Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুতের জন্য হাহাকার এখন অনেক দেশেই

পিজিআর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক বেড়েছে। অনেক দেশেই এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। অনেক উন্নত দেশেও কিন্তু দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে।

গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে করোনার একটা অভিঘাত, তার ওপরে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। যার ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বেই যেমন তেলের দাম বেড়েছে, অনেক দেশেই এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। বিদ্যুৎ আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল; কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। ডিজেল, তেল, এনএলজির দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। কয়লা এখন পাওয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচারকার্য শুরু হয়েছিল, তাদেরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়। তাছাড়া জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকার কারণেই এই সেনাবাহিনীতে ১৯ বারের মতো ক্যু হয় এবং বহু সেনা সদস্য, সৈনিক, অফিসার মৃত্যুবরণ করেন। এমন একটা সময় ছিল, যখন অফিসারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা করা হয়েছে। অনেকের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে, পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। এ রকমও ঘটনা তখন ঘটতে থাকে একের পর এক। প্রতি রাতে বাংলাদেশে কারফিউ চলতো। মানুষের কোনও অধিকারই ছিল না। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতো না। এ রকম একটা পরিবেশ বাংলাদেশে ছিল।

সরকার প্রধান বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পঁচাত্তরে আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। ১৯৮১ সালে আমাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। অনেকটা জোর করেই দেশে ফিরতে হয়েছিল। যেখানে খুনিদের রাজত্ব, যেখানে অপরাধীদের রাজত্ব; আমি জানতাম যেকোনও সময় তারা আমাকে মারতে পারে। আমি সেটা পরোয়া করিনি। মানুষের জন্য ফিরে আসি। আসার পর থেকে আমার লক্ষ্য ছিল, একদিকে যেমন বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, পাশাপাশি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ, যেখানে আমার বাবা নিজের হাতে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী গড়ে তুলে গেছেন; সেগুলো যাতে আরও উন্নত হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পরিবহনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আগের মতো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। শুধু আমাদের দেশে না, প্রত্যেকটা দেশেই এখন জিনিসের ঘাটতি। এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু সাশ্রয় করে চলি, মিতব্যয়ী হই এবং নিজেরা নিজেদের সঞ্চয়টা বাড়াতে পারি, তাতে যেকোনও সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারই যেন সঞ্চয়মুখী হয়, যে আমরা নিজেরা কিছু করবো।

তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে কিন্তু দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশকে যাতে সে পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, এ জন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনও জলাধার যেন খালি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, প্রতিষ্ঠানভিত্তিকও যেখানে যতটুকু খালি জায়গা, যে যা পারবেন কিছু উৎপাদন করবেন। উৎপাদন করে অন্তত নিজেদের খাদ্যটা নিজেরা জোগাড় করার চেষ্টা করা, যাতে বাজারের ওপর চাপ না পড়ে। উদ্বৃত্তটা বিক্রি করে যাতে লাভবান হতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে।

করোনার সংক্রমণ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আবার একটু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে আমরা টিকা দিচ্ছি। টিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুস্টার ডোজটাও নিতে হবে। অনেকেই বুস্টার ডোজ নিচ্ছে না। সাধারণ জনগণ একটু পিছিয়ে থাকে। সেই ব্যাপারেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো, যাতে প্রত্যেকে বুস্টার ডোজটা নেয়। যাতে প্রাদুর্ভাব আর বাড়তে না পারে।

কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন না : বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবেন না। সব ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। গতকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতিটি মানুষের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কুসিক নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাসে এটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অতীতে আর দেখা যায়নি। জনগণের ভোটের অধিকার যেনো নিশ্চিত থাকে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। একদিকে ভোটের অধিকার অপরদিকে বাঙালি জাতির সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কাজ করে গেছে।

তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের বসবাস। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই দেশ সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে যারা কুসিক নির্বাচন পরিচলানার দায়িত্বে ছিলেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনারা যারা নির্বাচিত হয়েছেন মনে রাখবেন, আপনারা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণ ভোট দিয়ে আপনাদের নির্বাচিত করেছে। যারা ভোট দিয়ে আর যারা আপনাদের ভোট দেয়নি আপনারা সবার প্রতিনিধি। আপনাদের দায়িত্ব প্রতিটি এলাকায় উন্নয়ন হয়, প্রতিটি মানুষের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয় সেলক্ষ্যে কাজ করা।

এ অনুষ্ঠানে কুসিকের নব নির্বাচিত মেয়র আরফানু হক রিফাতকে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নব নির্বাচিত ৩৬ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের শপথ পড়ান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।



 

Show all comments
  • Khayrul Hasan ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
    অচিরেই একটা সমাধান আসবে। বিদ্যুৎ ছাড়াই কেমন করে জীবন টা চলবে তার সমাধান। চোখ রাখুন সংসদ অধিবেশনে।
    Total Reply(0) Reply
  • Multazim Bin Rihan ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
    রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানী কেনা উচিত ছিলো আমাদের, আমেরিকাকে কেন যে সরকার এর ভয় পাই। ,ভারত আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্র তারা ঠিকই রাশিয়া থেকে জ্বালানী কিনে সুযোগের সৎ ব্যবহার করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhetur Rahman ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:০৪ এএম says : 0
    শ্রীলঙ্কাকে অতিক্রম করতে আমাদের সম্ভবত খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • রেদওয়ানূর রব সাদী ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
    বিদ্যুৎ দিয়ে আলো না জ্বালিয়ে আরও যেসব সহজলভ্য আছে সেটা দিয়ে জ্বালালেই হয়! আমরা তো সেভাবেই জ্বালাই৷ মোমবাতি দিয়ে খুব সুন্দর আলো জ্বালানো যায়৷ সেভাবে আমরা করি, সেভাবে করা যায়৷
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Hasnat ৬ জুলাই, ২০২২, ২:৫৩ এএম says : 0
    পৃথিবীর অনেক দেশে বিদ্যুত না থাকার কারন যুদ্ধ হলেও আমাদের দেশের কারন গাফিলতি। গ্যাস সংকট কিছুটা দায়ী হলেও সঠিক নির্দেশনা ও ব্যবস্হাপনার অভাব। LNG আমদানী সময়মতো হয়নি কেন। ডেলিভারী ও সরবরাহ ব্যবস্হা আজও উন্নত নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Maksud Reza ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
    দেশের সকল আবাসিক গ্যাস সংযোগ অবিলম্বে বিচ্ছিন্ন করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Moniruzzaman Sarkar ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:০৯ এএম says : 0
    এখন আর উচ্চাভিলাসী কুইক রেন্টাল চলছে না,সবে তো শুরু, যত টাকা বিদেশি পাওয়ার উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে ভাড়া বাবদ দেয়া হয় ঐ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় কেন্দ্র গুলো সংস্কার কাজ না করে, বসিয়ে রেখে অকেজো করা হয়েছে। আমলা নামক হুতোম পেচা বসে আছে ডালে ডালে। ভালো মন্দ দেখার কেউ নেই।এখন এটার মাসুল দিবে জনগণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Gazzali ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:১০ এএম says : 0
    সারা বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং সারা বছর সঠিকভাবে বিদ্যুৎ থাকার পরও কিছু নিমকহারাম মানুষ সরকারকে ধন্যবাদ জানাইনি বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনি। আর এখন একটু লোডশেডিং হচ্ছে তাতেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Naser Babul ৬ জুলাই, ২০২২, ৬:১১ এএম says : 0
    জানিনা,এদেশের মানুষের জন্য কী নাজেহাল পরিণতি অপেক্ষা করছে!হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ