Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে কুপিবাতি, হারিকেন ও হ্যাজাক

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতিক

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুপিবাতি ও হারিকেন গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতিকগুলোর মধ্যে অন্যান্য একটি। প্রাত্যহিক গ্রামীণ জীবনে বিশেষ করে রাত্রিকালীন গৃহস্থালি কাজ, লেখাপড়াসহ সকল কাজকর্মে আলোর দিশারি ছিল কুপিবাতি, হারিকেন ও হ্যাজাক। হারিকেন ও কুপি জ্বালিয়ে রাতে হাট-বাজারে যেত গ্রামের লোকজন। লালবাতি বা খুটিবাতি জ্বালিয়ে দোকানিরা বেচাকেনা করত। গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, পালকি, টমটম ও রিকশাচালকেরা হারিকেন বা কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করত। গৃহিণীরা ঘরের কাজ ও উঠানে কিংবা বারান্দায় অথবা ঘরে পড়াশোনা করত ছেলে মেয়েরা।

সমাজের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার কুপিবাতি ও হারিকেন ও হ্যাজাক। গ্রামীণ সমাজের প্রতিটি ঘরে ঘরে এক সময় আলোর অন্যতম বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং সবার ঘরে কুপিবাতি ও হারিকেন পাওয়া যেত, কিন্তু আধুনিক সভ্যতায় এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতিটি ঘরের চিত্রটাই তেমনি পাল্টে গেছে। গ্রামীণ সমাজের সন্ধ্যাবাতি বা কুপিবাতি ও হারিকেন এখন আর চোখে পড়ে না। এক সময় পর্যন্ত কুপির চেয়ে হারিকেনের ব্যবহারটা ছিল বেশি। তৎকালে প্রাণের স্বামী হাঁট-বাজার থেকে ফিরতে রাত হলে ঘরের ঢেলায় কুপি জ্বালিয়ে পথ আলোকিত করত গাঁয়ের বধূরা।

এভাবেই হারিকেন ব্যবহার হতো বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। হারিকেন ছিল মূলত টিনের তৈরি একটি ল্যাম্প বাতির মতো। হারিকেন তৈরি করার কিছু আলাদা মানুষ ছিল। গ্রামে গঞ্জের হাটে হারিকেন কেনা যেত, তবে কুপিবাতি অনেকে ঘরেই তৈরি করত। হারিকেন কাঁচের আবরণ বিশিষ্ট একটি আলোর প্রদীপ।

যার নিচের অংশে টিনের একটি তেলের ট্যাংক থাকত। আর ট্যাংকের ভেতর ঢালা হতো কেরোসিন, পেঁচানো রশি দিয়ে বানানো হতো রেশা। সেই রেশার এক চতুর্থাংশ তেলের ট্যাংকটিতে চুবানো হতো। বাকি এক অংশ কাঁচের উপরে থাকত। দিয়াশলাই দিয়ে আগুন দিলেই আলো দিতে শুরু করত হারিকেন। কুপিবাতির কোনো হাতল নেই। ওষুধের কাঁচের শিশি দিয়ে অনেকে ঘরেই তৈরি করত কুপিবাতি। তবে পিতলের তৈরি কুপিবাতির ঐতিহ্য ছিল, বেশ কদর ছিল। সে সময় বিয়েতে পিতলের কুপি দেওয়া হতো। পিতলের কুপি সহজলভ্য ছিল না।
আগেকার দিনে হারিকেন ও কুপি ব্যবহার ছিল বহুগুণে, ছিল না কোন টর্চলাইট। বেলা শেষে মানুষের ঘরে আলোকিত করত এই হারিকেন ও কুপিবাতি, কেরোসিন তেলের ব্যবহার ছিলে বেশি। গ্রাম বাংলার আপামর লোকের কাছে কুপি ও হারিকেনের কদর হারিয়ে গেলেও এখনও দূর্গমচরাঞ্চলের অনেকেই আঁকড়ে ধরে আছেন কুপি ও হারিকেনের স্মৃতি।

সময়ের সাথে সাথে আঁধারে আলোর সাথী হারিকেন বিদ্যুতের দাপটে হারিয়ে গেছে। হারিকেন দেখা যায় না। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ, রাস্তুা-ঘাট, হাঁট-বাজারে এখন বিদ্যুতের দাপট, বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে জাতির কল্যাণ বয়ে এনেছে। তবে হারিয়ে গেছে আমাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস।
কুপিবাতি ও হারিকেনের কেরোসিন তেল আনার জন্য প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতেই ছিল বিশেষ ধরনের কাঁচের ও প্লাস্টিকের বোতল। সেই বোতলের গলায় রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাঁশের খুঁটিতে। এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে আধুনিক সভ্যতায় হারিকেন ও কুপিবাতির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ, সোলার প্লান্ট এবং চার্জার লাইট। সময়ের দাবি হচ্ছে, আমাদের এসব সোনালী অতীত সংরক্ষণ করা অতীব প্রয়োজন, নয়তো অতীত সম্পর্কে আগামী প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে।

এক সময় হয়ত চিরতরে বিলুপ্ত হবে হারিকেন। তাই হারিকেন নিয়ে ছন্দের সুরে বলা যায় যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি। হয়ত একসময় কুপিবাতি ও হারিকেন দেখতে যেতে হবে যাদুঘরে।

 



 

Show all comments
  • কামাল ১৩ মে, ২০২২, ১১:৫৭ এএম says : 0
    চিন্তার কারন নাই,,,,একটা সময় এগুলো সবই ফেরত আসবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হারিকেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ