নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এবারের জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান প্রতিপক্ষ কে? চোখ বন্ধ করে যে কেউ বলে দেবে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সিকান্দার রাজার নাম। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যাট হাতে ছিলেন খুবই আক্রমণাত্মক। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশের সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এক দুর্দমনীয় ব্যাটার হিসেবে। টানা দুই ম্যাচে দুটি ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরি ইনিংসে দলকে দিয়েছেন ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের উৎসব। আসলেই কী সিকান্দার রাজা দুর্দমনীয়? তাকে থামানো কী এ মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন কাজ? বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে এই সিরিজে তাকে দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে।
পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম নেয়া এ জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার নিশ্চয়ই বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, বাবর আজম কিংবা ডেভিড ওয়ার্নার নন যে তাকে আটকে রাখা, তার ব্যাটের গতি নিয়ন্ত্রন করা দুঃসাধ্য! বিস্ময়কর হলেও সত্য, এবারের জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশ দলের বোলারদের কাছে সিকান্দার রাজা যেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছেন। তাকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। আউট করা তো বহুদুরে, তার ব্যাটের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং তার ফ্রি-স্ট্রোক প্লে বন্ধ করার কাজ করতে গিয়েও হিমসিম খাচ্ছেন মোস্তাফিজ, তাসকিন, শরিফুল, শেখ মাহদি এবং মেহেদি হাসান মিরাজরা।
টানা দুটো ওয়ানডেতে ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরির আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচে সিকান্দার রাজাই ছিলেন বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ। জিম্বাবুয়ের সিরিজ বিজয়ের রূপকার ও নায়ক এই অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচে সিকান্দার রাজার ব্যাট থেকে এসেছে দুটি অর্ধশতক। এর মধ্যে প্রথম যে ম্যাচে বাংলাদেশ ১৭ রানে হেরেছে, তাতে তার ২৬ বলে করা ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংসটিতেই দুমড়ে মুচড়ে গেছে টাইগারদের বোলিং। পরের ম্যাচে অফস্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ক্যারিয়ার সেরা (৩০ রানে ৫ উইকেট) বোলিংয়ের সুবাদে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জিতলেও সিকান্দার রাজা ঠিকই একদিক আগলে রেখে অনেক্ষণ লড়াই করেন এবং শেষ পর্যন্ত ৫৩ বলে উপহার দেন ৬২ রানের দারুন ইনিংস।
একই ধারা অব্যাহত আছে ওয়ানডে সিরিজেও। গতকালের আগে প্রথম ওয়ানডেতেও সিকান্দার রাজার ঝড়ো ব্যাটিংয়েই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং। তার ১২৩.৮৫ স্ট্রাইকরেটে করা ১৩৫ রানের হার না মানা ইনিংসের কাছেই আসলে হেরেছে তামিমের দল। ফিল্ডাররা মুরি-মুড়কির মত ক্যাচ ফেলার মহড়া দিয়েছেন; কিন্তু তারপরও সিকান্দার রাজা ছিলেন আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান এক সাহসী যোদ্ধা। তার দৃঢ়তায় ১০ বল আগেই বাংলাদেশের রান পাহাড় (৩০৩) টপকে যায় জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে সিকান্দার রাজার চোয়াল শক্ত করা দৃঢ়তা আর খোলা তরবারির মত উইলোর ঝলক দেখানোর কারণ কী? আসলেই কী এতটা বিধ্বংসী ব্যাটার তিনি? পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১১৫ ওয়ানডেতে সিকান্দার রাজার রান ৩৩৬৬। গড় (৩৬.১৯) এবং স্ট্রাইকরেট (৮৪.৩৮) কোনোটাই আহামরি নয়। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি ৪টি। হাফ সেঞ্চুরি ২০টি। অন্যদিকে ৫৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান ১০৪০। উইকেট ২৮টি। সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ স্কোর ৮৭। গড় ২০.০০। স্ট্রাইকরেট ১২৫.৪৫। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের বিপক্ষেও তার পরিসংখ্যান আহামরি নয়। ওয়ানডেতে ২০ ম্যাচে করেছেন ৭০২ রান। সেঞ্চুরি ১টি। হাফ সেঞ্চুরি ৪টি। সর্বোচ্চ ১৩৫*। গড় ৩৬.৯৪। স্ট্রাইকরেট ৮০.৫৯। সেঞ্চুরিটি এসেছে গত শুক্রবার, সর্বশেষ ম্যাচে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচে সংগ্রহ ২২২ রান। গড় ১৫.৮৫। স্ট্রাইকরেট ১১৭.৪৬। সর্বোচ্চ ৬৫। হাফ সেঞ্চুরি ২টি। এই দুই হাফ সেঞ্চুরিই এসেছে- এবারের সিরিজে। অর্থ্যাৎ এবার তাকে দেখে যতই বিশ্বমানের ব্যাটার মনে হোক না কেন, আসলে তিনি তা নন।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও সিকান্দার রাজা এক পরিচিত মুখ। ঢাকাই ক্লাব ক্রিকেটের বড় দলের তকমাধারী মোহামেডান, আবাহনী, প্রাইম ব্যাংক আর শেখ জামালে ঠাই হয়নি তার। মাঝারী শক্তি শাইনপুকুরের হয়ে গত প্রিমিয়ার লিগ খেলে গেছেন। ১০ ম্যাচে রান করেছেন ৪২৫। একটি সেঞ্চুরি আর দুটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। সঙ্গে ১২টি উইকেটও পেয়েছেন। যা মোটেই আহামরি নয়। অথচ সেই সিকান্দার রাজা জিম্বাবুয়ের জার্সি গায়ে রীতিমত দুর্বার। আর ঢাকা লিগে রানের নহর বইয়ে দেয়া বাংলাদেশের ব্যাটাররা লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়িয়ে যেন রান করাই ভুলে গেলেন।
আসল পার্থক্যই হলো এখানে। সিকান্দার রাজারা জাতীয় দলের পক্ষে সামর্থ্যরে সেরাটা উজাড় করে দেন। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সবটুকু নিংড়ে দেন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে। জাতীয় দলে জায়গা পাওযার পর বেশির ভাগই কেমন যেন চুপসে যান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।