পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটি আস্ত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করে যাচ্ছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়। তাদেরকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে মিয়ানমার তথা বার্মার সেনাবাহিনী। যাদের নির্মূল করা হচ্ছে তারা হলেন রোহিঙ্গা। ধর্মবিশ্বাসে তারা মুসলমান। বলা হয় যে, রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১৩ লাখ। আসলে সংখ্যাটি ১৩ লাখ নয়, সংখ্যাটি হলো ২৫ লাখ। এই মুহূর্তে বার্মার রাখাইন বা আরাকান প্রদেশে আছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। এদের ওপরই এখন চলছে বর্মী সেনাবাহিনী এবং রাখাইন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বীভৎস নিপীড়ন। অবশিষ্ট ১২ লাখ আছে ৪টি দেশে। বাংলাদেশে ৫ লাখ, সউদী আরবে ৪ লাখ, পাকিস্তানে ২ লাখ এবং থাইল্যান্ডে ১ লাখ। ১৯৭৮ সাল থেকে জেনারেল নে উইনের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চালায় সেই গণহত্যার ধারাবাহিকতায় ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে এসব দেশে আশ্রয় নিয়েছেন এসব হতভাগ্য বিড়ম্বিত মুসলিম রোহিঙ্গা। আজ ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ও বিভিন্ন প্রখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, সারা দুনিয়ায় রোহিঙ্গারা হলো সবচেয়ে নিপীড়িত নির্যাতিত ছিন্নমূল জাতিগোষ্ঠী।
বংশ পরম্পরায় ৬ শত বছর
গভীর পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অশান্তির দানবী অং সান সু চির সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের সংবাদ বারবার অস্বীকার করছে। কিন্তু বিমান বা অনেক উচ্চ স্থান থেকে হাই ডেফিনেশন (ঐউ) ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতে যখন দেখানো হচ্ছে যে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের অন্তত ১২শ’ বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয়েছে, অন্তত ১২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এবং অন্তত ১০০ মানুষকে জবাই করে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তখন সু চির সরকার ভিন্ন গীত গাইছে। তারা বলছে যে, রোহিঙ্গারা বর্মী নয়, তারা ভিনদেশী, তাদের উৎপত্তি বাংলাদেশে। এসব কথা বলে নোবেলধারিণী সু চির সরকার ৬ শত বছরের ইতিহাসকে খাড়া অস্বীকার করছে।
৬ শত বছর আগে তারা বার্মার আরাকান প্রদেশে আসে। আরাকানের রাজা নর মিখলার রাজত্বে তারা বসত গাড়ে। রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়। তিনি বাংলার পূর্বাঞ্চলে আশ্রয়গ্রহণ করেন। তখন বাংলার মুসলমান শাসক সুলতান জালালউদ্দীন শাহ তাকে সাহায্য করেন। সুলতান জালালউদ্দীন শাহের সাহায্যে রাজা নর মিখলা ১৪৩০ সালে সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন এবং আরাকান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বংশানুক্রমে আরাকান তথা রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে।
নাগরিকত্ব বাতিল
বর্মী সরকারের মিথ্যাকে সত্যি প্রমাণ করার জন্য ১৯৮২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করে। নাগরিকত্ব বাতিল করে তারা ধারাবাহিকভাবে এই মর্মে মিথ্যাচার করতে থাকে যে, রোহিঙ্গারা বর্মী নয়, তাদের আদি ও উৎপত্তি হলো বাংলাদেশ। আরাকান তথা মিয়ানমারে তারা বাংলাদেশী অনুপেবেশকারী। এসব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তারা হটিয়ে দিচ্ছে। হটিয়ে দেয়ার নাম করে এই অক্টোবর থেকে তারা যখন প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে বিতাড়ন করেছে, শত শত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, শত শত মহিলাকে ধর্ষণ করেছে, একমাত্র তখনই এই বর্বর নিপীড়ন বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে।
আরাকানে জেনোসাইড চলছে
আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বর্মী সেনাবাহিনীর যে সম্মিলিত জাতিগত নির্মূল অভিযান চলছে সেটিকে এক কথায় বলা যায় জেনোসাইড বা গণহত্যা। জেনোসাইড সম্পর্কে ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সনদে বলা হয়েছে, অপঃং পড়সসরঃঃবফ রিঃয রহঃবহঃ ঃড় ফবংঃৎড়ু, রহ যিড়ষব ড়ৎ রহ ঢ়ধৎঃ, ধ হধঃরড়হধষ, বঃযরপধষ, ৎধপরধষ ড়ৎ ৎবষরমরড়ঁং মৎড়ঁঢ় রং পধষষবফ মবহড়পরফব. অর্থাৎ একটি জাতি, ধর্মীয় সম্প্রদায়, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং নৈতিক গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নির্মূল করার জন্য যে কর্মকা- চালানো হয় সেটিকে বলা হয় জেনোসাইড বা গণহত্যা। একটি সমগ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার অভিযান চলছে। গ্রামের পর গ্রাম লুণ্ঠন করা হচ্ছে। মসজিদের পর মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাইকারি হারে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।
এই রোহিঙ্গা মুসলিম ম্যাসাকারের নেপথ্যে যে ব্যক্তিটি ঘাতক হিসেবে কাজ করছে তার নাম বি রা থু। এই ব্যক্তি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। বিশ্ববিখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিন এই কুখ্যাত ব্যক্তির নাম দিয়েছে ‘মিয়ানমারের বিন লাদেন’। সে বার্মার একটি চরমপন্থী কুখ্যাত সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা। সেই গ্রুপটির নাম ‘মা বা থা’। এই গ্রুপের আরেক নাম হলো ‘আন্দোলন ৯৬৯’। এই ঘাতক এক সময় রোহিঙ্গাদের বলেছিল নেকড়ে। রোহিঙ্গাদের প্রতি বৌদ্ধদের আচরণ সম্পর্কে এই সন্ত্রাসী নেতা দম্ভভরে বলে, ‘যখন তাদেরকে আঘাত করে দুর্বল করা হয় তখনই তারা ভালো ব্যবহার করে।’
মিয়ানমারে বর্তমানে রয়েছে ১৩৫টি নৃতাত্ত্বিক জাতি। রোহিঙ্গারা সমগ্র বর্মী জনগোষ্ঠীর মাত্র ৪ শতাংশ। এই ৪ শতাংশের অস্তিত্বও তারা সহ্য করতে রাজি নয়। এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের নজরে এসেছে তখনই যখন তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে নাফ নদীতে ভাসমান শত শত ডিঙ্গি নৌকা। ধরা পড়েছে তখনই যখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা মহিলাদের গণহারে ধর্ষণ লিপিবদ্ধ করেছে। যখন ঐসব ভাসমান নৌকার যাত্রীদের অনেকের সলিল সমাধি হয়েছে। নদীর ওপারে যখন শত শত মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। আর এসব হৃদয়বিদারক লোমহর্ষক খবর যখন পৃথিবীর ২টি বিখ্যাত পত্রিকা ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এবং লন্ডনের ‘ইনডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছেপেছে তখনই বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর আকৃষ্ট হয়েছে।
মা বা থাকে সু চির সমর্থন
শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো এই যে, এই সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘মা বা থা’ এবার আনুকূল্য ও আশীর্বাদ পেয়েছে শান্তির দেবীরূপী অশান্তির মূর্ত প্রতীক সু চির, যার সরকারকে একাধিক মার্কিন সাংবাদিক আখ্যায়িত করেছেন ‘গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব’ হিসেবে। আমেরিকাভিত্তিক একজন বাঙালি সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘মা বা থার’ অনেক নেতা বা সদস্যই সু চির দলের মধ্যম সারির নেতা। সু চির পূর্বসুরি প্রেসিডেন্ট থিয়েন সিয়েন মা বা থা সংগঠনকে ‘শান্তির প্রতীক’ এবং রক্তপিপাসু বি রা থুকে ‘ভগবান বুদ্ধের সন্তান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মা বা থার এই অভিযান শুধুমাত্র রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধেই নয়, তার অভিযান খোদ ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে। তার একজন প্রধান সহকারীর উক্তি, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো আমরাও ইসলামের হুমকি থেকে আমাদের দেশ ও ধর্মকে রক্ষার চেষ্টা করছি।’
৮৮ শতাংশ বৌদ্ধ ৪ শতাংশ মুসলমানকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি হুমকি মনে করে। বিষয়টি সোনার পাথর বাটি নয় কি?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।