পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, র্যাবের উপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হলে মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ দু’টো বিষয় নিশ্চিত হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য তথা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে আমরা প্রকাশ্যে এবং গোপনে কথা বলে থাকি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এখানে কোনও ছাড়া দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণমাধ্যম ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং নতুন অর্থনৈতিক জোট নিয়েও সেখানে খোলামেলা কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য এই বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের প্রতিটি অপারেশনে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার তাগিদ দেন।
সরকারে কঠোর নজরদারিতে বিপদ জেনেও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে পিটার হাস বলেন, এ দেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং অন্যান্য আইন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।
ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, জো বাইডেন প্রশাসন তথা যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসির মূল বিষয় হচ্ছে বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ পিলার। এসব ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে কোনো আপস নয় এবং কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। র্যাবের ওপর অভিযোগের সুরাহায় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা ও বাহিনীটিকে জবাবদিহিতায় আনা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। আমরা র্যাবকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কার্যকর বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই। তবে তাদের মৌলিক মানবাধিকারও মেনে চলতে হবে। মূলত আমরা দুটি জিনিস চাই; একটি হচ্ছে র্যাবের দায়বদ্ধতা ও আরেকটি সংস্কার। দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হলে অপরাধীরা পার পাবে না এবং সংস্কারের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নত করা সম্ভব হবে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এমন নয় যে, আমরা একটি তালিকা দিলাম কী করতে হবে। সেটির থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওই দুটি নীতিকে সমুন্নত রাখা।
বাংলাদেশে নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করে পিটার হাস বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাংলাদেশের জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের সরকার, জনগণ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, নির্বাচন কমিশন মিলে ঠিক করবে এ দেশে নির্বাচন কীভাবে হবে। সকলে মিলেই নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করতে হবে। আমি সম্প্রতি বাংলাদেশে অবাধ ও স্বাধীন নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছি।
গণমাধ্যম মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী ২ জুন ওয়াশিংটনে দুইপক্ষের মধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ অনুষ্ঠান হবে। সেখানে শ্রম অধিকার গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়া এবং উন্নয়ন বিষয়ক তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে হলে পূর্ণাঙ্গ শ্রম অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে বরাবরের মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন দূত। তিনি বলেন, ভয়ভীতিহীন সাংবাদিকতা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় উৎসাহ দিয়ে থাকে। বিগত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভাল কোনো বন্ধু বাংলাদেশের ছিল না; আগামী ৫০ বছরেও হবে না। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছরে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে কাজ করে যাবে, যেভাবে গত ৫০ বছর কাজ করে গেছে। এ মধ্যেই ভয়ভীতিহনী সাংবাদিকতার প্রয়োজনে চলমান উদ্বেগ নিরসনে পাবলিকলি এবং প্রাইভেটলি আমরা কথাবার্তা চালিয়ে যাবো।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক সফলতা অর্জন করেছে এবং বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, আমি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে যাবো, কনসালটেশনের জন্য। সেখানে আমার বিভিন্ন জনের সঙ্গে বৈঠক হবে। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, শ্রমাধিকারসহ আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধু এবং গত ৫০ বছর ধরে যে সহযোগিতা ছিল, সেটি সামনের ৫০ বছরও অব্যাহত থাকবে।
শ্রীলঙ্কাতে চলমান সংকট এবং বাংলাদেশ একই পথে চলছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন দূত বলেন, দুই দেশের পরিস্থিতির মধ্যে কোনও মিল নেই। শ্রীলঙ্কার থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক বেশি দৃঢ়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি ঋণের পরিমাণ সন্তোষজনক। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ কম পরিমাণ ঋণ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যে ঋণ নেয়, সেটি অনেক কিছু বিবেচনা করে গ্রহণ করে। তবে, তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ নেই। তবে শ্রীলঙ্কার সমস্যা এবং বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ এক ধরনের নয়।
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈন উদ্দিন, ডিকাব সদস্য এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।