Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন মাস আগে দুর্নীতিবাজদের চাপিয়ে জাতিকে অপমান করা হয়েছিল : ইমরান খান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২২, ৮:৪৮ এএম

পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান পাঞ্জাবের ডেপুটি স্পিকারের রুলিংয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ৩ মাস আগে আমাদের সরকারকে সরিয়ে এবং দুর্নীতিবাজদের চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে অপমান করা হয়েছিল।
স্থানীয় সময় রাত ১০টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভাষণ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এর ফলে সন্ধ্যা থেকেই লাহোরের লিবার্টি চকে জনগণ একত্রিত হতে থাকেন। আবাল-বৃদ্ধ বণিতার সমাবেশ জমে যায়। তারা মনোযোগসহ ভাষণ শোনেন। অনেকের হাতেই জাতীয় ও পিটিআই’র দলীয় পতাকা শোভা পায়। একই সময়ে পেশাওয়ার করাচীসহ পাকিস্তানের সবগুলো বড় বড় শহরে পিটিআই নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে সেøাগান দেন, পরস্পরকে মিষ্টিমুখ করান এবং বর্ণাঢ্য আতশবাজির আয়োজন করা হয়।
টেলিভিশন ভাষণে খান বলেন, তারা [জোট সরকার] তাদের ‘ভেড়া ও ছাগল’ বিবেচনা করে ‘জনগণকে অসম্মান করেছে’ এবং তাদের উপর ‘দুর্নীতিবাজদের’ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন যে, পিটিআই যখন ২৫ মে তাদের ‘আজাদী মার্চ’ ঘোষণা করেছিল, ‘তারা [জোট সরকার] হাকীকী আজাদীকে সমর্থন করার জন্য বেরিয়ে আসা পরিবারগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছিল’।
‘আজ, আমি সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও লোকেরা ভয়ে বাড়িতে থাকার পরিবর্তে সমর্থন দেখানোর জন্য বেরিয়ে এসেছিল’। তিনি যোগ করেছেন যে, তিনি আনন্দিত, পাকিস্তানের জনগণ এখন একটি জাতি হতে শুরু করেছে।
‘আমার সারাজীবনে, আমি এর আগে একবারই এমন উদ্যম দেখেছি এবং সেটা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়; তখন সবাই ভেবেছিল জাতি যুদ্ধ করছে এবং এখন, আমি পাঞ্জাবের ২০টি আসনে উপনির্বাচনের সময় জনগণের মধ্যে একই উৎসাহ দেখেছি’ তিনি বলেন।
খান আরো যোগ করেছেন যে, উপনির্বাচনে পিটিআইকে পরাজিত করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। ‘প্রথমত, হামজাকে আমাদের ওপর বেআইনিভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল’ এবং এমনকি যখন তাকে সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র এবং প্রশাসন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তখনও তিনি নির্বাচন কারচুপির জন্য উল্লিখিত সমস্ত ব্যবহার করেন।
ইসিপির বিরুদ্ধে হামজাকে সমর্থন করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন: ‘নির্বাচন কমিশনও উপনির্বাচনে পিএমএল-এনকে সাহায্য করে আমাদের পরাজিত করার চেষ্টা করেছিল’।
তার দলের জয়কে একটি ‘অলৌকিক’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পিটিআই জিততে সক্ষম হয়েছে কারণ জনগণ তাদের ভোট দিতে এসেছিল। তিনি বলেন, নতুন ইতিহাস লেখা হচ্ছে।
পিটিআই চেয়ারম্যান বলেছেন, পাকিস্তানের সমস্ত অর্থনৈতিক সূচকগুলো দেখিয়েছে যে, পিটিআই এর আমলে অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, বলেছেন যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১-২২ দেখায় যে ১৭ বছর পরে এই ধরনের বৃদ্ধি দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য কার্ড উদ্যোগসহ তার সরকার ঘোষিত ত্রাণ প্যাকেজগুলো তুলে ধরে খান বলেন যে, দলের প্রচেষ্টা দেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
কোয়ালিশন সরকারকে তিরস্কার করে তিনি বলেন, পিটিআই-এর নেতৃত্বাধীন সরকারের সাড়ে তিন বছরে মার্কিন ডলার ক্রমবর্ধমানভাবে ৫০ টাকা অবমূল্যায়িত হয়েছিল; তবে, জোট সরকারের প্রথম তিন মাসে এটি প্রায় ৫৩ টাকা দর হারিয়েছে।
‘তবে প্রশ্ন একই রয়ে গেছে: দেশ যখন ভাল চলছিল, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব জানা সত্ত্বেও কেন ষড়যন্ত্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল’? তিনি কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন - যা তার মতে - ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে পারত।
দেশের সমস্যার সমাধানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সংকট থেকে উত্তরণের একটাই পথ। ‘স্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত’। তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফলাফল ঘোষণা করায় কারচুপি বন্ধ করা যেত এবং এটি ১৩০টি কারচুপির পদ্ধতি বন্ধ করতে পারে।
খান স্বীকার করেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি কঠিন ছিল এবং যোগ করেছেন যে, ‘এই জোট সরকার যত বেশি সময় ক্ষমতায় থাকবে, জনগণের পক্ষে [টিকে থাকা] ততই কঠিন হবে’।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ সেøাগান তুলেছিল। তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছিলাম যার ফলে আমাদের সময়ে ফসলের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। আপনারা যেভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, আমি আপনাদের স্যালুট জানাই। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে ডাকাতরা রাজত্ব করবে দেশ বিপদের মুখোমুখি হবেই।
‘হামজা শাহবাজকে অবৈধ মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল’
ইমরান খান বলেন, হামজা শাহবাজকে অবৈধভাবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বসানো হয়েছে, জাতি কাউকে চাপিয়ে দেওয়া সহ্য করবে না। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মানুষ যেভাবে বেরিয়ে এসেছিল, আমি এভাবে আগে কখনও মানুষকে বের হতে দেখিনি।
তিনি বলেন, জনগণকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে এহসাস কর্মসূচি আনা হয়েছিল এবং দরিদ্র মানুষকে ১০ লাখের স্বাস্থ্য বীমা দেওয়া হয়েছিল।
ইমরান খান বলেন, মোশাররফের আমলে ডলার এসেছিল, কারণ তখন আমরা সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ছিলাম। আমাদের সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে নজর দিয়েছিল। গত দু’বছরে আইটি খাতে ৭৫ শতাংশ উন্নয়ন ঘটেছিল।
তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসীরা লুটেরা সরকারের আহ্বান সত্ত্বেও রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে না। কারণ তারা জানে যে, তারা যে ডলার পাঠাবে তা লুটেরারা পাচার করে দেবে। লুটেরাদের অর্থ বিদেশে থাকবে আর প্রবাসী পাকিস্তানিরা তাদের পরিশ্রমের টাকা পাঠিয়ে লুটেরাদের সহযোগিতা করবে, এটা হতে পারে না। সূত্র : ডন অনলাইন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ