বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঘূর্ণিঝড় ‘অশণি’ ভারতের উড়িশ্যা উপক’লে এগিয়ে আসার সাথে ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে। ফলে দক্ষিনাঞ্চল সহ সংলগ্ন উপক’লভাগে মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করায় কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরতেও শুরু করেছে। তবে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বরিশাল বিভাগ সহ উপক’লীয় এলাকায় মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষনের সম্ভবনার কথা জানিয়ে আরো ৩দিন বজ্র সহ বৃষ্টির প্রবনতা অব্যাহত থাকার কথা বলা হয়েছে। আহাওয়া বিভাগ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০Ñ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার আশংকায় সব নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেতের আওতায় এনেছে। ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের যাত্রীবাহী সব নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও ২ নম্বর দুরবর্তী হুশিঁয়ারী সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সাগর মাঝারী উত্তাল রয়েছে। কুয়াকাটা ও হরিনঘাটা সহ উপক’ল এলাকায় ৫-৭ ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে।
গত দুদিনের হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা আড়াই লক্ষাধিক হেক্টর জমির আধাপাকা ও পাকা বোরো ধান নিয়ে কৃষকগন যথেষ্ঠ দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। এমনকি মঙ্গলবার সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দেশের সর্বাধীক বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়, ২০৭ মিলিমিটার। এসময়ে পটুয়াখালীতে ৪৯, ভোলাতে ৩৫, গোপালগঞ্জে ২৯, বরিশালে ১০ এবং মাদারীপুরে ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অথচ এসব এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান এখনো মাঠে। তবে মঙ্গলবার দিনভরই দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লভাগে বৃষ্টিপাত ছিল আগের দিনের অনেকটাই কম।
তবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশণি’ ক্রমশ দূর্বল হতে শুরু করায় বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক কৃষক কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পাচ্ছেন। রোববার শেষ রাত থেকে সোমবার দিনভর বৃষ্টিপাত রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত গড়ায়। গত বছরও মে মাসেরই ২০ তারিখের পরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ‘ইয়াশ’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে ২৭ মে ভারতের অন্ধ্র ও উড়িশ্যা উপক’লে আঘাত হানলেও তার প্রভাবে দক্ষিনাঞ্চলের শত কোটি টাকার ফসলহানীর সাথে বিভিন্ন ঘের ও বদ্ধ জলাশয়ের ১শ কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। ঐ ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছাসে উপক’লের বিপুুল নদীতীর রক্ষা বাঁধ সহ উপক’লীয় বেড়ীবাঁধের ক্ষতিও ছিল প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।
ইয়াশ-এ ভড় করে প্রবল বর্ষনে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার নুতন আশায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন। কিন্তু এবারো আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘অশণি’র প্রভাবে সে ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে গত দুদিন এ অঞ্চলের অনেক আধাপাকা ধানও কেটে ফেলেছেন কৃষকগন। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও রোববার পর্যন্ত মাত্র ৩০% জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়। যদিও গত দুদিনে আরো ১% জমির ধান কর্তন হয়েছে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে এবার। ফলে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধান থেকে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫২০ টন চাল পাবার লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে উৎপাদন ১৬ লাখ টনে উন্নীত হবার সম্ভবনা থাকলেও, ‘অশণি’র চোখ রাঙানীতে শংকিত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশণি দূর্বল হবার সম্ভবনা প্রবল হলেও উপক’ল যুড়ে রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র ৭০১টি ইউনিটের প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছা সেবককে সার্বক্ষনিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপক’লের ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলার বিশাল এলাকায় যেকোন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে স্বল্পতম সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে তারা কাজ করবেন। তবে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষিত না হওয়ায় এবার উপকুলে কোন ধরনের বিপদ সংকেতের পতাকা উত্তোলন বা মাইক-মেগাফোন থেকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়নি। উপক’লের কয়েক হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে বরিশালের বিভাগীয় প্রশাসন সহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।