Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপ্সা গরমে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে রংপুরসহ উত্তরের জনজীবন

বেড়ে চলেছে সর্দি-জ্বরসহ নানান রোগ

রংপুর থেকে হালিম আনছারী | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ৭:৩৬ পিএম

তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপ্সা গরমে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। অব্যাহত দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে প্রাণীকূলে। বেড়ে চলেছে সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা সূর্যের দহনে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনে। বাসা-বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠন সবখানেই চলছে অস্থিরতা। শান্তি মিলছে না কোথাও। অন্তত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরেই রংপুর অঞ্চলে আবহাওয়ার তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় প্রশান্তির একমাত্র উপায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে এ অঞ্চলে।
গতকাল শনিবার রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫৭ শতাংশ।
সকালের সুর্যের আলো বিচ্ছুরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপদাহের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যায় এবং রাত অবধি তা অব্যাহত থাকে। জৈষ্ঠ মাসে শেষ এবং আষাঢ়ের শুরুর দিকে কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও গত প্রায় ২০দিন ধরে এ অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। বরং তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপসা গরমে মানুষসহ সকল প্রাণীকুল অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মানুষ, কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কাজকর্ম করতে না পারায় এসব পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরও জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। গত প্রায় ২০ দিন ধরে গোটা উত্তরাঞ্চল জুড়েই চলছে এই তীব্র দাবদাহ। ফ্যানের নিচে গিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না মানুষ। ফ্যানের বাতাশও গরম হয়ে থাকছে। কয়েকদিনের দাবদাহ আর ভ্যাপ্সা গরম অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছে না মানুষ সচ্ছল পরিবারের লোকজন। বাড়িতে থেকে ফ্যান চালিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেও ক্ষেতে-খামারে কর্মরত মানুষগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। জীবিকার তাগিদে মাঠে কাজ করতে গিয়ে হরহামেশাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রচন্ড রোদের কারনে ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে পারছে না। তীব্র রোদে গায়ে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের। একটু স্বস্তির আশায় ঘন ঘন ছুটে চলেছে গাছের নীচে।
গতকাল রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুরসহ নি¤œ ও মধ্যম আয়ের লোকজন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে বোরো ধান ক্ষেতের পরিচর্যাসহ পাটক্ষেত নিড়ানি দেওয়া, বিভিন্ন রবিশস্যের ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকরা গরমে হাস-ফাস করছেন। একদিকে প্রচন্ড দাবদাহ, অন্যদিকে জমি থেকে নির্গত গরম গ্যাসের কারনে কারো পক্ষেই জমিতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে দুপুরের পর কোন ভাবেই জমিতে নিড়ানি কিংবা বসে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে সর্দি, জ্বর ও কাশি। গ্রাম কিংবা শহর কোথাও বাদ নেই। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দু-চারজন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকগন জানিয়েছেন, এমন আবহাওয়ায় জ্বর, সর্দি, চর্মরোগসহ শ্বাসকষ্ট, হিট ষ্ট্রোক ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। বর্তমানে এই অঞ্চলে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এই বৈরী আবহাওয়ায় রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তাদের মতে, এই গরমে যতটা পারা যায় ছায়ায় অবস্থান এবং বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
এদিকে তীব্র তাবদাহের কারণে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে জায়গা নেই। বেড না থাকায় ফ্লোরেও রাখা হয়েছে অসংখ্য রোগী। রোগী ও স্বজনদের ভীড়ে হাসপাতালের ভিতরে গরমের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। তাছাড়া এত রোগীর চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকগন। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুশ রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনজীবন

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ