নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ম্যাচের পর ম্যাচ যায়, ইনিংসের পর ইনিংস গড়ায়। বদলায় না বাস্তবতা। ব্যাটিং ধস এখন বাংলাদেশের নিয়মিত চিত্র। গতপরশু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ ১০ উইকেটে হেরেছে মূলত তিন দফার ব্যাটিং ধসে। ম্যাচের প্রথম সকালেই টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দল ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্রেফ ২৪ রানের মধ্যে। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের অসাধারণ দুটি সেঞ্চুরি দলকে উদ্ধার করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আবার বিধ্বস্ত হয় টপ অর্ডার। এবার ৫ উইকেট নেই ৫৩ রানের মধ্যে। লিটন এবারও দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলেন। সঙ্গে পান সাকিব আল হাসানকে। কিন্তু দুজনের শতরানের জুটি শেষ হতেই যথারীতি আরেকটি ধস। শেষ দিনে ১৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের হার।
এই টেস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত বছরের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি টেস্টে খুব ভালো অবস্থানে থেকেও শেষ পর্যন্ত হারের বেদনায় পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টেই দেখা গেছে ভয়াবহ ব্যাটিং ধস। এমনকি বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে হারালেও দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে পড়ে ২৭ রানের মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৫ উইকেট পড়ে ৩৯ রানের মধ্যে। কেন বারবার এমন হচ্ছে, ম্যাচ শেষে এমন প্রশ্নের পর কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকেও দেখা গেল অসহায়। বললেন, উত্তর জানা নেই কোচ তারও।
এর কারণটা বোঝাতেই কি-না ঢাকা টেস্টের ফাঁকেই সংবাদ সম্মেলনে সাকিব মজা করে বলেছিলেন, ‘আমরা তো বিশ্বের সবচেয়ে ফিট দল, সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে আমাদেরই থাকতে হয়!’ বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার বলে বিবেচিত এই অলরাউন্ডার পরে যোগ করেছিলেন, স্কিল বা শারীরিক ঘাটতির চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বড় সমস্যা মনস্তাত্ত্বিক। শুধু সাকিব নয়, কোচ ডমিঙ্গো থেকে শুরু করে নানা সময়ে নানা জনই তুলে ধরেছেন এই দিকটি। ক্রিকেটারদের মানসিক সমস্যা সমাধানে এবার একটু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দিচ্ছে বিসিবি। শারীরিক ফিটনেসের উন্নতির জন্য ২০০৭ সালে সিলেট সেনানিবাসে ক্রিকেটারদের বুট ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল বিসিবি। সামরিক প্রশিক্ষণে ক্রিকেটারদের ফিটনেসের দারুণ উন্নতিও হয়েছিল সেবার। এবার ক্রিকেটারদের মানসিক ফিটনেসের উন্নতির জন্য সহায়তা নেওয়া হচ্ছে সামরিক বাহিনীর।
আইএসএসবি’র (ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড) মনোবিদদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের কয়েকটি সেশন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বিসিবি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের মধ্যেই একটি সেশন করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটি করা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই অন্তত দুটি সেশন করার পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস, ‘আমরা অলরেডি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আইএসএসবির সঙ্গে কথা বলেছি বিস্তারিত। সব পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে ২০ মে একটা সেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন ছেলেরা ক্লান্ত ছিল প্রচণ্ড গরমে খেলে, কারও শক্তি ছিল না। রিকভারি করাও জরুরি ছিল। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে অন্তত দুটি সেশন করানোর। গোটা দলের সঙ্গে তারা কথা বলবেন, প্রয়োজনে অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সেশনও করবেন। ক্রিকেটাররা কয়েকজন এখন দেশের বাইরে, ঢাকার বাইরে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই আমরা চেষ্টা করব। আইএসএসবি’র ওদের সঙ্গে কথা বলে সময় ঠিক করব।’
২০১১ বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় একজন মনোবিদ দলের সঙ্গে স্থায়ীভাবেই ছিলেন। পরেও নানা সময়ে মনোবিদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সেশন হয়েছে। স্থায়ী মনোবিদ রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা হয়েছে নানা সময়েই। এবার আইএসএসবি’র মনোবিদদের সহায়তা কেন নেওয়া হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করলেন জালাল ইউনুস, ‘ওখানে অনেক ভালো ভালো সাইকোলজিস্ট আছেন। তারা ক্যাডেটদের মানসিকতা নিয়ে অনেক স্টাডি করেন, বাছাই করার আগে। এটা অনেক বিশদ ব্যাপার, খুব ভালোভাবে জানেন তারা। আরেকটা বড় ব্যাপার, তারা ক্রিকেট খুব ভালোভাবে অনুসরণ করেন। প্রতিটি ক্রিকেটারকে তারা চেনেন, তাদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানেন, আমরা খুবই চমৎকৃত হয়েছি। ক্রিকেটারদের সবার প্রোফাইল দেওয়া হয়েছে তাদের কাছে। খালেদ মাহমুদ সুজন (বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর ও বিসিবি পরিচালক) ও ডা. দেবাশীষ চৌধুরি (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) গিয়ে তাদের সঙ্গে মিটিং করে এসেছে। আইএসএসবি খুবই আন্তরিকভাবে ও সানন্দে রাজি কয়েকটি সেশন করানোর জন্য।’
দুটি টেস্ট, তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে সপ্তাহখানেক পরই তিন ভাগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবে বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের যা পারফরম্যান্স, বিশেষ করে মিরপুর টেস্টে যেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ, তাতে পরের সফর নিয়ে শঙ্কার কারণ আছে যথেষ্টই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গতবারের সফরে (২০১৮ সালে) সবুজ, বাউন্সি ও গতিময় উইকেটে ৪৩ রানে অলআউট হওয়াসহ বাজেভাবে পর্যদুস্ত হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবারও একইরকম উইকেট ও কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা। সেই চ্যালেঞ্জ উৎরাতে এই মনোস্তাত্ত্বিক সেশন কতটা কাচে লাগে সেটিই দেখার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।