Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৩ বছরের তীব্র খরায় চিলি, হ্রদ পরিণত মরুভূমিতে, শুকিয়ে মরছে মাছ-প্রাণী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২২, ৬:৩৮ পিএম

১৩ বছরের ঐতিহাসিক তীব্র খরার কবলে দক্ষিণ আমেরিকার চিলি। এই দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। বিশ বছর আগেও সেখানকার ভালপারাইসো শহরের পানির প্রধান উৎস ছিল পেনুয়েলাস জলাধার। অলিম্পিকের সুইমিং পুল আকারের এই জলাধারে শহরটির জন্য পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা যেত। বর্তমানে সেখানকার মাত্র দুটি পুলে পানি আছে।
এক সময়ের এই হ্রদে এখন পানির জন্য হাহাকার। পানিশূন্য হ্রদ। ফাটলযুক্ত মাটির বিশাল বিস্তৃতি। আর তাতে পড়ে আছে মরে যাওয়া মাছের কঙ্কাল। পানির জন্য মরিয়া হয়ে ছুটছে প্রাণীকূল। মারাও পড়ছে।
পেনুয়েলাস জলাধারের কাছের বাসিন্দা ৫৪ বছর বয়সী আমান্ডা ক্যারাসকো সেখানে সারিবদ্ধ হয়ে মানুষের মাছ ধরার দৃশ্য স্মরণ করে বলেন, ‘আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে পানির জন্য প্রার্থনা করছি। আমি এমন পরিস্থিতি কখনই দেখিনি। এখানে অতীতেও পানি কমে গিয়েছিল, কিন্তু এখনকার মতো নয়।’
ভালপারাইসোতে পানির সরবরাহকারী কোম্পানি এসভালের মহাব্যবস্থাপক জোসে লুইস মুরিলো বলেন, ‘জলাধারে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। শীতকালে এক সময় পানির নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল এই জলাধার। কিন্তু সেখানে এখন পানির স্তর ঐতিহাসিক নিচুতে নেমেছে।’
তিনি বলেন, মূলত আমাদের এখন যা আছে তা কেবল একটি জলাশয়। শহরটি এখন নদীর ওপর নির্ভরশীল। কয়েক দশক আগেও পেনুয়েলাস জলাধারটি বৃহত্তর ভালপারাইসোর পানির একমাত্র উৎস ছিল। কিন্তু এখন সেখানে পানি নেই। এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চিলির এই জলাধারে প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। সাধারণত শীতকালে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ চিলিতে বৃষ্টিপাত ঝরায়। এ সময় জলাধারগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে, আন্দিজ পর্বতমালা ঢেকে যায় তুষারের চাদরে।
কিন্তু চিলির উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্রের উষ্ণতা বাড়ছে। যা ঝড়ের আগমন ঠেকিয়ে দেয়। সমুদ্রের তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতের ওপর বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে চিলির জলবায়ু সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকার ওজন স্তরের ক্ষয় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ আবহাওয়ার বৈরী ধরনকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। যা সামুদ্রিক ঝড়কে চিলি থেকে দূরে ঠেলে দেয় বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
চিলির সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড রিজিলিয়েন্সের গবেষক ডানকান ক্রিস্টি বলেন, ৪০০ বছর আগের ‘ট্রি রিং’ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানের খরা সেই সময় কতটা বিরল ছিল। তিনি বলেন, আন্দিজ পর্বতমালাকে দেশের ‘পানির টাওয়ার’ বলা হতো। সেখানকার বরফ অনবরত গলে গেলেও তা পুনরায় পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে বসন্তে বরফ গলে যাওয়ায় নদী, জলাধার এবং জলাশয়গুলো পূর্ণ করার মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর দক্ষিণের আরেকটি শুকিয়ে যাওয়া হ্রদ লাগুনা দে অ্যাকুলিও। স্থানীয় ম্যানেজার ফ্রান্সিসকো মার্টিনেজ শত শত মানুষকে ছোট নৌকায় করে ভ্রমণ অথবা পানিতে সাঁতার কাটার জন্য সেখানে আসতে দেখেছিলেন। এখন সেখানে নৌকায় জঙ ধরেছে। অলস পড়ে আছে সেগুলো। এই হ্রদে এক সময় পানি থাকলেও তার মাঝখানে এখন ধুলোর দ্বীপ তৈরি হয়েছে।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে কোনও পানি নেই। এটি এখন একদম মরুভূমি। প্রাণীগুলো মারা যাচ্ছে, এখানে আর কিছুই করার নেই।’ সূত্র: রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন