Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে আ’লীগ সভাপতির লাঞ্ছিতের ঘটনায় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ বাড়ছে

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২২, ৬:৫৯ পিএম

কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সভাপতি মু. রুহুল আমিনের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতাহাতির মূল কারণ কি ছিল তা নিয়ে দুপক্ষের মতবিরোধ চলছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে এমপি রাজীর সাথে হাতাহাতির পর বের হয়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনতে যান কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সভাপতি মু. রুহুল আমিন। এ সময় আবুল কালাম আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে রুহুল আমিনকে গালমন্দ করে বুকে ধাক্কা দেন। এ সময় আশেপাশের নেতারা এসে রুহুল আমিনকে জড়িয়ে ধরে আবুল কালাম আজাদকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। এরপরও আবুল কালাম আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতির দিকে একাধিকবার তেড়ে আসেন। পরে সভাপতিকে অন্য কক্ষে নিয়ে যান নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় চলছে। এ ঘটনায় জেলা আ’লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ওই বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ঘুষি মেরেছেন এমপি, আবার কেউ কেউ বলছেন হাতাহাতি হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল সংসদের এলইডি ভবনে? সেখানে বৈঠকে উপস্থিত ছিল এমন কয়েকজন ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথাও বলেছেন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, শনিবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে সভার শেষ পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সাথে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাক বিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ অশ্লীল ভাষায় এমপি রাজীকে গালমন্দ করেন এবং তেড়ে যান। তখন দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে এমপি রাজী ফখরুল উপজেলা চেয়ারম্যানকে চড় দেন। এরপর বৈঠক শেষ না করেই জেলার সেক্রেটারি রৌশন আলী মাষ্টার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জেলার (উত্তরের) সভাপতি ম. রুহুল আমিন কক্ষের বাইরে গিয়ে আজাদকে বুঝিয়ে মিটিংয়ে আনতে গেলে আজাদ সভাপতি রুহুল আমিনকে গালমন্দ করে ও বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেন।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী ২১ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের আগে চার ইউনিয়নের নতুন কমিটি ঘোষণা করার তাগিদ দিয়েছিলেন কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ। সেই তাগিদের প্রেক্ষিতে আমরা কমিটি দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে বসি। এ সময় উপজেলা নেতৃবৃন্দ ইউনিয়নে নতুন কমিটির তালিকা করেন। তখন আমি আগামী সম্মেলনের কাউন্সিল লিস্ট তৈরি করতে বলার সাথে সাথে এমপি আমাকে কিল-ঘুষি মারেন। মূলত: ইউনিয়ন কমিটিতে নতুন নেতৃত্বে এমপির পছন্দের লোক ছিল না বলে আমার উপর তিনি আঘাত করেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন জানান, বৈঠকের শেষ পর্যায়ে একটা ইউনিয়ন নিয়ে তর্ক হওয়ার পরে এমপি ও উপজেলার চেয়ারম্যানের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। আমাদের সেক্রেটারী রৌশন আলী মাস্টারের একটা ঘোষণা দেন। এটা একজনের পক্ষে গেছে, একজনের বিপক্ষে গেছে। এটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির পূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ গালমন্দ করেন এমপি রাজীকে। এমনকি মারধর করতেও তেড়ে যান। তখন দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ আমাকে কয়েকবার ধাক্কা দিয়েছে এবং অশ্লীল গালমন্দ করেছে।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের ভাইস -চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম ওমানি জানান, জেলা সভাপতির সাথে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ ও তার লোকজন শুরু থেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি মেনে নিতে পারে নি। এমনকি আমরা শুনেছি তারা সম্মেলন পেছাতে চেয়েছিল। মিটিংয়ে তারা যত প্রস্তাব দিচ্ছিল এমপি রাজী সাহেব তা মেনে নিচ্ছিলেন । কারণ এমপি সাহেব চাইছিলেন সুষ্ঠু ও কোন প্রকার ভেজাল ছাড়াই উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন করতে। মিটিংয়ের শেষ পর্যায়ে চেয়ারম্যান আজাদ সাহেবরা একটা প্রস্তাব করে। যা পরে করার কথা ছিল। তখন এমপি সাহেব বলেন, এটা পরের বিষয়, এখন হবে না। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ দাঁড়িয়ে যান। তখন এমপি সাহেবের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে এমপি রাজীকে গালমন্দ শুরু করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ। এমপিকে মারার জন্য এগিয়ে আসলে আজাদকে চড় মারেন এমপি রাজী। এ সময় আজাদও এমপি সাহেবের উপর চড়াও হন। আমরা তাৎক্ষনিক দুইজনকে সরিয়ে নেই। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জেলার (উত্তরের) সভাপতি ম. রুহুল আমিন কক্ষের বাইরে গিয়ে আজাদকে বুঝিয়ে মিটিংয়ে আনতে যান। তখন আজাদ সভাপতি রুহুল আমিনকে গালমন্দ করে ও বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেন। এর আগে সম্প্রতি এক ইউনিয়ন পরিষদের সম্মেলনের দিনে এমপি রাজীর গাড়ি আটকিয়ে আজাদ তার দলবল নিয়ে এমপিকে অনেক গালমন্দ করেছে। এমপির গাড়িকে লাথি দিয়েছিল। তখন এমপি রাজী ভদ্রতার খাতিরে, দলের স্বার্থে চুপ করেছিলেন। তার লোকজন কোন সংঘর্ষে জড়ায়নি।
দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মাষ্টার জানান, জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি বৈঠকে এলাহাবাদের কমিটি নিয়ে জেলার সভাপতি রুহুল আমিন বলেন,আগামীকাল কমিটি ঘোষণা করে দেয়া হবে। সভাপতির এই নির্দেশ অমান্য করে তখন জেলার সেক্রেটারি রৌশন আলী মাষ্টার হঠাৎ করে কমিটি ঘোষণা করে দেন। তখন এমপি রাজী বলেন- আপনি সভাপতির নির্দেশ অমান্য করে কমিটি কেন ঘোষণা করলেন ? তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ উত্তেজিত আচরণ শুরু করে । এমন সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদকে এমপি রাজী বলেন –তুমি এমন করছো কেন ? এ কথা বলার পর এমপি রাজীকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ। এরপর দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আজাদ জেলার সভাপতিকে গালমন্দ করে কয়েকবার ধাক্কা দেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চেয়ারম্যান আজাদ নাটক করছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মত কিছুই হয়নি।
কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শিরিন সুলতানা জানান, বৈঠক ছিল উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি বিষয়ে। এই মিটিংয়ে চেয়ারম্যান আজাদ সাহেবরা ইউনিয়ন আ’লীগের কমিটি ঘোষণার জন্য শুরু থেকেই হৈচৈ করছিল। এছাড়া সম্মেলন প্রস্তুতির বিভিন্ন উপ-কমিটি পরিবর্তন করার বিষয় নিয়েও কথা বলছিল বার বার। কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন ও সহ-সভাপতি শেখ আওয়াল ভাইরা বলছিল বার বার-এটা সম্মেলন প্রস্তুতির মিটিং, এখানে ইউনিয়ন কমিটি কিভাবে ঘোষণা হবে? রবিবার এমপি সাহেব, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলার সেক্রেটারিসহ ৪ জন মিলে ঘোষণা করে দিবে। উপজেলা চেয়ারম্যান বার বার জেলার সভাপতিকে কটুক্তি করছিল। এক পর্যায়ে জেলার সেক্রেটারি কমিটি ঘোষণা করে দেয়। এমপি রাজী সাহেব তখন বলেন- এখন কেন কমিটি ঘোষণা দিলেন? তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আবার উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন এমপি সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে বলেন- এমন আচরণ করছো কেন তুমি ? এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান খারাপ গালি দেন এমপি সাহেবকে। এমপি সাহেব তখন তাকে বেয়াদব বলেন। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ এগিয়ে আসলে হাতাহাতি হয়। তখন উপজেলা চেয়ারম্যানকে চড় দেন এমপি সাহেব। এরপরে জেলার সভাপতিকেও কয়েকবার ধাক্কা দেন উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ।
এ বিষয়ে জানতে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য যে, এই ঘটনার পর দেবিদ্বার বিভিন্ন সড়কে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রর্দশন করে। এদিকে ২১ জুলাইয়ের উপজেলা সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। দেবিদ্বারজুড়ে রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ