মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
কাজী মোরশেদ আলম : নিজ দেশে বসবাস করেও রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে নির্মমভাবে। তাদেরকে দোর্দ- প্রতাপে ধরে ধরে হত্যা করে চলেছে মিয়ানমারের অসভ্য অধিবাসীরা। কেন এ হত্যা? গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে বাকি নেই যে, তারা মিয়ানমারে মুসলমানদের থাকতে দেবে না। তাই তো অগ্নি উদগিরণ দাবদাহে একের পর নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে নিবিষ্ট চিত্তে তাদেরকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। নিজের দেশ থেকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে বহিষ্কার করে দেওয়াটা বড় অন্যায়। অনেক রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে ও সম্ভ্রম রক্ষায় আমাদের দেশে অফুরান সুযোগের আবহে অবস্থান করছে। আমরা তাদেরকে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি না। তাদের নিজস্ব জন্মভূমি ও নিজস্ব দেশ রয়েছে। অথচ তারা নিজের দেশে থাকতে পারবে না আর আমাদের দেশে ভিড় জমাবে যা বড়ই আচানক এবং তা কোনোমতেই হতে পারে না। তবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়িয়ে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। যে সকল রোহিঙ্গা আমাদের দেশে ভিড় জমাচ্ছে তাদেরকে উন্নত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে সহযোগিতা এনে তাদেরকে শক্তিশালী করতে হবে। নিজ দেশে বসবাসরত লোক অন্য দেশে এসে বসবাস করবে তা আমাদের ভাবতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কোনো রোহিঙ্গা এ দেশে না আসতে পারে। রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ দেশে ঘনবীথিকার সুপ্তি ভেঙে শান্তির সাথে বসবাস করতে পারে তার বিহিত ব্যবস্থা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আসুন আমরা রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজ দেশে শান্তির সাথে বসবাস করার জন্য তরতরিয়ে এগিয়ে আসি। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা সবচেয়ে নিপীড়িত নিগৃহীত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এর মধ্যেই বিদ্রƒপাত্মক ভঙ্গিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে জাতিসংঘ। যাহোক রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষার জন্য তাদের দোরগোড়ায় বিশ্বের সব মুসলমানের এগিয়ে আসতে হবে।
অন্যান্য বিধর্মী সংগঠনগুলো ঢুলু ঢুলু চোখে তাকাবে এবং মুখে মুখে বিড় বিড় করে মায়াকান্না করবে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা মুসলমানদের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবে না। বরঞ্চ তারা ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের অত্যধিক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য অন্যান্য দেশের মুসলমানদের এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের সংখ্যালঘু বলা যাবে না। তারা আরাকানের প্রাচীন অধিবাসী। রোসাং বা রোসাঙ্গ দেশ নামে আরাকানের নাম ছিল। রোসাঙ্গ নামকে পরিবর্তন করে বর্তমানে এর নামকরণ করা হয় রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা হলো সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা। আরব ব্যবসায়ীরা এ দেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। অনেকে ইসলামে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে আরাকান আক্রমণ করেন বর্মিজ রাজা। গৌড়ের সুলতান হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়ে আরাকান রাজাকে সাহায্য করেছিলেন। বর্মিজ রাজা পরাজিত হন। ক্ষমতায় বসেন আরাকান রাজা। তখন থেকেই মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তৎকালীন কবি আলাওল কাজীসহ আরো অনেক সমৃদ্ধশালী ব্যক্তি আরাকানে বসবাস করেছে। ১৭৮৪ সালে বর্মিজরা আরাকান দখল করে কয়েক হাজার আরাকানীকে হত্যা করে। মসজিদ ও মন্দির ধ্বংস করে বর্মিজরা। তখন কয়েক লাখ লোক চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয়। বৃটিশরা বার্মা অধিকারের জন্য আক্রমণ করে। ১৮২৩ সালে আরাকান রাজ্যটি বৃটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৭ সালে ১ এপ্রিল বার্মাকে বৃটিশ ভারত থেকে আলাদা করা হয়। আরাকানের জনগণ রাজ্যটিতে স্বায়ত্তশাসন কামনা করে ব্যর্থ হয়। আরাকানকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৪২ সাল থেকে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শুরু হয় ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শহীদ হয়। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। তাদের জায়গা জমি বাজেয়াপ্ত করে। তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করছে দিবা-নিশি হরহামেশা।
বার্মা সরকার তাদের জাতীয়তা কেড়ে নেয়। অ¯্রবলে বিভীষিকাময় অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় রোহিঙ্গাদেরকে। যারা সেখানে রয়ে গেছে তারা নিজ দেশে আজ পরবাসী। রোহিঙ্গা মুসলমিদের জায়গা সম্পত্তি ধনদৌলত কেড়ে নিচ্ছে অসভ্য রাখাইন বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গারা অত্যাচারে নিমজ্জিত। এসবের কারণে ১৯৪৮ সালে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বিদ্রোহ করে এবং স্বাধীন আরাকানের দাবি করে। অশ্লীলতার তকমা রহিত করে এবং জেহাদি ভাবধারা বুকে ধারণ করে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গারা কেন বাংলাদেশে অবস্থান করবে? যদিও রাখাইন বৌদ্ধদের অত্যাচারের কারণে তারা আজ আমাদের দেশে এসে ভিড় করছে। আমরা আপাতত তাদেরকে আশ্রয় না দিয়ে পারছি না। কিন্তু আমাদের ব্যাপকভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে কী করা যায় এদেরকে নিয়ে। রোহিঙ্গাদের সন্তানরা জিঘাংসার তা-বে পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত। তারা সন্তান-সন্ততিও জন্ম দিতে পারছে না। এবাদত বন্দেগী করা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এসব পশু সমতুল্য বৌদ্ধরা আজ অমানবিক পরিচয় দিচ্ছে এবং তাদের ভয়ংকর ও বীভৎস দৃশ্য দেখে আমরা হতবাক। গৌতম বুদ্ধের বাণী তারা উপেক্ষা করে চলেছে। গৌতম বুদ্ধের বাণী, মানুষ হত্যা মহাপাপ। কিন্তু এ বাণীকে বৌদ্ধরা মানছে না। তারা ইসলামবিদ্বেষী তাগুতি শক্তির প্রভাবে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করে চলেছে। ফেসবুকে ভয়ঙ্কর চিত্র দেখে গা শিহরিয়ে ওঠে। মর্মান্তিক মৃত্য ঘটাচ্ছে একের পর এক। যে মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধ একটি আহত পাখির যন্ত্রণায় কাতরাতেন। আর তার অনুসারীরা জঘণ্যভাবে হত্যা করে চলেছে রোহিঙ্গাদের। আসলে তারা সত্যিকারের গৌতম বুদ্ধের অনুসারী নয়। এসব অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে রুখতে হবে। আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, তারা রোহিঙ্গাদেরকে সে দেশে থাকতে দেবে না। তাই তো রোহিঙ্গাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে তারা। রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসে ভিড় জমাচ্ছে। আমরা মানুষ তারাও মানুষ। এই দুর্যোগ মুহূর্তে আমরা তাদের বাধা দিতে পারছি না। তাদের নিজস্ব একটি দেশ রয়েছে। অথচ নিজ দেশে তারা পরবাসী হবে তা হতে পারে না। এর বিহিত ব্যবস্থা অবশ্য করতে হবে। তাদেরকে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু কীভাবে ফিরে যাবে তারা? এসব দুর্বৃত্তচারী বৌদ্ধরা তাদেরকে তাদের নিজ দেশে থাকতে দিচ্ছে না। আমাদের সঠিক চিন্তা করতে হবে কীভাবে এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দেয়া যায়। বর্মি সরকার ও রাখাইন বৌদ্ধদের নির্লজ্জকর কর্মকা-ের ভয়াবহ চিত্র সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছে এবং দেখেছে। মানুষ হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো কর্মকা- ঘটাচ্ছে তারা। ক্ষমতার জৌলুসে ভয়ঙ্কর দ- ও দাপটে মাত্র নয় দিনে রোহিঙ্গাদের ৮২০টির চেয়ে বেশি বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এসব ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর থেকে। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করে অনেক মানুষকে হত্যা করেছে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বের কয়েকটি দেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা জীবনযাপন করছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে জাতিসংঘ তা বলছে ঠিকই কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আমাদের ভাবতে হবে ইসরাইল আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় এগিয়ে এসেছে কয়েকটি রাষ্ট্র। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নিকৃষ্টভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের দিকেও আমাদের সকলের নজর দিতে হবে। তারা তাদের রাষ্ট্রে যাতে শান্তির সাথে বসবাস করতে পারে তারই বিহিত ব্যবস্থা করতে হবে বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রকে। আজ বাংলাদেশের সরকার রোহিঙ্গাদের বিপদ-আপদে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে বিশ্বের সব মুসলমানকে তৎপর হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা দাপটের সাথে মিয়ানমারে বসবাস করতে পারে। আজ তারা শিক্ষাদীক্ষায় অবহেলিত। আর এই অবহেলার কারণে তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আসুন, আমরা সকলে এগিয়ে আসি তাদের উন্নয়নের জন্য।
ষ লেখক : প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর.
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।