Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থাইল্যান্ডের ডিটেনশন সেন্টার থেকে পালিয়েছে তিন উইঘুর

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ৪:৫৩ পিএম

থাইল্যান্ডের একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে পালিয়েছে তিন উইঘুর বন্দি। উইঘুরের এই তিন বাসিন্দা চীনের জিনজিয়াং থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড চলে গিয়েছিল। সেখানে তারা থাই সরকারের হাতে ধরা পড়ার পর একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি ছিল।

জিনজিয়াং প্রদেশে চীন সরকার উইঘুরদের ওপর অমানবিক নিপীড়ন ও দমন চালাচ্ছে। ওই দমন-নিপীড়ন এড়াতেই অনেকে সীমান্ত পার হয়ে থাইল্যান্ড চলে যায়। পরে তারা থাইল্যান্ড থেকে অন্য কোন দেশে বা তুরস্কে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তবে, থাইল্যান্ডে যেয়ে উইঘুরদের অনেকেই থাই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং তাদের রাখা হয় বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে। অন্যদিকে, চীন একদম শুরু থেকেই চাচ্ছে, এসব অভিবাসন প্রত্যাশী উইঘুরদের আবার দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। যদিও থাই সরকার এখনও উইঘুরদের চীনে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছে পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি থাই এনজিওর ডিরেক্টর চালিদা তাজারএনসুক। তার এনজিও থাইল্যান্ডে পালিয়ে আসা উইঘুরদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে।
চালিদা গত জুনে রেডিও ফ্রি এশিয়ার সহযোগী আরেকটি সংবাদমাধ্যম বেনারনিউজকে বলেছিলেন, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে প্রায় ১০ বছর ধরে অনেক উইঘুর বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাই এখন সরকারের উচিত তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা এবনহ তারা যেন ভালোভাবে বাকি জীবনটা কাটাতে পারে তার দিকে নজর দেওয়া এবং তাদের আর কখনওই চীনে ফেরত না পাঠানো।
তিনি আরও বলেন, থাই সরকার যদি তাদের তৃতীয় কোন দেশে অভিবাসী হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তবে তা হবে খুবই ভালো একটি কাজ। তবে চীনের সরকারের ক্রমাগত চাপের কারণে থাই সরকার তা করতে পারছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এমন সময় ডিটেনশন সেন্টার থেকে উইঘুর বন্দিরা পালিয়েছে, যার কিছুদিন আগেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো থাইল্যান্ডের সরকারের কাছে ডিটেনশন সেন্টারে থাকা উইঘুর বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এদিকে, স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে পালিয়ে যাওয়া ওই তিন উইঘুর বন্দিকে খুঁজছে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
রাত্তাপং তিয়াসুদ নামে থাই পুলিশের এক কর্নেল জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থি প্রাচুয়াপ খিরি খান নামের ওই ডিটেনশন সেন্টার থেকে ভোর হওয়ার বেশ আগেই ওই তিন বন্দি পালিয়ে যায়। পালানোর সময় লোহার গারদ কাটতে তারা খুব ধারালো কোন কিছু ব্যবহার করেছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অনেকদিন আগে থেকেই চীনে উইঘুরদের ওপর চলা নিপীড়নের প্রতিবাদ ও প্রতিকার চেয়ে আসছে। চীন দীর্ঘদিন যাবৎ উইঘুরদের ওপর অমানবিক নিপীড়ন চালাচ্ছে এবং তাদের জিংজিয়াং এর ক্যাম্পগুলোতে রেখে জোরপূর্বক নানা ধরণের কাজ করাচ্ছে।
চীনের এই আচরণের প্রতিবাদে সরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তারা সরাসরি উইঘুরদের সঙ্গে হওয়া আচরণকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে। এমনকি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর বার্ষিক মানবাধিকার সংক্রান্ত রিপোর্টেও এই দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
একজন থাই মানবাধিকার কর্মীর মন্তব্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ৫২-৫৬ জন উইঘুর বন্দি হিসেবে রয়েছে। এই বন্দিদশা শুরু হয়েছে ২০১৩ এবং ২০১৪ সাল থেকে। ওই দুই বছর প্রায় ৪৭৫ জন উইঘুর চীন থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল। আর তখন থেকেই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে উইঘুররা থাইল্যান্ডে প্রবেশ করছে।
গত সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস জানিয়েছে, প্রায় ৫২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, থাইল্যান্ডে উইঘুরদের এই লম্বা সময়ের বন্দিদশার অবসান চেয়ে থাই সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
৮ জুলাই, প্রায় একশ উইঘুর বাসিন্দাদের চীনে ফেরত পাঠানোর সপ্তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই আবেদন জানানো হয়। ওই ঘটনার আগে থাইল্যান্ড সরকার প্রায় ১৭০ জন উইঘুরকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির দেশ তুরস্কে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেসের বিবৃতি আসার আগেই প্রায় ১২টি থাই ও আন্তর্জাতিক সংগঠন থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে একটি পিটিশন দায়ের করেছে যাতে থাইল্যান্ডে থাকা উইঘুরদের আবার চীনে ফেরত না পাঠানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ