Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারে চার নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল জান্তা সরকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২২, ৬:৪৮ পিএম

মাত্র তিন দিন আগে, মানে গত শুক্রবারই কারাগারে বন্দি ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিলেন মা। হিন উইন মে ঘুণাক্ষরেও তখন টের পাননি এই শেষ দেখা। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই জান্তা সরকার মেরে ফেলবে তার ছেলে, গণতন্ত্রকামী নেতা হিয়ো জায়ার থায়ো-কে।

মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারের সেনা সরকার সংবাদমাধ্যমকে জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির সাজা কার্যকর করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ, দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত চার গণতন্ত্রকামী নেতার মৃত্যুর খবরে নড়ে উঠেছে গোটা বিশ্ব। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব জাতিসংঘ থেকে শুরু করে নানা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। ১৯৮৮ সালের পরে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর করল মিয়ানমারের জান্তা সরকার। আগে ফাঁসি দেয়া হলেও এ বার কী ভাবে ওই চার নেতাকে মারা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চি-র ঘনিষ্ঠ সহযোগী, তথা মায়ানমার আইনসভার প্রাক্তন সদস্য জায়ার হিপহপ তারকা ছিলেন। গত নভেম্বরে রেঙ্গুনের ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেফতার করেছিল সেনা। অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়া। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় দেশের ট্রাইবুনাল আদালত। বন্ধ ঘরের সেই বিচার নিয়ে বহু আগেই প্রশ্ন তুলেছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করেও লাভ হয়নি। এপ্রিল মাসে মৃত্যুদণ্ডের সাজাই বহাল রাখে আদালত। আজ সংবাদমাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে স্তম্ভিত জায়ারের মা হিন। জানালেন, তিন দিন আগেও যখন কথা হয়েছিল, ছেলে তার কাছে চশমা, অভিধান আর কিছু দরকারি জিনিস চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। তার কখনও মনে হয়নি, ছেলের হাসি মুখটা সেই শেষ দেখছেন।

জায়ারের সঙ্গেই হত্যা করা হয়েছে আরও তিন গণতন্ত্রকামী নেতাকে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কো জিমি ওরফে কিয়ো মিন ইউ। ১৯৮৮ থেকে সেনা-বিরোধী গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন জনপ্রিয় এই নেতা। গত অক্টোবরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। অভিযোগ ছিল জায়ারের মতোই। বিচারও হয়েছে জায়ারের মতোই। জিমি ছাড়া মেরে ফেলা হয়েছে আরও দুই নেতা, লা মিয়ো আউং এবং আউং থুরা জায়োকে। শেষ দু’জনের সম্পর্কে বিশেষ তথ্য মেলেনি। শুধু জানা গিয়েছে, সেনাকে তথ্য দিতেন, এমন এক মহিলাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল এই দু’জনকে।

জায়ারের বাড়ির লোকের মতো বাকি তিন নেতার বাড়ির কাউকেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। প্রিয়জনের দেহ পেতে তাই আবেদন জানিয়েছেন ওই চার জনের পরিবারের লোকজন। জায়ারের মা জানিয়েছেন, ঐতিহ্য মেনে ছেলের শেষকৃত্য করতে চান তিনি। কিন্তু সরকার দেহ না দিলে, সেটাও করতে পারছেন না বৃদ্ধা। জিমির স্ত্রীও তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেনা-বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন সেই ছাত্রী বয়স থেকে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পরে আজ তার কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

তবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ। বলেছেন, ‘জান্তা সরকারের এই হীন আচরণের জন্য গোটা বিশ্বকে গর্জে উঠতে হবে।’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের মুখপাত্রও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। উদ্বিগ্ন দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলিও। এর পরে আরও শতাধিক গণতন্ত্রকামী নেতা ও বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ