Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

যেখানে আলাদা বাংলাদেশের জলি

১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের কারো বয়স ১৮, কেউবা ৮০!

জাহেদ খোকন, বার্মিংহাম (ইংল্যান্ড) থেকে | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ৩:০২ পিএম, ২ আগস্ট, ২০২২

বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের মেইন মিডিয়া হাব সহ বিভিন্ন ভেন্যু ও মিডিয়া হ্যাবে সাংবাদিক, অ্যাথলেট ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছায় সেবা দিচ্ছেন ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। যাদের মধ্যে আছেন স্বাগতিক ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। এদের বয়স ১৮ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। গেমসের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী এমন ৩০ হাজার জনকে সাক্ষাৎকারে ডাকছিল আয়োজকরা। সেখান থেকে ১৪ হাজার জনকে চূড়ান্ত করে তারা।

বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বাংলাদেশের সুলতানা পারভীন জলি অন্যতম। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায়। ২৪তম বিসিএস ক্যাডার এই বাংলাদেশি পিএইচডি করতে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বার্মিংহামে আসেন। তিনি বাংলাদেশ প্রাইম মিনিস্টার ফেলোশিপ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামে এনভায়রনমেন্ট অব হেলথের ওপরে পিএসডি করছেন। চার বছরের কোর্সের মাত্র এক বছর পাঁচ মাস শেষ হয়েছে তার। এখানে জলির সঙ্গে আছে তার স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। তার স্বামী মাহবুবুর রহমান সবুজও বার্মিংহামে আছেন। তিনি এখানকার ডিএইচএলের ইউকে হেড অফিসে অ্যাডমিনে কাজ করেন।
গেমস উপলক্ষে মেইন মিডিয়া সেন্টারে প্রায় ২’শ সাংবাদিক কাজ করছেন। যাদের সেবা দিচ্ছেন ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক। জলি কাজ করছেন অ্যারেনা বার্মিংহামের মেইন মিডিয়া হাবে। তিনি জানান, কমনওয়েলথ গেমসে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রেনিং হয়েছে। তিনি গতকাল বলেন, ‘এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে কী পাবো, সেটা বড় কথা নয়। একজন বাংলাদেশি হিসেবে কমনওয়েলথ গেমসের মতো বড় আসরে ইংল্যান্ডে কাজ করছি সেটা বড় প্রাপ্তি। ইংল্যান্ডে স্বেচ্ছাসেবকদের খুবই মূল্যায়ন করা হয়। গেমস চলাকালে আমাদের পোশাক থেকে শুরু করে খাওয়া, যাতায়াত খরচ সব বহন করছে বার্মিংহাম কর্তৃপক্ষ। আমরা দায়িত্ব পালন করবো মোট ১২ দিন। এই সময়ে আমাদের পেছনে যা খরচ হবে তার সবই দেবে কমনওয়েলথ গেমস কমিটি।’
স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে এসে বাংলদেশি হিসেবে বিশেষ কোন সুবিধা পাচ্ছেন কিনা? এ সম্পর্কে জলি বলেন, ‘বাংলাদেশি হিসেবে বার্মিংহাম গেমসের কর্তৃপক্ষ আমাকে আলাদা কোনো ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে, তা কিন্তু না। আমার কাছে এটা খুব সম্মান ও গর্বের। একমাত্র আমিই একজন নন ব্রিটিশ বাঙালি হিসেবে মেইন মিডিয়া হাবে আছি।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের এখানে তো ব্রিটিশ বাঙালির অভাব নেই। কিন্তু গেমস কর্তৃপক্ষ মেইন মিডিয়া হাবের জন্য আমর মতো একজন নন ব্রিটিশকে বেছে নিয়েছে। এটা আমার কাছে গর্বের একটা বিষয়। শিফটিং ডিউটি যেহেতু করছি, প্রতিদিন এখানে ব্রিটিশ, ইন্ডিয়ান, নাইজেরিয়ান, বিভিন্ন কালচারের লোকদের সঙ্গে আমি মিশছি। সবাই খুবই ফ্রেন্ডলি।’
এখানকার মানুষ বাংলাদেশ সর্ম্পকে জানতে চায় জানিয়ে জলি বলেন, ‘এখানকার যেখানেই যাই যখন এখানকার মানুষ জানতে পারে আমি বাংলাদেশি তখন ওরা আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চায়। বাংলাদেশের প্রাধানমন্ত্রী, ক্রিকেট, পদ্মা সেতু, কৃষ্টি, সংস্কৃতিসহ সব কিছু সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে ব্রিটিশদের। যদি এখানকার কোনো পোশাকের দোকানে যাবেন, দেখবেন পোশাকের গায়ে লেখা আছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। এটা দেখলে ভাল তো লাগে আবার খারাপও লাগে। এক সেন্সে খারাপ লাগে যে ‘মেড ইন বাংলাদেশের’ পোশাক এখান থেকে এতো দাম দিয়ে কিনছি। আর ভাল লাগে যে আমার দেশের পন্য ইংলান্ডে আসছে।’
‘সবজান্তা শমসের’ না হলেও স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে। সেটা আপনার উপকারে আসুক, বা নাই আসুক। তবে আপনার জিজ্ঞাসা মেটাতে তাদের আগ্রহ, চেষ্টার কমতি থাকে না। ক্ষণিকের আলাপে বাংলাদেশের জলির মতো বার্মিংহামের নাগরিক ক্রিশ্চিয়ান স্যান্ডার্স ও তোরা ডলে জানান, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মিডিয়া হাব ও বিভিন্ন ভেন্যুতে থাকতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। ৭২ বছর বয়সি স্যান্ডার্স একটি হাসপাতালে কাজ করেন। আর ৫৭ বছরের ডলে কাজ করেন একটি শপিং মলে। দু’জনই জানিয়েছেন, খুব আগ্রহ নিয়েই স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে এসেছেন তারা। আর্থিকভাবে তেমন বড় কোন চাহিদা যে নেই, এটা তাদের কথাতেই বোঝা গেছে। ক্রিশ্চিয়ান স্যান্ডার্স বলেন, ‘জাস্ট এ্যানজয়। আমরা উপভোগ করছি গেমস। আর তোমাদের সহযোগিতা করা সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ তোরা ডলের কথায়, ‘খুব ভালো লাগছে কাজটা করে। নিজের বার্মিংহামের সম্মান বাড়ানোর জন্যই স্বেচ্ছাসেবক হয়েছি। এতে নিজেকে সম্মানীত মনে হচ্ছে।’
স্বেচ্ছাসেবক, শব্দটাই বলে দিচ্ছে এই শ্রমের বিনিময়ে তারা কোনো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না। তবে একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রম না-ও বলা যায়। কারণ আয়োজকরা স্বেচ্ছাসেবকদের যৎ কিঞ্চিত সুবিধা দিচ্ছে- দিনভর খেটে স্বেচ্ছাসেবকরা পেয়েছেন এক সেট জার্সি-ট্রাউজার, গেমসের লোগোসহ একটি পানির বোতল, পাচ্ছেন যাতায়াতের জন্য গাড়ির সুবিধা, পর্যাপ্ত খাবার ও গেমস শেষে পাবেন একটি সনদপত্র। হ্যাঁ, এটুকু পেয়েই সন্তুষ্ট কমনওয়েলথ গেমসে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকরা। আনন্দচিত্তে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন সবাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যেখানে আলাদা বাংলাদেশের জলি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ