Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিরূপ আবহাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান খাদ্য ফসল আমনের আবাদ ঝুকির মুখে

বৃষ্টির আকালের পরে প্লাবনে দিশেহারা কৃষক

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ২:২০ পিএম

দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে আষাঢ়Ñশ্রাবনের ভরা বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতহীন শরতের আবহাওয়ায় আমন বীজতলা ও রোপন নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যেই লঘু চাপের প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে বিপুল ফসলী জমি প্লাবনের ফলে লক্ষ লক্ষ কৃষক অনেকটাই দিশেহারা। আষাঢ়Ñশ্রাবনের ভরা বর্ষায় শরতের বিরূপ আবহাওয়ায় এতিদিন বিপর্যস্ত ছিল জনস্বাস্থ্য সহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৭ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। দেশে ৫৬ লাখ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি টনের মত আমন চাল পাবার আশা করছে মন্ত্রনালয়।

কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরী সহ রোপন যথেষ্ঠ ব্যাহত হয়। পাশাপাশি গত মাসের মত শ্রাবনের শেষের পূর্ণিমার ভরা কাটালেও লঘু চাপরে প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের পানি ছুটে এসে উপক’লভাগ সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল ফসলী জমি সয়লাব করে দিয়েছে। গত প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে দক্ষিনাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানিই বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হলেও বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেত নামিয়ে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গত কয়েকটি মাসের মত ভরা বর্ষার আষাঢ় শ্রাবনেও বৃষ্টিপাতের পরিমান কম থাকার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ২৯ জুলাই বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে জনস্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাবের আশংকা ক্রমশ স্পষ্ট। ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাতের সংকট রোপা আমনের আবাদকে বাধাগ্রস্থ করার মধ্যেই গত কয়েকদিনের প্লাবন পরিস্থিতিকে আরো ঝুকিপূর্ণ করে তুলেছে।
আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে গত জুনে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের ৪৪.৪% নিচে থাকার পরে জুলাই মাসে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসে বরিশালে ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ২৬৮.৫ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৬৫% কম। ফলে শ্রাবনের শেষভাগে এসেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের জেলাগুলোতে আমন রোপনের অগ্রগতি ১৫ ভাগেও পৌছতে পারেনি ।
বৃষ্টির অভাবের সাথে দুঃসহ গরমে গত মার্চ থেকে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে শুরু হওয়া ডায়রিয়া দাপিয়ে বেরিয়েছে জুলাইয়ের শেষ ভাগ পর্যন্ত। চলতি মাসের শুরু থেকে তা কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এখনো প্রতিদিন শুধু সরকারী হাসপতালগুলোতেই প্রায় দেড়শ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে। দুঃসহ গরমে ইতোমধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছুয়েছে। গত বছর মার্চ থেকে আগষ্ট পর্যন্ত সরকারী হাসপাতালে প্রায় ৭৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নেয়। মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের।
এদিকে গত এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬% কম বৃষ্টি হয়েছে। মে মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমান চিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬% কম। অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত কয়েকদিনের অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি আগষ্টে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম ৪৩০ থেকে ৪৭৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে শ্রাবনের পূর্ণিমায় ভর করে লঘুচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিন মোটামুটি ভাল বৃষ্টিপাতের ফলে এ মাসের প্রথম ১২ দিনে বরিশালে প্রায় ১৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আষাঢ়Ñশ্রাবনের ভরা বর্ষা মৌসুম যুড়ে বৃষ্টির সংকট আমনের বীজতলা থেকে জমি তৈরী সহ রোপনকে যথেষ্ঠ বাধাগ্রস্থ করে। বৃষ্টির অভাবে দক্ষিনাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় পাট জাগ দেয়া নিয়েও সংকট তৈরী হলেও গত কয়েক দিনের বর্ষণে তা দুরিভুত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
তবে ডিএই’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, বৃষ্টির স্বল্পতা কৃষকদের দুঃশিন্তায় রাখলেও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সংকট অনেকটাই দুরিভ’ত হবে। তবে জোয়ারের প্লাবন আবার ঝুকি বৃদ্ধি করেছে। তিনি খুব দ্রুত বীজতলা ও রোপনের জমি প্লাবন মূক্ত হবার আশাবাদ ব্যক্ত করে সতর্কতার সাথে বীজ উত্তোলন ও রোপনের পরামর্শ দিয়েছেন। পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রেখেই এবার আমন ঘরে তুলতে হবে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি সামনে ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় আরো বৃষ্টির আশাবাদ ব্যাক্ত করে গত কয়েকটি বছরের মত এবারো সাগরের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের ফসলী জমি প্লাবিত হয় কিনা, তার ওপরও নজরদারীর পরামর্শ দিয়েছেন। ডিএই’র মাঠ পর্যায়ের সব ব্লক সুপারভাইজারদের কৃষকদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রেখে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের নির্দেশ প্রদানের কথাও জানান অতিরিক্ত পরিচালক।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, বঙ্গোপসাগরে আবার একটি লঘুচাপ তৈরীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অনত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষনের আশংকার কথাও বলেছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে শণিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশাল ও ভোলাতে কোন বৃষ্টি হয়নি। এসময়ে সাগরপাড়ের কলাপাড়াতে ১১ মিলিমিটার এবং পটুয়াখালীতে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও শণিবার দুপুরে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপক’লভাগ সহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে ছিল। কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে পরবর্তী তিন দিন দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।
এদিকে বর্ষা মাথায় করে গত ৩১ মে স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের উপক’ভাগে পৌছে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে বিস্তৃতি লাভ করলেও গত দু মাসের বিভিন্ন সময়ে তা খুব সক্রিয় ছিলনা। ফলে দক্ষিনাঞ্চল সহ সারা দেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতে তাপমাত্রার পারদ ছিল স্বাভাবিকের অনেক ওপরে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ