পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার ও তার ৪ সহযোগীকে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল তাদের ৩ দিন করে রিমান্ডে মঞ্জুর করেছেন ভারতের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট। পি কে হালদারকে সহ ছয়জনকে সিবিআই কোর্টে হাজির করা হলে আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্তের স্বার্থে পিকেসহ ছয়জনকে ১৭ মে পর্যন্ত ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্টের (এডি) হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। এর আগে গত শনিবার এডি পিকে হালদারের গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করে। পি কে হালদারের গ্রেফতারের খবরের পর এক প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে দুদক।
পিকে হালদারের গ্রেফতারের সংবাদে তোলপার চললেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর কোনো খবর নেই। পিকে হালদারের ডানহাত ছিল এস কে সুর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি ও বিতর্ক হচ্ছে। নেটিজেনরা বলছেন, পিকে হালদারকে ভারতে গ্রেফতার ভাল কথা। এস কে সুরকে এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন তা রহস্যজনক। কয়েকদিন আগে এস কে সুর চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। ওই পর্যন্তই!
পিকে হালদারের ব্যাপারে দুদক কমিশনার বলেন, পিকে হালদার যত বড়ই প্রতারক ও আত্মসাৎকারী হোক না কেন, একদিন তাকে ধরা পড়তেই হবে। আইনের হাত অনেক লম্বা। দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার হবে এখন তার। আর সেই বিচারে সাজা হলে, সেটিও ভোগ করতে হবে পিকে হালদারকে। এর আগে পিকে হালদারকে গ্রেফতারের খবরে শনিবার এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমেকে জানান, পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, পিকেকে আইনের মুখোমুখি করতে যত দ্রুত সম্ভব ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করা হবে না। স্বল্প সময়ের মধ্যে দুই দেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত আনার পদক্ষেপ নেয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে আনার চেষ্টা করা হবে।
পিকে হালদারের গ্রেপ্তারে বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পিকে হালদারকে গ্রেফতারের জন্য এর আগে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে দুদক। এরপর তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্টও জারি হয়। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে কিছু তথ্য চাওয়া হলে দুদক থেকে সেগুলো দেয়া হয়।
সূত্র মতে, হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার। যিনি পি কে হালদার নামে পরিচিত। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিংসহ চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাত করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা শেষে দীর্ঘদিন থেকে ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন পি কে হালদার। পরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের অনুরোধে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (এডি) অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারকে গ্রেফতার করে।
এদিকে পিকে হালদারের গ্রেফতারের সংবাদে আতঙ্কে আছেন ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাতে সহায়তাকারী দুদকের তদন্তে থাকা ৮৩ ব্যক্তি। এদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। এই দু’জনই পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির অন্যতম ক্ষমতার উৎস ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থেকে এভাবে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও সাহায্য করতেন এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলম। দুদকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতে জড়িত ৮৩ জনের অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে জব্দও করেছে দুদক।
পি কে হালদার ভারতে গ্রেফতার হলেও তার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে গ্রেফতার করে অর্থ উদ্ধারের কথা জানিছেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা। এমনকি এর আগে এই দু’জনকে গ্রেফতার না করায় বিস্ময়ও প্রকাশ করেছিল উচ্চ আদালত। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ওই সময়ে দুদকের কাছে জানতে চেয়ে বলেন, এস কে সুর ও শাহ আলমের নাম বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে। তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, দুদকের চিঠির ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে। বিচারপতি দুদকের আইনজীবীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, গ্রেফতার করছেন না কেন? আপনারা পদক্ষেপ না নিলে আদেশ দিতে বাধ্য হব। আগে তাদের ধরেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে মেহমানদারি করতে পারেন না। তাদের অবশ্যই কারাগারে নিতে হবে। পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল ইসলামের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এ দুজনের ঘুষ নেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। সেই অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে তাকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২-এর দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পিকে’র এতো বড় জালিয়াতিতে মুখ্য সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি দুদক বা বিএফআইইউ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এস কে সুর চৌধুরী শুধু পে কে হালদারের জালিয়াতিতে সহায়তা করেছেন তা নয়। গত প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে যত টাকা পাচার হয়েছে তার অন্যতম সহযোগী। ভারত, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে তার অঢেল সম্পদ রয়েছে। পেশায় গৃহিনী হলেও স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগের তথ্য গোপন করে পৌনে দুই কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দেয়ারও অভিযোগ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর কর ফাঁকি দিতে তারা মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। মেয়ের অ্যাকাউন্টে তারা বিশাল অঙ্কের লেনদেন করেছেন।
এ ছাড়া স্ত্রী সুপর্ণার দেয়া তথ্যতেই সাড়ে তিন কেজির বেশি স্বর্ণ থাকার তথ্য উঠে এসেছে। বাস্তবে তার কয়েকগুন। বিভিন্ন ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ ও অর্ধকোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এত বিপুল অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনলেও তার পুরোটা তিনি আয়কর রিটার্নে না দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছেন। কর ফাঁকির তদন্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) কাজ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক হিসাব তলব এবং ৭ জুলাই তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়। সাত মাস অনুসন্ধানের পর সিআইসি তাদের বিপুল আয়কর ফাঁকির প্রমাণ পায়।
ইতিমধ্যে কর ফাঁকি সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে পাঠিয়ে ফাঁকি দেয়া কর আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, করঅঞ্চল-১৫ এর ৩২২ সার্কেলের করদাতা এসকে সুর এবং তার স্ত্রী সুপর্ণা করঅঞ্চল-৫ এর করদাতা। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আয়কর রিটার্নে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য গোপন করেছেন। আয়কর রিটার্নে তারা যে পরিমাণ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন-ব্যাংক হিসাব তলবের পর সিআইসি তার চেয়ে অনেক বেশি বিনিয়োগের হদিস পেয়েছে। সঞ্চয়পত্রে এসকে সুরের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। সুপর্ণার ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ পাওয়া গেছে। এমনকি আয়কর ফাঁকি দিতে তারা মেয়ের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থের লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে সিআইসি।
সিআইসি’র হিসাব অনুসারে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত এসকে সুর চৌধুরী সুদসহ ৮৫ লাখ টাকার বেশি আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। সুপর্ণা সুদসহ প্রায় ৯০ লাখ টাকার বেশি আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী মিলে বিনিয়োগের তথ্য গোপন করে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।
এছাড়া সুপর্ণা শুধু সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের তথ্যই গোপন করেননি, রিটার্নে অস্বাভাবিক স্বর্ণালঙ্কারের মালিকানার তথ্য দেন যা পরে বিক্রি হিসাবে দেখানো হলেও কর পরিশোধ করেননি। রিটার্নে সুপর্ণা সাড়ে তিন কেজি স্বর্ণালংকারের তথ্য দেন। এরপর দুই করবর্ষে তিনি তিন কেজি স্বর্ণ বিক্রির তথ্য দেন, যা সিআইসির কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুপর্ণা পেশায় গৃহিণী। অতীত ও বর্তমানে কখনোই তিনি চাকরি বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অথচ আয়কর নথিতে তাকে বিবিধ মালের ব্যবসায়ী হিসাবে দেখানো হয়েছে। মূলত সুপর্ণার বিশাল অঙ্কের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকে বৈধতা দিতে এবং এ নিয়ে সরকারি কোনো সংস্থা যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্যই ব্যবসায়ী হিসাবে দেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নিয়েছেন সিতাংশু কুমার সুর (এস কে) চৌধুরী। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই নিয়োগের আগে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এস কে চৌধুরী ১৯৮১ সনে সরাসরি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেয়ার পর বিভিন্ন পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দায়িত্বের সময়েই দেশের আর্থিক খাতের বড় বড় কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটে। তিনি একটি শিল্প গোষ্ঠীকে ব্যাংক খাতের মাফিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছেন। এ জন্য অবশ্য ওই শিল্প গ্রুপ প্রতিমাসে তাকে ২৫-৩০ লাখ টাকা দিতেন। এমনকি ওই গ্রুপটিই তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর হিসেবে বসায়। একই সঙ্গে ডেপুটি গভর্ণরের চাকরির বয়স শেষ হলেও গ্রুপটি ‘ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক নিজেদের করে নেয়। এস কে সুর চৌধুরী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিংয়ে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আর্থিক খাতের বড় বড় অনিয়মের সহযোগী এস কে সুর জালিয়াতির মতোই ঝুলিয়ে নিয়েছেন গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণ পদক, মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড এবং আইসিএম পদক। এমনকি এতোসব অনিয়মের পরও গুণী ব্যাংকার পদকও নিয়েছেন পি কে হালদারের লুটপাটের অন্যতম এই সহযোগী।
একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রয়েছে বিপুল অংকের অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ। অস্তিত্বহীন ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে জালিয়াতি করে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি, এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি ও পিপলস লিজিং থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
এসব ঋণের বিপরীতে জামানত নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে পিকে হালদার গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান, যার বেশিরভাগই কাগুজে। এর মধ্যে রয়েছে পিঅ্যান্ডএল অ্যাগ্রো, পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল, পিঅ্যান্ডএল ভেঞ্চার, পিঅ্যান্ডএল বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, হাল ট্রাভেল, হাল ইন্টারন্যাশনাল, হাল ট্রিপ, হাল ক্যাপিটাল, হাল টেকনোলজি, সুখাদা লিমিটেড, আনন কেমিক্যাল, নর্দান জুট, রেপটাইল ফার্মসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন পিকে হালদারের আত্নীয়রা। মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারীসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে প্রতিষ্ঠান খোলা হয়ে। ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি ইরফানউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সহকর্মী উজ্জ্বল কুমার নন্দীও আছেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়।
এসব অনিয়মে তাকে সহযোগীতা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। সিএমএম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক বলেছেন, এসকে সুর চৌধুরীকে ‘ম্যানেজ’ করে পিকে হালদার অর্থ লোপাট করেছেন।
পি কে হালদারের জালিয়াতিতে সহায়তাকারী হিসেবে দুদকের তদন্তে ৮৩ জনের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছেনÑ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর এস কে সুর চৌধুরী, হারুনুর রশিদ (ফার্স্ট ফাইন্যান্স), পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, পি কে হালদারের চাচাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অবন্তিকা বড়াল, শামীমা (আইএলএফএসএল), নাহিদ রুনাই (আইএলএফএসএল), সাবেক সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এন আই খান, সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার, সোহেল সামস, মিজানুর রহমান, মাহবুব মুসা, এ কিও সিদ্দিকী, পি কে হালদারের মা লিলাবতী হালদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহে আলম, পিপলস লিজিংয়ের এভিপি আল মামুন, পিপলস লিজিংয়ের ম্যানেজার (ট্রেজারি) অভীক সিনহা ও ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা অতসী মৃধা, প্রাণ গৌরাঙ্গ, আহসান রাকিব, মো. নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জী, রাসেল শাহরিয়ার, এ কে এম সাহিদ রেজা, সিদ্দিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, মমতাজ বেগম, রাজিব সোম, শঙ্খ ব্যাপারী, পূর্নিমা রানী, ওমর শরীফ প্রমুখের নাম। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ঋণের আড়ালে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং পি কে হালদারকে সহযোগীতার অভিযোগ রয়েছে। আর এ অর্থ আত্মসাত করে নামে-বেনামে ভারত, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।