Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাওয়ার হিটিং নিয়ে হাহাকার

বিশ্বকাপের ‘ছায়া অনুশলনে’ ব্যর্থ বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আরেকটি দৈন্য ব্যাটিংয়ের নিদর্শন। উইকেট ছিল সম্পূর্ণ ব্যাটিং সহায়ক। সেখানে কোনোমতে মাঝারী পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে বাংলাদেশ। এরপর বোলাররাও দারুণ কিছু করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সে লক্ষ্য। হেসেখেলেই জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন আরেকটু বড় পুঁজির অভাবটা হাড়েহাড়ে টের পায় টাইগাররা। দলে দুই-একজন পাওয়ার হিটার থাকলে হয়তো বড় হতে পারতো বাংলাদেশের ইনিংসও। দিন শেষে তাই আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় সফরকারীদের। গতপরশু রাতে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ১০ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় স্বাগতিক দলটি।
২০১৮ সালে সবশেষ সফরে টেস্ট সিরিজে হারার পর টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দলটি যেন আটকে ব্যর্থতার বৃত্তে। টেস্টে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর ২-০ ব্যবধানে হারল টি-টোয়েন্টি সিরিজ। শুধু এই ম্যাচই নয়, আগের ম্যাচগুলোতেও ভালো ব্যাটিং করতে পারেনি টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে এক সাকিব আল হাসান ছাড়া কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি। সাকিবের ব্যাটিংও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আর বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া প্রথম ম্যাচেও টাইগারদের ব্যাটিং ছিল বর্ণহীন।
সমস্যাটি পুরনো, ভোগান্তিও চলমান। তবে সামনে যখন বিশ্বকাপ এবং সেই আসর অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায়, সমস্যাটি তখন আরও বড় হয়ে ফুটে উঠছে লিটন কুমার দাসের চোখে। স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যানের ধারণা, পাওয়ার ক্রিকেট বা শক্তির জায়গায় পিছিয়ে থাকায় আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিশাল সব মাঠে ভুগতে হবে বাংলাদেশকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ শেষে লিটন কথাগুলি বলছিলেন কাইল মেয়ার্স ও নিকোলাস পুরানের ব্যাটিং প্রসঙ্গে। দল যখন চাপে, এই দুজনের ৫১ বলে ৮৫ রানের জুটি ম্যাচে গড়ে দেয় ব্যবধান। ৭ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ৩ উইকেটে ৪৭। কিন্তু‘ ১৬৪ তাড়া করে ফেলে তারা ১০ বল বাকি রেখেই। ৩৮ বলে ৫৫ করে আউট হন মেয়ার্স। অধিনায়ক পুরান ৩৯ বলে অপরাজিত ৭৪ করে দলকে জিতিয়ে তবেই ফেরেন।
আক্ষেপের ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের বোলিংয়ের ঘাটতির কথা যেমন বললেন লিটন, তেমনি কৃতিত্ব দিলেন মেয়ার্স-পুরানকেও। সেখানেই তিনি তুলে ধরলেন ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য, ‘বোলিংয়ে আমরা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে পারিনি (পরিকল্পনার)। তবে ওদেরকেও কৃতিত্ব দিতে হবে, যেভাবে ওরা ব্যাটিং করেছে, পুরান ও মেয়ার্স, খুব ভালো ভালো বলেও ওরা মেরে দিয়েছে। এই জিনিসটা ওদের প্লাস পয়েন্ট, পাওয়ার ক্রিকেট খেলে, যেটা আমরা খেলতে পারি না। এই ব্যাপারগুলি বোলারদের মাথায় কাজ করে যে একটু উনিশ-বিশ হলেই মেরে দেবে। ওরা জেনেটিক্যালি অনেক পাওয়ারপুল, যেটা আমি নই বা আমাদের দলের কেউ নয়। তারা যে কোনো সময় চাইলেই বড় মাঠে শট খেলতে পারে, ছয় মেরে দিতে পারে। আমরা বা আমাদের দলের কারও সেই সামর্থ্য নেই। আমরা ব্যাটিংয়ে সবসময় চেষ্টা করি চার মারার জন্য। আমাদের খেলায় চার বেশি হয় ওদের তুলনায়, ওরা ছয় বেশি মারে। এখানে অনেক পার্থক্য থাকে।’
এই পার্থক্য নিয়েই বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর মূল পর্বে আর কখনও কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। এবার বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হবে মূল পর্বে, চ্যালেঞ্জ তাই আরও কঠিন থাকবে। শক্তিতে পিছিয়ে থাকায় এবারও বাংলাদেশের জন্য কাজটি কঠিন হবে বলে মনে করেন লিটন, ‘ভালো ভালো দলগুলি থেকে আমরা অনেক পেছনে এখনও টি-টোয়েন্টিতে। আমাদের অনেক জায়গায় কাজ করার আছে। আমরা পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে পারি না। টি-টোয়েন্টি অনেকে বলেন স্কিলের খেলা, অনেক বলে টেকনিকের খেলা, কিš‘ আমার কাছে মনে হয়, পাওয়ার গেমও অনেক সময় দরকার পড়ে। আমার মনে হয়, এই জায়গায় আমরা অনেক পেছনে। বিশ্বকাপে আমরা যেখানে খেলব, মাঠ অনেক বড় থাকবে। সেখানে এই জিনিসটা আমাদের অনেক ভোগাবে। এখান থেকে আমরা যত ম্যাচ খেলব, উন্নতি করব, তাহলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারব বিশ্বকাপে।’
বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ আর তিনটি সিরিজ-টুর্নামেন্ট পাবে নিজেদের তৈরি করার। আগামী মাসের শুরুতে তিন ম্যাচের সিরিজ জিম্বাবুয়েতে। ওই মাসের শেষে দিকেই এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কায়। এরপর বিশ্বকাপের ঠিক আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ নিউজিল্যান্ডে, যেখানে আরেক দল পাকিস্তান। খুব শীগগিরই ব্যাটিংই উন্নতি করতে না পারলে বিশ্বকাপ ভুগতে হবে বলে মনে করেন লিটন, ‘ভালো দলগুলো থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে থাকব। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আমাদের অনেক কাজ করার আছে। আমরা পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে পারি না। অনেকে টি-টুয়েন্টিকে স্কিল, টেকনিক-ট্যাকটিকসের খেলা বললেও আমার কাছে মনে হয় পাওয়ার হিটিংটা খুব দরকার পড়ে। এই জিনিসটাতে আমরা অনেক পিছিয়ে।’ পর্যাপ্ত ম্যাচ অনুশীলনই কাক্সিক্ষত উন্নতি আনতে পারে বলে মনে করেন এ ব্যাটার, ‘বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ায় খেলব, সেখানে মাঠ অনেক বড় থাকবে। এই জিনিসটা আমাদের অনেক ভোগাবে। আমরা যত পারব অনুশীলন করব, ম্যাচ খেলব, এই জিনিসটা যত তাড়াতাড়ি উন্নতি করতে পারি, আমরা ভালো আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারব বিশ্বকাপে।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৬৩/৫ (লিটন ৪৯, এনামুল ১০, সাকিব ৫, আফিফ ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২২, সোহান ২*, মোসাদ্দেক ১০*; স্মিথ ১/৩৪, শেফার্ড ১/১৯, ওয়ালশ জুনি. ২/২৫)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৮.২ ওভারে ১৬৯/৫ (মেয়ার্স ৫৫, ব্রুকস ১২, পুরান ৭৪*, পাওয়েল ৫, আকিল ৩*; নাসুম ২/৪৪, মেহেদি ১/২১, সাকিব ১/১০, মুস্তাফিজ ০/২৭, শরিফুল ০/১৩, আফিফ ১/১০, মাহমুদউল্লাহ ০/৭)। ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী। সিরিজ : ৩ ম্যাচে উইন্ডিজ ২-০ তে জয়ী।
ম্যাচ ও সিরিজসেরা : নিকোলাস পুরান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাওয়ার হিটিং নিয়ে হাহাকার
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ