Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাল স্ট্যাম্পে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

বৈধ ভেন্ডারের অবৈধ জাল স্ট্যাম্পের কারবার : গ্রেফতার চার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাজধানীর আশেপাশের এলাকায় জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বৈধ-অবৈধ ভেন্ডারদের মাধ্যমে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অপরদিকে জনসাধারণ এসব জাল স্ট্যাম্প কিনে ভোগান্তিতে পড়ছেন। গত শুক্রবার রাতে মতিঝিল এলাকায় এনএসআই ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রেভেনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি তৈরি চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

চক্রের মূলহোতা ফরমান আলী সরকারসহ (৬০) ও তার সঙ্গীরা হলেন- তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) এবং মো. রাসেল (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন জাল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এছাড়া উদ্ধার করা হয় কার্টিজ পেপার ৫ হাজারটি, মনিটর ১টি, সিপিইউ ১টি, প্রিন্টার ১টি এবং নগদ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা।
গতকাল কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সম্প্রতি র‌্যাব-৩ ও এনএসআই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অধিক লাভের আশায় জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করে আসছিল। উদ্ধার করা স্ট্যাপের বিষয়ে তারা কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখানো ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা ফরমান আলী সরকার কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাসের পর ১৯৯৩ সালে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় জড়িত হন।
একই অপরাধে ২০১৭ সালেও পল্টন থানায় ফরমান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিআইডি। ওই মামলায় তিনি কারাভোগ করেন। জামিনে বেরিয়ে আবারো একই অপরাধে জড়ান। গ্রেফতারের সময় তিনি নিজেকে ভেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিলেও জব্দ সব স্ট্যাম্প সম্পর্কে রেজিস্টারপত্রে সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তুহিন খান অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করতে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিন-চার বছর ধরে তিনি এ প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। আশরাফুল ইসলাম আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত দুই বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। আর রাসেল অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করে আসছিলেন। তিনিও তিন/চার বছর ধরে এ প্রতারণা ও জাল জালিয়াতিতে জড়িত। রাসেলের নামে রাজধানীর পল্টন থানায় ২০১২ সালের একটি অস্ত্র আইন ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে।
র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, সরকারিভাবে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড গাজীপুর থেকে সব স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার বিধান প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু চক্রটি অবৈধভাবে সব ধরনের জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প তৈরি, মজুত ও বিক্রি করে আসছিল। জব্দ করা স্ট্যাম্পগুলোর কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয়। এগুলো ছিদ্রবিহীন এবং পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্ট্যাম্পের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈধ ভেন্ডরদের মধ্যে অনেকে বৈধতার সুযোগ নিয়ে আসল স্ট্যাম্পের সঙ্গে নকল বা জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করছেন। তালিকা ধরে জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। কয়েকটি স্থানে জালিয়াতি চক্রের একটি গ্রুপ জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ