Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুগ্ধতা ছড়ানো মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

লড়াই চলছিল দুজনের মধ্যে। তামিম ইকবাল নাকি মুশফিকুর রহিম? কে আগে দেশের হয়ে টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছুবেন তা নিয়ে ছিল কৌতূহল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে মুশফিকই আগে স্পর্শ করলেন পাঁচ হাজার। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে পাঁচ হাজারে যেতে ১৫ রান দূরে ছিলেন মুশফিক, তামিম দূরে ছিলেন ১৯ রানে। দুজনই অপরাজিত থাকলেও পেশির টানে আগের দিন বেরিয়ে যাওয়ায় ক্রিজে ছিলেন না তামিম। মুশফিকের সুযোগ তাই ছিল বেশি। বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটার সেই সুযোগটা কাজে লাগান সহজে। বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৫৩ রান নিয়ে খেলতে নামেন তিনি। বৃষ্টিতে ভেজা মাঠে খেলা শুরু হতে হয় দেরি।
আগের দিনের ছন্দ রেখে এদিনও খেলতে থাকেন সাবলীলভাবে। কোন রকম তাড়াহুড়ো না করে এগোন ধীরলয়ে। প্রথম আধঘণ্টা নিয়েছিলেন স্রেফ ৫ রান। পরে লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে সুইপ করে মারেন বাউন্ডারি। এদিন ১৫তম রান নেন ৪৮ বলে। আসিতা ফার্নান্দোর লেগ স্টাম্পের বাইরের শরীর তাক করা বল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন মুশফিকক। কিন্তু বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে যায় পেছন দিকে। দুই রান নিয়ে হালকা ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন মুশফিক।
২০০৫ সালে ১৭ বছর বয়েসে টেস্ট ক্রিকেটে পা পড়ে মুশফিকের। অভিষেকের পর ৮১তম টেস্টে ১৪৯ ইনিংস ব্যাট করে পাঁচ হাজার রান করলেন তিনি। মাইলফলকে পৌঁছা পর্যন্ত তার ছিল ২৬ ফিফটি আর ৭ সেঞ্চুরি। ৭ সেঞ্চুরির তিনটাকেই ডাবল সেঞ্চুরি পর্যন্ত নিতে পেরেছেন মুশফিক। মুশফিকের চেয়ে ১৫ টেস্ট কম খেলেই ৫ হাজারের কিনারে আছেন তামিম। ৫ হাজারে যেতে ১০ হাজার ৬১৪ বল খেলতে হয়েছে মুশফিককে। তার চেয়ে প্রায় দুই হাজার বল কম খেলেছেন তামিম। মুশফিক-তামিমের পেছনে থাকা সাকিব আল হাসানের রান এই টেস্টে নামার আগ পর্যন্ত ৪ হাজার ২৯।
বাংলাদেশের হয়ে সবার আগে এক হাজার, দুই হাজার ও তিন হাজার রান করেন হাবিবুল বাশার সুমন। চার হাজার রানে প্রথম ছিলেন তামিম। পাঁচ হাজারে মুশফিক হলেন প্রথম।
নামটা তামিমেরও হতে পারত। দুর্ভাগ্য তার, হাতের মাংসপেশির সমস্যার কারণে আগের দিন১৩৩ রান নিয়ে তামিমকে গিয়ে আসন নিতে হয়েছে ড্রেসিংরুমে। মুশফিককে টপকে কিছু সময়ের জন্য টেস্টে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান (৪৯৮১) হয়ে গিয়েছিল তামিমের। কিন্তু পাঁচ হাজারি ক্লাব দৃষ্টিসীমায় থাকলেও সেখানে পৌঁছাতে তার লাগত আরও ১৯ রান। কে জানে, চোটে পড়ে তখন মাঠ ছাড়তে না হলে প্রথম ৫০০০ রানের কীর্তিটা হয়তো তামিমই গড়তেন। তবে এদিন ব্যাটিংয়ে ফিরেও তামিম শেষ পর্যন্ত পারেননি মুশফিকের পিছু পিছু সেখানে পৌঁছাতে। বরং মুশফিকই পরে পাঁচ হাজারি ক্লাবে নাম লেখানোর উপলক্ষ্যটা উদযাপন করেছেন সেঞ্চুরি দিয়ে।
এমনিতে টেস্টে ৫০০০ রান কালের পরিক্রমায় খুব বড় কোনো অর্জন হয়ে থাকে না। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেই মুশফিকের আগে ৫০০০ রানের মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন ৯৮ জন ব্যাটসম্যান। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য মুশফিকের অর্জনটা বড় হয়ে যাচ্ছে, কারণ এখানে এই উচ্চতায় তিনিই প্রথম। আসলে ক্রিকেট-বিধাতাই যেন চেয়েছেন টেস্টে প্রথম ৫০০০ রানের বরমাল্য উঠুক মুশফিকের গলায়। তিনিই পান খেলাটার প্রতি তার নিবেদনের পুরস্কার। সে কারণেই হয়তো ৫০০০ নিয়ে এত নাটকীয়তা, মুশফিককে পথ করে দিয়ে ৫০০০ রানের জন্য তামিমের সুবাসিত অপেক্ষা বেড়ে যাওয়া।
সেই সুযোগে সবার আগে মুশফিকই উঠে গেলেন পাঁচ হাজারের চূড়ায়। টেস্টের প্রতিপক্ষ যদিওবা শ্রীলঙ্কা, চট্টগ্রামে তামিমের সঙ্গে এই শ্বাসরুদ্ধকর দ্বৈরথ জিতেও মুশফিক হাততালি পেয়েছেন এবং তা পেয়েছেন স্বয়ং বন্ধুসম তামিমের কাছ থেকেও। মুশফিকের ৫০০০-এ পৌঁছানোর পর ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে তামিম হাততালিতে অভিনন্দিত করেছেন বাংলাদেশে পাঁচ হাজারের দৌড়ে তার একমাত্র অগ্রজ মুশফিককে।
একদিক দিয়ে অবশ্য তামিম মুশফিকের চেয়ে এগিয়েই থাকবেন। তিনি পাঁচ হাজারের সুবাস পাচ্ছিলেন নিজের ৬৬তম টেস্টে এসে, পাঁচ হাজারেও নিশ্চয়ই পৌঁছে যাবেন মুশফিকের চেয়ে অনেক কম টেস্ট খেলেই। কারণ, মুশফিকের এটি ৮১তম টেস্ট। টেস্ট ক্যারিয়ারও তামিমের চেয়ে মুশফিকেরই লম্বা। তামিমের টেস্ট অভিষেক যেখানে ২০০৮ সালে, মুশফিক সেখানে প্রথম টেস্ট খেলেছেন ২০০৫ সালের এই মে মাসেই। মুশফিকের সমসাময়িক অভিষিক্ত ক্রিকেটারদের মধ্যে এখনো নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন, এমন খেলোয়াড় বিশ্ব ক্রিকেটেই বিরল।
১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মুশফিক নিজেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পরিশ্রমের প্রতিমূর্তি হিসেবেই দাঁড় করিয়েছেন। তারকাখ্যাতিতে মুশফিকের চেয়ে বড় নাম বাংলাদেশে তার সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যেই আছে। কিন্তু খেলার প্রতি নিবেদন আর সততায় মুশফিকের চেয়ে এগিয়ে থাকার দাবি মনে হয় না তারাও করবেন।
মুশফিকের কাছে বিশ্রামের অপর নামও অনুশীলন, খেলা। খেলাটাকে কখনো কখনো তার জীবনের চেয়েও বেশি ভাবা নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে। এত অনুশীলন, এত পরিশ্রমে হিতে বিপরীতও দেখেন অনেকে। কিন্তু নিজের জীবন আর নিজের খেলার দর্শন ঠিক করার অধিকার তো সবার আগে মুশফিকেরই। তিনি নিজে যদি এভাবেই স্বচ্ছন্দ থাকেন, এভাবেই নিজের সেরাটা বের করে আনতে পারেন, তবে সেটাই চলুক না!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুগ্ধতা ছড়ানো মুশফিক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ