মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মুহাম্মদ মাজারির রায় বাতিল করে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে মুসলিম লীগ (কিউ) এর ১০ ভোট বাতিলের রায় প্রত্যাখ্যান এবং পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করেছে।
প্রধান বিচারপতি উমর আত্তা বন্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতি এজাজুল আহসান ও বিচারপতি মুনীব আখতারের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ গতরাতে এ রায় দেন এবং পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে রায় শুরু হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ১১ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত সিদ্ধান্তটি প্রধান বিচারপতি ঘোষণা করেন এবং বলেন যে, পারভেজ এলাহীর অনুরোধ গৃহীত হয়েছে এবং সংবিধানের ৬৩এ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা সঠিক এবং এ বিষয়ে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকারের রায়কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকারের রুলিং বাতিল এবং বলা হয় যে, পারভেজ এলাহি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবকে পারভেজ এলাহিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা উচিত।
এ রায়ের পর সমগ্র পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ বা পিটিআই দলের সদস্যরা আনন্দে ফেটে পড়েন। তারা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান ও আলিঙ্গন করেন। অন্যদিকে সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বাসভবনে বৈঠকে মিলিত হন। মুসলিম লিগ-এন ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নাওয়াজ আদালতের রায়কে ‘বিচারিক অভ্যুত্থান’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এর আগে দিনভর আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন পিটিআই, মুসলিম লিগ ও পিপিপির সমর্থকরা। তাদের মুহুর্মুহূ সেøাগান ও মারমুখী আচরণে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে, হামজা শাহবাজের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং পারভেজ এলাহি আজ (গতকাল) রাত ১১:৩০ এ শপথ নেবেন। সিদ্ধান্তে আদালতের সিদ্ধান্তের অনুলিপি গভর্নরের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদি গভর্নর শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে প্রেসিডেন্টকে শপথ নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আরো বলেছে, হামজা শাহবাজের নিযুক্ত সব উপদেষ্টা ও সহকারীকেও বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, পিটিশনকারীদের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর সরকারি জোট বয়কটের পর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারির রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা পিটিশনের পরে সুপ্রিম কোর্ট বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে তার রায় সংরক্ষণ করে। এরপর সাড়ে ৭টায় রায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও দীর্ঘ বিলম্বের পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে রায় ঘোষণা করা হয়।
গত সোমবার পূর্ণ আদালতের বেঞ্চের জন্য সরকারি জোটের আবেদন খারিজ করার পর সুপ্রিম কোর্ট গতকাল আবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক পুনঃনির্বাচন সম্পর্কিত আবেদনের শুনানি করে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আত্তা বন্দিয়াল, বিচারপতি ইজাজ-উল-আহসান এবং বিচারপতি মুনীব আখতারের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ ডেপুটি স্পিকার পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলি সর্দার দোস্ত মুহাম্মদ মাজারির রায়ের ওপর যুক্তি শুনানি করেন, যে রায়ের ফলস্বরূপ হামজা শাহবাজকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
পাঞ্জাব বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মুহম্মদ মাজারির আইনজীবী ইরফান কাদির ঘোষণা করেন যে, তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলার কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। এর আগে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) আইনজীবী ফারুক এইচ নায়েকও আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে অস্বীকার করেন।
পিটিআই নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে মুসলিম লীগ (কিউ)-এর ১০ ভোট বাতিল করে ডেপুটি স্পিকারের রায় প্রত্যাখ্যান করে চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ ন্যায়ের বিজয় অর্জিত হয়েছে এবং পাকিস্তানের জনগণের ম্যান্ডেটকে সম্মান জানানো হয়েছে।
ইসলামাবাদে মিডিয়ার সাথে আলাপকালে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফের নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, আমি অভিনন্দন জানাতে চাই যে, আজ ন্যায়বিচারের জয় হয়েছে, সংবিধানের সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া হয়েছে এবং জনগণের ম্যান্ডেটকে সম্মান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৭ জুলাই পাঞ্জাবের জনগণ একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে, ইমরান খান জাতির সামনে একটি আখ্যান উপস্থাপন করেছেন, আমরা তা হৃদয় দিয়ে মেনে নিয়েছি। এই আমদানি করা সরকার যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে তিনি তার সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছিলেন। বিবেক বিক্রেতাদের সাথে যোগ দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারপর যখন তাকে পদচ্যুত করা হয়, তখন জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ইমরান খানের অবস্থানকে সঠিক বলে ঘোষণা করে।
শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। তিনি ১৮৬ ভোট পেয়েছেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হামজা শাহবাজ পেয়েছেন ১৭৯ ভোট।
‘বিচারিক অভ্যুত্থান’ বলে মরিয়ম নাওয়াজের প্রতিক্রিয়া : পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট সরকার গতকাল মঙ্গলবার পারভেজ এলাহীকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ পড়াতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রায়ে হামজা শাহবাজকে প্রদেশের শীর্ষ অফিস থেকে সরে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ রায়কে ‘বিচারিক অভ্যুত্থান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন পিএমএল-এন সহ-সভাপতি মরিয়ম নওয়াজ। একটি টুইট বার্তায় তিনি একথা বলেন। পিএমএল-এন রায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে সরকারকে এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে বলেছিল। তিনি এ সিদ্ধান্তকে ‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ বলেও অভিহিত করেছেন।
তার টুইটে শ্রমমন্ত্রী সিন্ধু এবং পিপিপি নেতা সাঈদ ঘানি বলেছেন, তিনি বিস্মিত হয়েছেন যে, শীর্ষ আদালত রাজ্যপাল বা প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দিয়েছে এলাহিকে শপথ পড়াতে। ‘যদি আমরা কিছু বলি, তাহলে তারা আমাদের অবমাননা করবে’ গনি বলেন।
জিও নিউজের সাথে কথা বলার সময় পিএমএল-এন নেতা তালাল চৌধুরী বলেছেন, তার দল শীর্ষ আদালতের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত মানে না এবং তারা এখন ‘জনগণের আদালতে’ যাবে। পিএমএল-এন ২০১৭ সাল থেকে ‘অবিচারের’ সম্মুখীন হচ্ছে উল্লেখ করে চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এই একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না, আমাদের কথা শোনা হয়নি’। সূত্র : ডন অনলাইন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
আগাম সেনাপ্রধান নিয়োগে কোনো ক্ষতি নেই
সাংবাদিকদের পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি গতকাল বলেছেন, তার মতে, ক্ষমতাসীনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগে ‘কোনো ক্ষতি নেই’। সেনাপ্রধান (সিওএএস) জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, যার মেয়াদ ২০১৯ সালে পূর্ববর্তী পিটিআই সরকার বর্ধিত করেছিল, ২৯ নভেম্বর তার দ্বিতীয় তিন বছরের মেয়াদ শেষ হলে তিনি তার অবস্থান ছেড়ে দেবেন। পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগকে দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের অন্যতম উপকথা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট আলভিকে সময়ের আগে নিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে তার অভিমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যেখানে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, তিনি এ জাতীয় কোনো পদক্ষেপে আপত্তি করবেন না। তিনি বলেন, আমার মতে, সময়ের আগে সেনাপ্রধান নিয়োগে কোনো ক্ষতি নেই।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে সেনাবাহিনী কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে [রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে] সেনাবাহিনীর কোনো সাংবিধানিক ভূমিকা নেই’।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কাউকে সংলাপে বসতে বা করতে বলার ক্ষমতা তার নেই। তবে তিনি বলেন, ‘সকল পক্ষ সম্মত হলে প্রেসিডেন্ট হাউস তার ভূমিকা [সমঝোতার জন্য] পালন করতে প্রস্তুত’। আলভি বলেন, প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থা দেশের সমস্যার সমাধান নয়, কারণ তিনি বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাস রাখেন।
প্রেসিডেন্ট সংবিধান লঙ্ঘন বা দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে স্বীকার করেছেন যে, সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদের অধীনে অবশ্যই বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ক্যাবলগেট সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে আলভি বলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন, শাসনের জন্য একটি ‘স্পষ্ট আদেশ’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কূটনৈতিক তারের যে কোনো তদন্তের ফলাফল - সঙ্কটের কেন্দ্রে - জনসাধারণের সামনে আনা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের সাথে সম্পর্ক : প্রেসিডেন্ট আলভি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সাথে তার সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ নয় এমন ধারণাকে অস্বীকার করে বলেছেন, এ ধরনের ধারণা ‘ভুল’। তিনি বলেন, তিনি বর্তমান সরকারের কাছ থেকে ৭৪টি সারসংক্ষেপ পেয়েছেন, যার মধ্যে তিনি স্বাক্ষর করেছেন এবং ৬৯টি ফেরত পাঠিয়েছেন। আলভি বলেন, তিনি পাঞ্জাবের গভর্নর, বিদেশী ভোটদানের অধিকার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) আইনে পরিবর্তন সম্পর্কিত সারসংক্ষেপ আটকে রাখেন।
তিনি বলেছেন যে, তিনি পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের সাথে এনএবি বা ইভিএম আইনের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেননি এবং তার সাথে তার শেষ চিঠিপত্রটি ছিল পাঞ্জাবের গভর্নরের ইস্যুতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির প্রচেষ্টার কথাও প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন। সূত্র : ডন অনলাইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।