নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৭ম স্থানে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। তবে দলগত অর্জনকে ছাপিয়ে ওই আসরে ব্যক্তিগত অর্জনে এনামুল হক বিজয়ের হাত ধরেই গর্বিত অধ্যায় রচিত হয়েছে। আইসিসি’র প্রথম কোন আসরে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হিসেবে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান তিনিই (২ সেঞ্চুরি, ১ ফিফটিতে ৩৬৫ রান)! সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালের অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মুকুটটাও ছিল আর এক বাংলাদেশির। প্লেট চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের সেই আসরে সবচেয়ে বড় সান্ত¦নার উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিলেন সাদমান অনীক, সর্বোচ্চ ৪০৬ রান করে (১ সেঞ্চুরি, ২ ফিফটি)। তবে ১৯৯৮ সাল থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নিয়মিত বাংলাদেশের সেরা সাফল্য (৩য়) শুধু গতকাল শেষ হয়ে যাওয়া আসর থেকেই অর্জিত হয়নি, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টূর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারটা এবারই প্রথম পেয়েছে কোন বাংলাদেশি। আসরে সর্বোচ্চ ৪২০ রান করে ইংলিশ ব্যাটসম্যান বার্নহাম কিংবা সর্বাধিক ১৫ উইকেটে নামিবিয়ার বোলার কোয়েজের কেউ নন, অল রাউন্ড পারফরমেন্সে ২৪২ রান (গড় ৬০.৫০) এবং ১২ উইকেটে (গড় ১৭.৬৬) টূর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তার ক্যাপ্টেনসিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য, এবং প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি’র কোন আসরে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারÑএমন গর্বিত ইতিহাসই রচনা করেছেন অফ স্পিন অল রাউন্ডার মিরাজ।
২ দিন আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের নেপথ্যে তার অল রাউন্ড পারফরমেন্স (৩/২৮ ও ৫৩ রান)। যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের এই নায়ক স্থান নির্ধারণী ম্যাচে অমন পারফরমেন্সে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। টানা ৪ ইনিংসে ফিফটিতে (স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১, নেপালের বিপক্ষে ৫৫ নট আউট, ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে ৬০’র পর শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং ৫৩) নুতন রেকর্ড তৈরি করে নিজেকে তুলেছেন অনেক উচ্চতায়। সেমিতে ওয়েস্টইন্ডিজের কাছে হারের কষ্টটা বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমীদের কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দিতে পেরেছেন মিরাজ টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কারে বিবেচিত হয়ে।
এমন স্বীকৃতিতে উচ্ছ¡সিত মিরাজ। নিজের এই অর্জনকে দেশের অর্জন মনে করছেন তিনিÑ ‘এখানে ১৬টি দল খেলেছে। আর এখানে আমি সেরার পুরস্কার পেয়েছি। এটা শুধু আমার জন্য শুধু নয়, এটা পুরো দেশের অর্জন। বিশ্বকাপের মতো আসরে ভালো খেলাটা অনেক আনন্দের ব্যাপার। পুরো বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছে এবং প্রতিদিনই উন্নতি করেছে। এটা তাই খুব আনন্দের বিষয়।’
২০০৬ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অল রাউন্ড পারফরমেন্স করে (১৫০ রান ও ৭ উইকেট) সাকিবকে খুব বেশিদিন করতে হয়নি অপেক্ষা। সেই বছরেই গায়ে উঠেছে তার জার্সি। এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই আইসিসি’র সেরা অল রাউন্ডারের স্বীকৃতি পেয়েছেন ওই বাঁ হাতি। সাকিবের মতো সেরা অল রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার সংকল্প মিরাজেরও। তার জন্য নিজের লক্ষ্যটাও করেছেন নির্দিষ্টÑ ‘এই পুরস্কারে আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত। তবে আমার লক্ষ্য অনেক বড়। হতে চাই সেরা অল রাউন্ডার। আমার ভবিষ্যত লক্ষ্য পরবর্তী বিশ্বকাপ। ভবিষ্যতে খেলতে চাই জাতীয় দলে। তার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫১ ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরমেন্সে আল শাহরিয়ার রোকন, মেহরাব অপি, আশরাফুল, আফতাব, নাফিস ইকবাল, রাজীব মেহরাব জুনিয়র, তামীম, সাকিব, রুবেল, রুম্মান, মুমিনুল, বিজয়, লিটন দাস, তাসকিন, মুস্তাফিজুরদের জাতীয় দলে ঢুকতে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়নি। তবে পরিণত ক্রিকেটার হয়েই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে পরতে চান মিরাজÑ ‘এখন তো অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় শেষ করলাম। এখান আমার নিজের চিন্তা থাকতে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা। সবার স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন থাকে। আমারও আছে। তবে জাতীয় দলে খেলার জন্য পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমার সামনে অনেক সময় আছে। এ সময়টা আমি কাজে লাগিয়ে পরিপূর্ণ হতে চাই। আমি নিজেকে আরো পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চাই।’
আসর সেরার পুরস্কারে নিজের দায়িত্বটা গেছে বেড়ে মিরাজের। কারণ, দৃষ্টিটা যে এখন তার আকাশ ছোঁয়ারÑ ‘অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে দেশের মানুষ আমাদের খেলা দেখেছে। আমার প্রতি সবাই প্রত্যাশা করছে। আমাদের এখন তাই আরো ভালো খেলতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক দূরে যেতে চাই। বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে চাই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।