Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তামাক কোম্পানিতে সরকারের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২২, ৮:০১ পিএম

তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে হলে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতে থাকা সরকারের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তামাক নিয়ে এক গবেষণা ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। তারা বলেন, সরকারকে সমন্বিত ও কার্যকর তামাক কর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। কর নীতিমালায় সরকারকে, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তামাক কোম্পানির প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন বন্ধের আহবান জানান তারা।

শনিবার (১৪ মে) ‘বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের কর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অধিকার-ভিত্তিক গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা ভয়েস গবেষণা ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ-এর সভাপতি এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ।

বাংলাদেশে তামাক কর নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের ধরন বোঝার জন্য সাংবাদিক, নীতি নির্ধারক, গবেষক এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করেন এমন ২৩ জনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় ২০২১ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে।

সভায় বক্তারা বলেন, তামাক মুক্ত দেশ বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক কোম্পানির লাভের রাজস্ব আয়ের চেয়ে জনস্বাস্থ্যকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ ও নাগরিক অধিকার কর্মীরা বলেন, এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানিতে থাকা সরকারের সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দিতে হবে এবং তাদের সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে।

 

ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে বলেন, কর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির অবৈধ হস্তক্ষেপের অনেক তথ্য প্রমাণ বের হয়ে এসেছে গবেষণায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, তামাক কর নীতিমালা সংস্কার প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানিগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে অংশগ্রহণকারীরা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ততক্ষণ পর্যন্ত তামাক পণ্যের উপর নতুন করে কর নির্ধারন করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তামাক কোম্পানিগুলোর সাথে কোন চুক্তিতে না আসে। এর কারণ হিসাবে দেশের অর্থনীতিতে তামাক কোম্পনির অবদান উল্লেখ করা হয়। গবেষণা ফলাফলে পাওয়া যায়, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে তামাক কোম্পানিগুলোর খুব ঘনিষ্ট এবং পারস্পরিক লাভালাভের সম্পর্ক রয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা জানান যে, তামাক কোম্পানিগুলোর সংস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িত এনবিআর ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের নগদ এবং বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে থাকেন। এমনকি তাদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকার তামাক কোম্পানির বিভিন্ন অনুদানসহ তাদের কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্বের (সিএসআর) কাজকর্মকে সমর্থন দিয়ে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা জানান, তামাক কোম্পানিলোকে এড়িয়ে চলার জন্য বেশ কিছু অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন, সম্ভবত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জ্ঞাতসারেই তা হয়ে থাকে।

সভাপতি হিসেবে আলোচনায় অংশ নিয়ে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে প্রথমেই সরকারকে বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পনিতে থাকা তার সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তামাকের একক সুনির্দিষ্ট কর কাঠামো তামাক ব্যবহারকারীদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস ও তামাক ব্যবহার কমাতে অধিক কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সভাপতি নাসিরদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকজাত পণ্যের কর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানিগুলো অনেক আগে থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে হস্তক্ষেপ করে আসছে। এমনকি লকডাউনের মধ্যেও তারা বাংলাদেশের প্রয়োজনী পণ্য আইন ১৯৫৬’ নামক একটি পুরাতন আইনের প্রশ্রয় নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে লবিং করে অনুমতি নিয়ে তাদের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিতরণ চলাকালীন সময়েও নিয়মিত রাখেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই আইনটিতে সিগারেটের মত ক্ষতিকর পণ্যকেও বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এনবিআরের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, তারুণ্য, জনশিক্ষা বা তামাক নিয়ন্ত্রণের যে কোন কাজে তামাক কোম্পানির অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি তামাক কোম্পানির পরিচালিত সিএসআর কর্মকা- পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার আহবান জানান।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সিটিএফকে-এর সিনিয়র পলিস অ্যাডভাইজার আতাউর রহমান মাসুদ এবং সিটিএফকে-এর গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া, উন্নয়ন গবেষক ফজলুল হক মজুমদার এবং শারমিন রিনি প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রত্যাহারের আহ্বান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ