পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতে দেশে ‘গরম’ হতে শুরু করেছে রাজনীতি। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরো দেড় বছর বাকি। কিন্তু এখনই দেশের রাজনীতির আকাশে বাতাসে ভোটের উত্তাপ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনে প্রস্তুতি নেয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অতীতের মতো ‘সুযোগ সন্ধান’ কৌশল নিলেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই সঙ্গে জোট গঠন, পুরনো জোট ঝালাইকরণ, দেশি-বিদেশী শক্তিগুলোকে নিজেদের পক্ষভূক্ত করতে দোঁড়ঝাপ শুরু করেছে। সে কারণে গেল রমজান মাসে ইফতার পার্টিতে বিদেশী কূটনীতিকদের আমন্ত্রণের প্রতিযোগিতা দেখা গেছে।
৭ মে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দল গোছাতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ এবার নির্বাচনে সবকিছুই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। বিএনপির নেতা তারেক রহমান এবার রমজানে ইফতার পার্টির মাধ্যমে ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি সভা করেছে। পশ্চিমাদেশে অন্তত ৫০টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। তারা কিন্তু চুপ করে বসে নেই।’ একই সঙ্গে তিনি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং কারা সে ষড়যন্ত্র করছে সে কথাও দলের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ‘এবার নির্বাচনে সবকিছুই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে’ এবং ‘সরকার উখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ এ দু’টি উক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে। ফেসবুক-টুইটারে বেশির ভাগ মন্তব্য এমন ২০১৪ সালে ভারতের সহায়তায় (দেশটির সে সময়ের বিদেশ সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা) এরশাদকে ভোটে এনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া এবং ২০১৮ সালে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে নির্বাচন করে (রাশেদ খান মেনন নিজেও স্বীকার করেছেন) বিজয়ী হওয়া এবার সম্ভব হবে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটার প্রভাব আগামী নির্বাচনে ফেলবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ এমনকি ভারতের মোদী সরকারও চায় যেনতেন প্রকারে নয় আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসুক। ফলে আগের দ’ুটি জাতীয় নির্বাচনের সময় পর্দার আড়ালে থেকে দিল্লির সাউথ ব্লক যে ভাবে কলকাঠি নেড়েছে এবার তা সম্ভব হবে না। মানবাধিকার রক্ষা সকলকে নির্বাচনী প্রচারণার সমান সুযোগ দিয়ে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হবে। ফলে আওয়ামী লীগের জন্য এবারের নির্বাচন কঠিন। আর সরকার উৎখাতের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। বিএনপির জানিয়ে দিয়েছে আন্দোলন করেই সরকার উৎখাত করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
কার্য নির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের নির্বাচন ফেয়ার হবে, নিশ্চয়তা দিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপি আসবে। অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তাদের আসতে হবে। আমরাও একটি শক্তিশালী বিরোধীদলকে সংসদে স্বাগত জানাতে চাই। বিরোধীদলের স্ট্যান্ড থাকুক। নির্বাচন ইভিএমে হবে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে ভোট নিরপেক্ষ হবে, মির্জা ফখরুলের দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
ওবায়দুল কাদেরের এমন আহবানের জবাব সংবাদ সম্মেলন করে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা তো পরিষ্কার যে, আওয়ামী লীগের সরকার পদত্যাগ না করলে এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই ওঠতে পারে না। এই নিয়ে আমরা কোনো কথাই বলতে চাই না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে আমরা যাবো না। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে তার মধ্য দিয়ে একটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও পার্লামেন্ট গঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের সভায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৪ দলীয় জোট থাকবে তবে নির্বাচন কঠিন হবে। কেউ কেউ সরকারকে উৎখাতের কথা বলছে। তারা দল-টল করার চেষ্টা করছে। নানা কথা বলছে। কিন্তু আমাদের অপরাধটা কী? আমরা কোথায় ব্যর্থ হয়েছি? জিয়া, এরশাদ, খালেদা, তারেক- সবাই মানুষ হত্যা করেছে। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। আমরা তা করিনি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল কৃষক লীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশ-বিদেশের কিছু মানুষ অপপ্রচার আর সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। এখানে বিএনপি-জামায়াতে জোট, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমাদের মান্না সাহেব, ড. কামাল হোসেনসহ তাদের একগ্রুপ। সেই সঙ্গে তাদের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং আমাদের বাম দল, বাসদসহ কারা কারা। তারা সবাই নাকি এক হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাবে। আবার ক্ষমতায় যেতে অনেকেই বিদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘নির্বাচন কঠিন থেকে কঠিনতর হবে’ এবং নির্বাচনের আগেই ভোটের উত্তাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মন্তব্য করেন, সত্যিই এবার নির্বাচন কঠিন হবে। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দেশে অনেক ঘটনা ঘটবে। জোট গঠন ও দল ভাঙ্গা গড়ার খেলা হবে। শুধু তাই নয় জাতিসংঘ এবারের জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ দেশের সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা চান জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত হোক।
আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আহবানের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জবাবে বার্তা দেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধ সহজেই মিটছে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি অংশ নিয়ে ‘যে শিক্ষা পেয়েছে’ তাতে এবার সেই ভুল বিএনপি করবে না। সে জন্যই তারা তৃর্ণমূল পর্যায়ে দল সুসংগঠিত করছেন এবং বৃহৎ রাজনৈতিক জোট এবং পৃথক পৃথক জোট গঠনের মাধ্যমে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সহসাই বিএনপির দাবি মেনে নেবে মনে হয় না।
নির্বাচন ইস্যুতে বড় দুই দলের বিরোধ মেটাতে ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনস বাংলাদেশে এসেছিলেন। দীর্ঘ ৩১ দিন তিনি ঢাকায় অবস্থান করে দুইদলের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের আবদুল জলিলের ঐতিহাসিক সংলাপ ব্যর্থ হলে ওয়ান ইলেভেন হয়। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতার লক্ষ্যে জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এসেছিলেন। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হন। এবার বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে দৃষ্টি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় সহায়তার কথা বলছে। জানুয়ারি মাসে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত আল রবার্ট মিলার ঢাকা ত্যাগের সময় যে বার্তা দিয়ে গেছেন; এবং বর্তমান ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হ্যাস কয়েকদিন আগে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার, আইনের শাসন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্যে পরিস্কার এবার নির্বাচনের ‘মাঠ সমতল’ নাহলে র্যারের উপর নিষেধাজ্ঞার মতো আরো অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এমনকি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের ব্যবস্থার দাবি উঠতে পারে। ফলে আগের মতো অতো সহজে এবার যেনতেন ভোট সম্ভব নয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’পক্ষই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যেভাবে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাতে বাংলাদেশে আর পাতানো নির্বাচন সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন. এবার বিগত দু’টি নির্বাচনের মতো পাতানো ভোট সম্ভব হবে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় পা রাখার জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন। চীনকে নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত তাদের সরকার প্রয়োজন। ফলে যেনতেন প্রকারে বাংলাদেশে আর নির্বাচন হবে না। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেভাবে একে অপরের মুখোমুখি তাতে সমঝোতায় বিদেশীদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অতীতে এটা হয়েছে। তা ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আবদুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেটকে আগেই অনুরোধ করেছেন তারা যেন বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজী করান। অন্যদিকে তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। ফলে দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ চাওয়ার যে নির্লজ্যতা শুরু হয়েছে তা সহসাই বন্ধ হবে মনে হয় না। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।