Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমদানি কমায় স্বস্তি

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আমদানি খরচ আস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এরপর সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে তা কমতে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতির জন্য যা একটি সুখবর। সর্বশেষ মে মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে ৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের মে মাসের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। এর আগের ছয় মাসের প্রতিটিতে আমদানিতে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে।

বর্তমান অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পেক্ষাপটে আমদানি কমাকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘মঙ্গল’ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে এটারই খুব দরকার ছিল। আমদানি কমলে ডলারের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি খাতে খরচ বাড়তে থাকে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয় দেশে, যা ছিল আগের বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
আগস্টে তা এক লাফে বেড়ে ৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ৭৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে আমদানি হয় ৬ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আগের বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে বেশি ব্যয় হয় ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি হয় ৬২ দশমিক ৫২ শতাংশ; খরচ হয় ৬ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।
নভেম্বরে আমদানি ব্যয় ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। আগের বছরের নভেম্বরের চেয়ে বেশি খরচ হয় ৬৩ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে পণ্য আমদানিতে ৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসের হিসাবে আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয়; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয় ৪৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
মার্চে আগের বছরের মার্চের চেয়ে আমদানি খাতে বেশি খরচ হয় ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; আমদানি হয় ৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এপ্রিলে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয় ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সর্বশেষ মে মাসে ৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের মে মাসের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের মে মাসে ব্যয় হয়েছিল ৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি কমা এবং ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, রোববার দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপন হবে। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুসহ প্রয়োজনীয় অন্য কেনাকাটা করতে অন্যান্য বারের মতো এবারও পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সে কারণেই রেমিট্যান্সে এই উল্লম্ফন হয়েছে। ঈদের পর রেমিট্যান্সপ্রবাহ হয়তো কিছুটা কমবে, কিন্তু আমদানি ব্যয় যেভাবে কমছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই; অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।
আমদানি ব্যয় কমার তথ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলেও পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আকুর মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আকুর দেনা পরিশোধ করা হয়েছিল। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের বিল শোধ করা হয় ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নেয় সরকার। অতি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
এসব পদক্ষেপের ফলে আমদানি খরচ কমছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে গেছে; বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। এ কারণে আমদানিতে খরচ বেড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ বেশ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগের একটি আবহ তৈরি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমদানি কমায় স্বস্তি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ