও মজবুত করতে তারা দলে টেনেছেন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার চার্লস ক্যেটেলারে ও ডিভোক অর্গিকে। রক্ষনের জন্য রোমা থেকে নিয়ে এসেছে ফ্লোরেঞ্জিনোকে।
ইন্টারকে বলা হয় মিলানের ঘরের প্রতিপক্ষ, কারণ দুই দলেরই জন্মস্থল ‘সান সিরো’। এখনো তাদের হোম ভেন্যু এই মাঠ। কন্তের স্থলাভিষিক্ত ম্যানেজার সিমিওন ইনজাগি দারুণ করেছেন প্রথম মৌসুমেই। মাত্র দুই পয়েন্টের জন্য সিরি ‘আ’ হারাতে হলেও, ঠিকই জিতিয়েছেন সুপার কাপ ও ইতালিয়ান কাপের ট্রফি। মিলানকে টক্কর দেওয়ার জন্য ক্লাবটি ধারে টেনেছে এক মৌসুম পুর্বে রেকর্ড মূল্যে বিক্রি করা লুকাকুকে। সঙ্গে ফ্রি ট্রান্সফারে সাইং করিয়েছে মিখিতারায়ানকে ও আয়াক্স গোলকিপার ওনানাকে। পেরেসিচ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ফুটবলার ইন্টার ছাড়েননি এই মৌসুমে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মিলান ও জুভেন্টাস অপেক্ষা প্রতিটি বিভাগই অনেক ব্যালেন্সড তাদের। সিমিওনের কৌশল যদি গত মৌসুমের ন্যায় কাজ করে তবে মিলানের জন্য শিরোপা ধরে রাখা বেশ কঠিনই হবে। তাতে সমান ১৯ টি করে সিরি ‘আ’ জেতা দুই ক্লাবের মাঝে ইন্টার আবারো লিড নিবে।
জুভেন্টাস গত ৫ বছর ধরে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে পরিকল্পনাতে। তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার সঠিক ব্যবহার তারা করে নি। অ্যালেগ্রিকে বরখাস্ত করে দুই বছর পরে আবার তারই দ্বারস্ত হয়েছে গত মৌসুমে। ক্লাব মালিক, স্পোর্টিং ও ট্যাকনিক্যাল ডিরেক্টর ও ম্যানেজারের ছিল ভিন্ন ভিন্ন দর্শন। রোনালদোর মতন জীবন্ত কিংব্দন্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছে তুরিনের বুড়িরা। দলের শক্তিমত্তা অনুযায়ী ম্যানেজার টানতেও ব্যর্থ তারা। ফলাফল ক্লাব ছাড়ে স্পোর্টিং ডিরেক্টর থেকে শুরু করে তারকা প্লেয়াররা। এবার জুভেন্টাস ত্যাগ করেছেন দিবালা, কিয়েলিন্নি, ডি-লিট, ডেমিরাল, বের্নারদোস্কি, রামসি, দিয়াগো কস্তা সহ আরও অনেকেই। শূন্য ডিফেন্সের অভাব পুরণে ব্রেমারকে দলে টানলেও তা যথেষ্ট না। মধ্যমাঠের জন্য ফ্রি এজেন্টে সাইন করিয়েছে পগবাকে। এদিকে ডি মারিয়াকেও টেনেছে বিনা মূল্যে। সাথে কস্টিক এসেছে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে। এখনও যথেষ্ট কার্যকরী প্লেয়ার থাকার পরও জুভেন্টাস পিছিয়ে আছে দলগত রসায়নে। অ্যালেগ্রি কি পারবেন এবার সেই সমস্যার সমাধান করতে?
লুসিয়ানো স্পালেত্তির নাপোলি গতবার জুভেন্টাসকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের ৩ নম্বরে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল। এবার তারা রক্ষনের দীর্ঘদিনের কান্দারি কুলিবালিকে চেলসির কাছে বিক্রি করে দিলেও সেই অভাব পূরণে নিয়ে এসেছে কোরিয়ান মিন কিমকে ও নরোয়েজিয়ান ওস্টিগার্ডকে। লেফটব্যাক পজিশনে ম্যাথিজ অলিভেরা নিশ্চিতভাবে মারিও রুইয়কে চ্যালেঞ্জ জানাবে। তাছাড়া নতুন সাইনিং আন্দ্রে আনগুইসার আগমণ মধ্যমাঠের শক্তি আরও বাড়াচ্ছে। মিলিকের প্রস্থানেও খুব একটা চিন্তিত নন স্পালেত্তি। কারণ ওসিহেম ও লাজানো যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে তাহলে মৌসুমে ৫০ গোল এই দুজনের কাছেই তিনি পেতে পারেন।
নতুন দিনের হাওয়া বইছে এখন রোমাতে। জোসে মোরিনহো ইন্টারকে যেমন ভাবে বলে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমন কিছুই প্রত্যাশা করছে এখন মেরুণ সমর্থকরা। পর্তুগীজ কোচ জর্ডান, ওদের ও লোপেজকে বিক্রি করে দিয়েছেন মার্শেইয়ের কাছে। মিখিতিরায়ান দল ছেড়েছেন ফ্রি এজেন্টে। আর সেই স্থান গুলো পূরণ করতে স্পেশাল ওয়ান দলে টেনেছেন দিবালা, চেলিক, মেটিচ, উইনালদামকে। গুঞ্জন আছে স্পার্সের এন্দোম্বেলেকে আনতে পারেন তিনি। মোরিনহো সব সময় তার দর্শনের প্লেয়ারকেই প্রাধান্য দেন। তার অধীনে এক মৌসুম কাটানোর পর ধীরে ধীরে রোমা ফিরে পাচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাস যেমনটা টট্টির সময়ে দেখা যেত। উয়েফা কনফারেন্স লিগ জয় দিয়ে রোমার শিরোপা ক্ষরাতেও ইতি টেনেছেন স্পেশাল ওয়ান। এমনকি এবারের লিগের ডার্ক হর্স নিঃসন্দেহে মেরুনরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কন্তের রাজ্যে মরিনহোদের হানা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ