Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টিনের চালে আশ্রয় : বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, কেউ জানে না কারো খবর

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২২, ১:২১ পিএম | আপডেট : ৩:১৮ পিএম, ১৮ জুন, ২০২২

সিলেট-সুনামগঞ্জ, গত এক মাসের ব্যবধানে দুটো বড় বন্যায় প্রায় শতভাগ উদবাস্তু পুরো সিলেট, সুনামগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ। ভেঙে গেছে হাওড়ের সুরক্ষা বাধ। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুতের গ্রিড, সাবস্টেশন, স্কুল-কলেজ, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। প্রায় বিচ্ছিন্ন পুরো জনপদ। কেউ জানে না কারো খবর। ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে বন্যা কবলিত এলাকায়।

এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রে বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় পুরো সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

আবহাওয়াবিদরা জানান, মেঘালয়ের বৃষ্টির পানি এসে সিলেট বিভাগে বড় বন্যা সৃষ্টি করেছে। এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। সবচেয়ে বেশি খারপ অবস্থা সুনামগঞ্জে।

প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জ শহর পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখানকার ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে।

বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের আট উপজেলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার এক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন বলেন, বন্যার কারণে পরিবার নিয়ে বাড়ির ছাদে আছি। আমাদের এলাকায় প্রতিটা ঘরবাড়ি পানির নিচে। কোনো কোনো ঘরবাড়ির চালের ওপর দিয়ে পানি যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষের একটু আশ্রয় নেওয়ার জায়গাও নাই। গবাদিপশু, হাঁস মুরগি সব পানিতে ভেসে যাচ্ছে। মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করার আকুতি জানান তিনি।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারের বিষয়ে এখন বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলা শহরের সব রাস্তায় পানি। কোথাও বুক সমান পানি এবং কোথাও তার চেয়েও বেশি পানি। সুনামগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগের হাইওয়েগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, তার কার্যালয়সহ সরকারি সব অফিস এবং বেসরকারি অনেক ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিলেট থেকে রাইজিংবিডির প্রতিনিধি নূর আহমেদ জানান, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছে পানি চলে আসায় ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, বন্যায় লাখ লাখ মানুষ আটকা পড়েছে। রাস্তাঘাট সব জায়গায় এতটাই পানি যে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। আর পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। অনেকে ঘরের চালের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত তিন দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার ৯৭২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। কারণ সেসব এলাকায় বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত দেশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ