Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জ্বলছে আরাকান, বিপন্ন মানবতা

শামসুল হক শারেক, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমাদের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলছে ইতিহাসের জঘন্যতম নির্যাতন। মিয়ানমারের সেনা-পুলিশ ও বুডিস্ট সন্ত্রাসীরা একাকার হয়ে মুসলমানদের ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে বিপন্ন করে তুলেছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবন। ঘরবাড়ি ছাড়া মানুষগুলো আশ্রয়ের জন্য  ছোটাছুটি করলে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে তাদের। ধর্ষণ আর গুলির মুখে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী শিশুদের।  দু’মাস ধরে এই নিষ্ঠুর নির্যাতন চলে এলেও কেউ  নেই রোহিঙ্গাদের পাশে।
সরেজমিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে আরাকানের অনেক দৃশ্য। জানা গেছে, সেখানকার অনেক বিষয়। গত শনিবার ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সীমান্তের হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সোজা আরাকানের কুমিরখালীর কয়েকটি গ্রামে ঘরবাড়িতে আগুন জ¦লতে দেখা গেছে। ওখান থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন নারী ও যুবক জানান, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাখাইন সন্ত্রাসী যুবকেরা কয়েকটি গ্রাম
জ্বালিয়ে দিয়েছে। ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বেশ কিছু যুবতীকে ধরে নিয়ে গেছে। কয়েকজন যুবককে ধরালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে।
বালুখালী সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা কয়েকজন নারী-শিশুর সাথে কথা বলে জানা গেছে আরো লোমহর্ষক বর্ণনা। উত্তর আরাকানের গ্রামগুলোতে নাকি সেনা-পুলিশ সদস্যরা চার পাশ ঘিরে ফেলে। ধারালো অস্ত্র আর বন্দুক নিয়ে বুডিস্ট সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়ে দেয়া হয় গ্রামের ভেতরে। তারা ঘরবাড়িতে গিয়ে যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে কাঁচা ঘরবাড়ির পার্টিশনগুলো তুলে দিয়ে মা-বাবার সামনেই তাদের ধর্ষণ করে থাকে। ছোট শিশুদের জবাই করে হত্যা করে। বাধা দিলে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। নারী-শিশু-পুরুষ অন্যত্র অশ্রয়ের জন্য ঘর থেকে বের হলে নির্বিচারে গুলি করে সেনা-পুলিশ সদস্যরা। তারা আরো জানায়, প্রাণ ও ইজ্জত বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা আশ্রয় চায়, খাদ্য ও চিকিৎসা চায়, চায় তারা বাঁচতে।
গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা হচ্ছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে বাস্তুহারা করা হয় অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে। এছাড়া নারী-শিশুদের ওপরও চলছে নির্মম নির্যাতন। প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে পরিবার-আত্মীয়স্বজনকে কোথায় আছেন তার খবরও নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। অনেকেই পরিবার-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ হয়ে আছেন বনে- জঙ্গলে।
খবর পাওয়া গেছে, আরাকানে এখনো পর্যন্ত থেমে থেমে  সেনাবাহিনীর নির্যাতন চলছে। তাদের ভয়ে রোহিঙ্গা পুরুষরা জনমানবহীন পাহাড়, জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছে। আর নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে যখন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এ দেশে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, তখন ফিরে যেতে চাইলে তাদের পড়তে হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলির মুখে। সেখানকার সেনাবাহিনী ইচ্ছে করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।
এদিকে সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি সত্ত্বেও গত কয়েক দিনে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ৩০ হাজারেরও বেশি বিপন্ন রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। এদের অধিকাংশই টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবির ও উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও নতুন আশ্রিত রোহিঙ্গারা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজিবির কড়াকড়ির কারণে নতুনভাবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দৃশ্যমান কোথাও আশ্রয় নিতে পারছে না। তাই তারা আগের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে যাচ্ছে।
এদিকে গতকালও উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ চেষ্টাকালে রোহিঙ্গাভর্তি একটি নৌকা বিজিবি  ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।



 

Show all comments
  • Tapu ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১:১৬ এএম says : 1
    Asun amra ader pase darai
    Total Reply(0) Reply
  • খালিদ ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১:২১ পিএম says : 0
    মানবিক দিক বিবেচনায় তাদেরকে আমাদের আশ্রয় দেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ