পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করতে হবে না ক্লাস, নেই কোন পরীক্ষা। প্রতিমাসে একটি সেমিনারে অংশ নিলেই পাওয়া যাবে পিএইচডির (ডক্টর অব ফিলোসফি) মতো ডিগ্রি। মাত্র ৩ লাখ টাকা দিলেই যেকেউ হতে পারবেন যেকোন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। দেশে অলংকারিক হলেও বিদেশে চাকরি এমনকি স্কলারশিপও পাওয়ার লোভ দেখাচ্ছে ডিগ্রি প্রদানকারীরা। আইন অনুযায়ী কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রি দিতে না পারলেও ঘরে বসেই আগ্রহীদের এই ইন্টারন্যাশনাল কালচার ইউনিভার্সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারি নিবন্ধন ছাড়াই পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু এটিই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা টাকার বিনিময়ে পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি করছেন। আর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ৫ হাজারের বেশি মানুষ। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শীঘ্রই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছাড় দেয়া হবে না ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রিধারীদেরও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বনশ্রীতে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কালচার ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়ার একই নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ হিসেবে উল্লেখ করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘরে বসে এই ডিগ্রি নিতে চাইলে ক্লাস-পরীক্ষার ঝামেলা ছাড়া শুধু প্রতিমাসে একটি সেমিনারে উপস্থিত থাকতে হবে এবং দিতে হবে তিন লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কমনওয়েলথ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে এ্যাক্রিডিটেশন পাওয়া জাতিসংঘের একটি ব্র্যান্ডেড ইউনিভার্সিটি হিসেবেই নাকি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রিন্সিপালও ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। এমফিল ডিগ্রি নিয়েছেন আরও দু’জন। ডিগ্রি নেয়ার তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদেরও নাকি ডিগ্রি দেয়া হয় এখান থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ইউনিভার্সিটিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার একই নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ শাখা, ইন্টারন্যাশনাল এ্যাক্রিডিটেশন এন্ড রিকগনিশন কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া (আইএআরসি) থেকে স্বীকৃতি এবং জাতিসংঘের ব্র্যান্ডেড ও গ্র্যান্টেড প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটটিকেও সাজানো হয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সরকারসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের লগো দিয়ে। এখান থেকে দেয়া সার্টিফিকেটেও নাকি থাকছে এসব প্রতিষ্ঠানের লগো। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটে ঢুকে দেখা যায় উপরেই রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের একটি লগো, জাতিসংঘের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট, ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক এন্ড সোসাল এ্যাফেয়ার্স, ইউনাইটেড নেশনস একাডেমিক ইমপ্যাক্ট, ইউনাইটেড নেশনস সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নলেজ প্ল্যাটফর্ম, এসআইএসএম নলেজ, ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক এডমিনিশট্রেশন নেটওয়ার্ক, ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক এন্ড কালচারাল অরগানাইজেশন, ইউনাইটেড নেশনস ডিকেইড অব এডুকেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা সিটি করপোরেশন, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক ফর ইনোভেশন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এশিয়া প্যাসিফিক কোয়ালিটি নেটওয়ার্ক, ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস এসব প্রতিষ্ঠানের লগো। ইন্টারন্যাশনাল কালচার ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট সুলতান মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনটি তাদের গ্র্যান্ডেড, কোনটির সদস্য, আবার কোন প্রতিষ্ঠানের এ্যাক্রিডিটেশন স্বীকৃত হিসেবে কাজ করছে।
পিএইচডি ডিগ্রি : পিএইচডি ডিগ্রি নিতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথমে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। ভর্তির সময় কিছু স্টাডি উপকরণ দিয়ে দেয়া হবে। সেটার উপর একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করে এক মাস পরে একটি সেমিনারে অংশ নিতে হবে। এভাবে ২৪ মাসে ২৪টি সেমিনারে অংশ নিতে হবে এবং প্রতিমাসে ১০ হাজার ৫০০ টাকা করে দিলে পাওয়া যাবে পিএইচডি ডিগ্রি। কেউ ভর্তি হতে গেলে প্রথমেই বলে দেয়া হচ্ছে এই ডিগ্রি সরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগবে। বিশেষ করে বিদেশে চাকরি বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কলারশিপের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। আর জাতিসংঘের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হলে আরও সুবিধা।
এমফিল : পিএইচডি’র মতো এমফিল ডিগ্রিও দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। এজন্য খরচ হবে এক লাখ ৬ হাজার টাকা। ভর্তির সময় দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। এরপর প্রতিমাসে ছয় হাজার ৫০০ টাকা করে। পিএইচডি’র মতো এমফিলেও প্রতিমাসে একটি করে সেমিনারে অংশ নিতে হবে। প্রথম ছয় মাস রিসার্চ মেথোডলজি ও জাতিসংঘ বিষয়ক ছয়টা সেমিনার হবে। তারপর রিসার্চে চলে যেতে হবে। প্রতিমাসে অগ্রগতি রিপোর্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করে দিতে হবে।
পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি প্যানেল রয়েছে। যারা সেমিনারগুলোতে করণীয় সম্পর্কে লেকচার দেবেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কালচার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তাদের প্রেজেন্টেশনগুলো দেখে ডিগ্রি প্রদান করবেন।
এরআগে পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রির জন্য রাজধানীতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি করান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সাড়ে ৩ লাখ টাকায় এই ডিগ্রি দিয়েছেন বেশ কয়েকজনকে। আমেরিকান একটি ইউনিভার্সিটির নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশ স্ট্যাডি নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া এমফিল, পিএইচডি, অনার্স, মাস্টার্সসহ ৭ ধরনের ডিগ্রি বিক্রি করে। তাদের কাছ থেকে ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা পেশা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছেন অনেকেই। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা এবং মালিক সেলিম ভূঁইয়াকে গ্রেফতারও করা হয়। তবে পরবর্তীতে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।
কালচার ইউনিভার্সিটির দেয়া ডিগ্রি বৈধ নয় স্বীকার করে সুলতান মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে এই ধরনের ডিগ্রির বৈধতা নেই। তবে বিদেশে জাতিসংঘ স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটা কাজে লাগে। তিনি বলেন, এই ডিগ্রি তো প্রফেশনাল কোন কাজে আসে না। এটা অলংকারিক হিসেবে কেউ নিতে চাইলে নিতে পারেন। সরকারের অনুমোদন না নিয়ে ডিগ্রি বিক্রির ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অনুমোদনের জন্য ২০১১ সাল থেকে ঘুরছি। তবে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ঢাকা সিটি করপোরেশন তাদের অনুমোদন দিয়েছে। ইউজিসি’র অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার আইএআরসিও ইউজিসি’র মতোই একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের স্বীকৃতি পেয়েছি। তার ওই প্রতিষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক কাজ করছেন বলেও তিনি স্বীকার করেন। তবে তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
এ বিষয়ে ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, এখন বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে কিছু এলাকায় পিএইচডির নামে ভুয়া ডিগ্রি বিক্রি করছে। এসব তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অধীনে না, তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।