কেউ শোনে না হাওরের কান্না
এস এম মুকুল : ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস- ‘গ্রাম থাইক্কা স্বজনরা ফোন করতাছে, চৈত মাসে অভাইগ্যা
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন যে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে তার বিপরীতে মটরসাইকেলই উত্তম।
মটরসাইকেল আমাদেরকে নানাভাবে নিরাপদ রাখে। ‘ইউনাইটেড নিউজ অফ বাংলাদেশ’-এর তথ্য অনুসারে ধাতুর ওপর করোনাভাইরাস তিনদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মটরসাইকেল যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন, তাই ব্যবহারকারী চালানোর আগে জীবাণুনাশক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। কিন্তু গণপরিবহনে সেটা সম্ভব নয়। গণপরিবহন হয়ে উঠতে পারে জীবাণুর আধার, কারণ যারা গণপরিবহন ব্যবহার করেন তাদের মাঝে কেউ না কেউ যে জীবাণুতে সংক্রমিত নন, তারতো কোনো নিশ্চয়তা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবলিউ এইচ ও / WHO) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোভিডকালে দু’জন মানুষের মাঝে শারীরিক দূরত্ব থাকা উচিত তিন ফুটেরও বেশি (১ মিটার); আল জাজিরার অন লাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শারীরিক দূরত্ব ন্যূনতম দুই মিটার হওয়া উচিত। মটরসাইকেল চালানোর সময় যে কারো থেকে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা সহজেই সম্ভব। যেখানে চোখের মাধ্যমেও শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, সেখানে হেলমেট মটরসাইকেল চালকের চোখকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। ছোঁয়াচে রোগ ও করোনাভাইরাসের মধ্যে সামঞ্জস্য বোঝাতে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আপনি অসুস্থ থাকলে, হাঁচিকাশির মাধ্যমে হাতে জীবাণু যেতে পারে এবং সেখান থেকে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে অন্যের হাতে এবং হাত দিয়ে চোখ ঘষার কারণে চোখের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। কোভিড-১৯ এর জন্য এটি চরম সত্য।”
অন্যদের থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে মটরসাইকেল অনেক সুবিধাজনক। শহরের মধ্যে মটরসাইকেল ভ্রমণে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে আনুমানিক খরচ পড়ে ২ টাকা। পরিবহন খরচ হিসেবে শহরের মধ্যে এটা সবচেয়ে কম। এ বিষয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শেখ বলেন, আমি থাকি মোহাম্মদপুরে, আমার কর্মক্ষেত্র কারওয়ান বাজারে, মাঝে মাঝে শেওডাপাড়া ও ধানমÐিতে যেতে হয় পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। এসব এলাকায় চলাচলের বাইরেও মাঝেমধ্যে একটু মুক্ত হাওয়ায় ঘোরাঘুরির জন্য শহরের ভিতরেই দূরে কোথাও চলে যাই, তারপরেও মাসে আমার ৯৫০ টাকার বেশি খরচ পড়ে না।
নগরবাসীর নিরাপদ পরিবহনে সবচেয়ে আর্থিক সমাধানের পন্থা হয়ে উঠছে মটরসাইকেল।
মটরসাইকেল নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রীমা বলেন, পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি যাতায়াতের খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে একটা অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। শহরের মধ্যে প্রতিদিন যাতায়াত খরচ অনেক ব্যয়বহুল। একটা স্কুটি কেনার প্রাথমিক ব্যয়ের পরও আমি যে পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে পেরেছিলাম, তা আমার ব্যবসায়ের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য মূলধন হিসেবে যথেষ্ঠই ছিলো।
এছাড়া যাত্রীদের সময় বাঁচে। মটরসাইকেল ঢাকা শহরে একজন যাত্রীর অন্তত ৫০% সময় বাঁচায়। উত্তরায় বসাবাসকারী শাহীন, যিনি পত্রিকায় প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেন, তিনি জানান, আগে গণপরিবহনে ধানমÐি থেকে গুলশানে যেতে দেড় ঘণ্টা লেগে যেতো, এখন মটরসাইকেল কেনায় সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিটে চলে যেতে পারেন। আগে গন্তব্যে যেতে আগে অন্যান্য লোকজনের সাথে সংস্পর্শে আসার যে ঝুঁকি ছিলো, বাইকের কারণে তা কমে গেছে।
‘এই অতিমারীর সময়ও আমি নিশ্চিন্তে কম ঝামেলায় দ্রæত চলাচল করতে পারছি আমার স্কুটির কারণে। যেহেতু এটি আমি একাই চালাই, তাই নিজের মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, যে গিয়ারগুলো আমাকে সুরক্ষা দেয়, সেগুলোও আমি পরিচ্ছন্ন রাখি, যাতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে না পারে। এ ছাড়া রাস্তায় যেকোনো বাহন থেকে নিজেকে ছয় ফুট দুরে রাখতে পারি। প্রয়োজনে বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি।’ কথাগুলো বলছিলেন শিপ্রা নামের এক স্কুটারমালিক, যিনি একটি সফটওয্যার কোম্পানিতে টেলিমার্কেটার হিসেবে কাজ করছেন।
একটি এফএমসিজি গ্রæপ অফ কোম্পানিজে হিসাব বিভাগে কাজ করেন হাসান। তিনি বলেন- আমি থাকি উত্তরায়। অফিস বনানীতে। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার থেকে আমি মটরসাইকেল ব্যবহার করা শুরু করেছি। কারণ মটরসাইকেলের দামও কম, রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। মটরসাইকেল কেনার পর গণপরিবহনে চলাচলের ঝক্কিও কমেছে, এখন সময় মতো অফিসেও যেতে পারছেন তিনি। তাছাড়া আগে যেখানে যাতায়াতে খরচ হতো মাসে ৪০০০ টাকা, এখন একই টাকার জ¦ালানিতে তিনি প্রায় ৫ মাস চলতে পারছেন। তার মাসিক খরচ বেঁচে গেছে প্রায় ৩০০০ টাকা।
উপরন্তু দীর্ঘমেয়াদের জন্য মটরসাইকেল একটি ভালো বিনিয়োগ। প্রকৃতপক্ষে মটরসাইকেলে বিনিয়োগের তুলনায় সুবিধা অনেক বেশি।
ফ্রিল্যান্স রিসার্চ কনসালট্যান্ট সৈয়দ মামুন প্রতি চার বছরে একবার মটরসাইকেল পাল্টান। তিনি বলেন, মটরসাইকেলের কারণে আমার যাতায়াত খরচ পড়ে খুবই কম। আবার নতুন একটি মডেল এলে পুরানোটা বিক্রি করেও ভালো দাম পাই। আমি সবসময়ই আর্থিকভাবে লাভবান থাকি। আমি যদি আমার মটরসাইকেল ঠিকঠাকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি, তাহলে প্রতি চার বছর অন্তর একটা ভালো পরিমাণের আর্থিক সুবিধা পেতে পারি।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. পূনম ক্ষেত্রপাল সিংয়ের পরামর্শ হলো, ‘‘ এ ব্যাপারে কোনো বিভ্রান্তি নেই যে আগামী আরো দীর্ঘদিন আমাদের এই পরিস্থিতির মধ্যেই থাকতে হবে।”
বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় মটরসাইকেলই অত্যন্ত নিরাপদ বাহন। অর্থনৈতিক সুবিধার দিক থেকেও এটি সবার পছন্দ। বেশি মাইলেজের কারণে যেমন অনেক সাশ্রয়ী, তেমনি নিজেকে গতিশীল/সচল রাখার জন্যও সুবিধাজনক। সময় এবং খরচ বাঁচাতেও মটরসাইকেলই সেরা বিকল্প।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।