Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি অফিসের বিরুদ্ধে খোঁজ না রাখার অভিযোগ

আখ চাষে লাখপতি সাটুরিয়ার কৃষক

সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হলদে রঙের সোনালি আখ এবার চাষিদের স্বর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। যে সকল চাষি এবার হলুদ রঙের গ্যান্ডারি (চিবিয়ে খাওয়ার আখ) আবাদ করেছেন তারা সকলে হয়েছেন লাভবান ও লাখপতি। কিন্তু সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আখ চাষের ভালো পরামর্শ ও সরকারি বীজ বা সার সরবরাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। অনেক আখ চাষি অভিযোগ করেছেন, কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করলেও একদিনের জন্যেও কোনো কৃষি কর্মকর্তাকে তারা মাঠে পাননি। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বম্বাই, গেন্ডারী, মিশ্রি দানা, চায়না বোম্বাই, লাল দানা জাতের আখ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে এ বছর স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষকরা। অল্পপুঁজি এবং আখ চাষের সাথে মিশ্র ফসল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়াতে উপজেলায় দিন দিন এ আখ চাষ বেড়েই চলছে। সাটুরিয়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, উপজেলায় বর্তমানে আখের আবাদ হয়েছে ৪ হেক্টর জমিতে, আখ চাষ চলমান আরো জমিতে আখের চারা রোপণ করা হচ্ছে। আবাদ বাড়ছে দিন দিন। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই আখ চাষ হলেও সাটুরিয়া সদর ইউনিয়নের চর সাটুরিয়া, রাধানগর ও পাড়াগ্রামে সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সাটুরিয়া উপজেলার অনেক চাষি আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হলে অন্যরা তা দেখে দেখেও নিজেরা চাষ করে নিজেরদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সফল হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করলেও একদিনের জন্যও কোনো কৃষি কর্মকর্তাকে তারা মাঠে পাননি। পাননি ভালো পরামর্শ ও সরকারি বীজ বা সার। সাটুরিয়া উপজেলার সদরের পাড়াগ্রাম ও রাধানগর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত জমি থেকে আখ কাটতে। এখান থেকে কাটা আখ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। আর বাকিগুলো সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল আখের আড়তে নেয়ার পর হয় বিক্রি। রাধানগরেব আখ চাষি ইউসুফ আলী জানান, ১৭০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। তিনিসহ আরো ৪ শ্রমিক শুধুমাত্র আখ কাটতে কাজ করছে জমিতে। জমিতে চাষ করা হয়েছে বম্বাই, গেন্ডারী, মিশ্রিদানা, চায়না বোম্বাই, লাল দানা ৫ প্রকারের আখ। তিনি ১৭০ শতাংশ জমিতে কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করে আসছে, আখের চারা বোনার ৪/৬ মাস পর এ আখ বিক্রির উপযোগী হয়। এর মধ্যে আখের চারার মধ্যেই মুসুরি ডাল ও মুলা আখের সাথে মিশ্র চাষ করে সে। আখের সাথে ৫০ হাজার টাকার মুসুরি ডাল ও মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে আগাম মুলা চাষ করে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করছেন। এক মৌসুমে আখ চাষে প্রতি শতাংশে খরচ হয় ১ হাজার টাকা। তার হিসাব অনুয়ায়ী ১৭০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করে খরচ হয় এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছে ৫ লাখ টাকা আরো প্রায় ৩ লাখ টাকার আখ জমিতে রয়েছে। চর সাটুরিয়ার আখ চাষি জাহানারা বেগম জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করছেন। নিজের জমি নেই স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে পরের জমি বর্গা নিয়ে এবছর ৪৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। অন্য বারের তুলনায় লাভের পরিমাণ এবার বেশি। আখ চাষি আবুল হোসেন জানান, তিনি ২২ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। ফলন হয়েছে ভালো খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার আখ বিক্রি হয়েছে। আরো  লাখ টাকার আখ জমিতে রয়েছে। আখ চাষি জাহানারা বেগম, ইউসুফ আলী, আবুল হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে আখ চাষ করলেও কোনোদিনই উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা তাদের আখ চাষের পরামর্শ দেননি। আখে পোকা ধরলে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই কীটনাশক কিনে তা প্রয়োগ করে তারা। সরকারি বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে কৃষকরা। আখ বিক্রেতা মনির হোসেন জানান, সব থেকে বেশি দাম বম্বাই, গেন্ডারী, মিশ্রি দানা আখের। প্রতিটি আখ ৫০/৮০ টাকা করে। আর চায়না বোম্বাই, লাল দানা আখ বিক্রি করা হয় ২৫/৪৫ টাকা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আখ

১ জুলাই, ২০২২
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
৩ জানুয়ারি, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ