মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নিজ সেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে কিয়েভ
পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ লাইন ধ্বংসের দাবি ক্রেমলিনের
আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার জল্পনা উড়িয়ে দিলো মস্কো
মারিউপোল বন্দরে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ একটি স্টিল মিল থেকে কিছু বেসামরিক লোককে সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে ভ‚গর্ভস্থ টানেল এবং বাঙ্কারগুলোর প্ল্যান্টের যুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ পরেও ভিতরে থাকা শত শত ইউক্রেীয় সৈন্যের ভাগ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের পছন্দ হয় মৃত্যুর সাথে লড়াই করা বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের শর্তাবলীর অধীনে রক্ষা পাওয়ার আশায় আত্মসমর্পণ করা বলে মনে হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সৈন্যদের সহজে প্রস্থান করার সম্ভাবনা নেই এবং মুক্ত মানুষ বা এমনকি জীবিত হিসাবে বের হতে তাদের অসুবিধা হতে পারে।
জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক মার্কো সাসোলি বলেন, ‘তারা মারা না যাওয়া পর্যন্ত লড়াই করার অধিকার রাখে, কিন্তু যদি তারা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তাদের আটক করা যেতে পারে। এটি কেবল তাদেরই ইচ্ছাধীন’।
আটলান্টার এমরি ল স্কুলের অধ্যাপক লরি বø্যাঙ্ক, যিনি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং সশস্ত্র সংঘাতের আইনে বিশেষজ্ঞ, বলেছেন যে, আহত যোদ্ধাদের ‘হর্স ডি কমব্যাট’ হিসাবে বিবেচনা করা হয় - আক্ষরিক অর্থে ‘যুদ্ধের বাইরে’ - এবং যুদ্ধবন্দি হিসাবে আটক করা যেতে পারে। ‘রাশিয়া আহত ইউক্রেীয় সৈন্যদের ইউক্রেীয় এলাকায় ফিরে যেতে দিতে পারে, কিন্তু এর প্রয়োজন নেই’, তিনি বলেন।
আজভস্টালের অভ্যন্তরে থাকা অন্তত দু’জন ইউক্রেীয় সৈন্যের রোমে থাকা স্ত্রীরা সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছেন, যুক্তি দিয়েছেন যে তারা বেসামরিক নাগরিকদের মতো একই অধিকারের যোগ্য।
প্ল্যান্টে আজভ রেজিমেন্টের কমান্ড ডেনিস প্রোকোপেনকোর স্ত্রী কাটেরিনা প্রোকোপেনকো দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, অবশেষে বুধবার তার কাছ থেকে শোনার আগে তিনি ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তার কাছ থেকে কথা না বলে চলে গেছেন। তিনি তাকে বলেছিলেন যে, রাশিয়ান সৈন্যরা আজভস্টালে প্রবেশ করেছে এবং ‘আমাদের সৈন্যরা যুদ্ধ করছে, এটি বিভৎস এবং বর্ণনা করা কঠিন’।
‘আমরা চাই না তারা মারা যাক, তারা আত্মসমর্পণ করবে না’ কাতেরিনা প্রোকোপেনকো বলেছেন। ‘তারা অপেক্ষা করছে সাহসী দেশগুলো তাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য। দীর্ঘ অবরোধের পর আমরা এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতে দেব না’।‘আমাদের ও আমাদের পুরুষদের সরিয়ে নিতে হবে’।
ইউক্রেীয় কর্তৃপক্ষও দাবি করেছে যে, রাশিয়া আজভস্টাল সৈন্যদের তাদের অস্ত্রসহ নিরাপদ প্রস্থান করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তাদের পক্ষে কেবল মুক্তভাবে চলার অনুমতি দেওয়া প্রায় নজিরবিহীন হবে, অন্ততপক্ষে নয়, কারণ তারা আবার অস্ত্র তুলে নিতে পারে এবং সম্ভবত রাশিয়ান হতাহতের কারণ হতে পারে।
আজভস্টালের সেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে ইউক্রেন
মারিউপোলের মেয়র ভাদইয়াম বোইচেনকো গত বুধবার জানিয়েছেন, আজভস্টালের ভেতর অবরুদ্ধ থাকা ইউক্রেীয় সেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। মঙ্গলবার মারিউপোলের আজভস্টালের ভেতর সর্বশক্তি নিয়ে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর একদিন পরই আজভস্টালের সেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলার কথা জানালেন সেখানকার মেয়র। এ ব্যাপারে মেয়র ভাদইয়াম বোইচেনকো বলেন, আমাদের দুর্গে আমাদের অঞ্চলে শক্তিশালী আক্রমণ চলছে। আমাদের সাহসী সেনারা এ দুর্গ রক্ষায় লড়াই করছে। কিন্তু এটি অনেক কঠিন। কারণ ভারী কামান ও ট্যাংক আমাদের দুর্গের ওপর হামলা করছে। বিমান আসছে। যুদ্ধ জাহাজ এসেছে এবং জাহাজ থেকেও হামলা করা হচ্ছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সঙ্গে মেয়র আরও বলেছেন, আজভস্টালে ৩০ জন শিশু আটকে আছে। তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেনাদের সঙ্গে আজ কোনো যোগাযোগ নেই। ভেতরে কী হচ্ছে জানার কোনো উপায় নেই, তারা রক্ষিত আছে নাকি নেই। মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। বুধবার থেকে আর নাই।
ইউক্রেনে ‘পশ্চিমা অস্ত্রের সরবরাহ লাইন’ ধ্বংসের দাবি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্রের প্রবেশ ঠেকাতে একাধিক রেলস্টেশনসহ অন্যান্য সরবরাহ লাইনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলো ‘অস্ত্র দিয়ে ইউক্রে ভর্তি’ করছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা। রুশ সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সমুদ্র ও আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি রেলস্টেশনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এছাড়া কামানের গোলা ও বিমান হামলার মাধ্যমে ইউক্রেীয় বাহিনীর জ্বালানি ও গোলাবারুদের ডিপোতে আঘাত করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, ইউক্রেনের রেল অবকাঠামোতে হামলার উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ ব্যাহত করা। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেকে অস্ত্রে ভরে দিচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পশ্চিমা অস্ত্র প্রবেশে ব্যবহৃত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ছয়টি রেলস্টেশন নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। এছাড়া গোলাবারুদের চারটি ডিপোসহ ইউক্রেনের আরও ৪০টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটির যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে রুশ যুদ্ধবিমান থেকে ১৮টি রকেট ছোড়া হয়েছে।
রাশিয়া একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে দাবি করেছে, কৃষ্ণসাগর থেকে ছোড়া তাদের দুটি ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের অনুল্লেখিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার দৃশ্য এটি।
মারিউপোলের বাসিন্দাদের সরাতে ‘দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন’
ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোলের আটকাপড়া বাসিন্দাদের সরাতে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোরে এক ভিডিও বক্তৃতায় তিনি জানান, পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরীটিতে এখনও নারী ও শিশুসহ বেসামরিকরা আটকা পড়ে আছে আর রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত থাকায় তাদের সরিয়ে আনা নিশ্চিত করতে যুদ্ধবিরতির সময় বেশি হওয়া দরকার। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অবিরাম গোলাবর্ষণ ও অবরুদ্ধ করে রাখার পর ২১ এপ্রিল মারিউপোলের লড়াইয়ে জয় ঘোষণা করে রাশিয়া। কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ঢোকার পথ বন্ধ করতে মস্কোর প্রচেষ্টার অন্যতম চাবি এ বন্দরনগরী, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য খাদ্যশস্য ও ধাতু এ বন্দর দিয়েই সরবরাহ করা হয়। আবার ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরির জন্যও শহরটির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ ও রেড ক্রস মারিউপোল ও অন্যান্য এলাকা থেকে কয়েকশ’ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এখনও মারিউপোলের আজভস্টাল ইস্পাত কারখানার ভ‚গর্ভস্থ বাংকার ও টানেলের গোলকধাঁধায় ইউক্রেনীয় সেনাদের পাশাপাশি প্রায় ২০০ জনের মতো বেসামরিক আটকা পড়ে আছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বেসামরিকদের বের করে আনার সুযোগ দিতে বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় ও পরবর্তী আরও দুদিন আজভস্টালে সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে রাশিয়া। মারিউপোলে অস্ত্রবিরতি নিশ্চিত করতে ইউক্রেনও প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়ক ওসরাত লুবরানি জানিয়েছেন, বুধবার জাতিসংঘ-রেড ক্রসের যৌথ উদ্যোগে মারিউপোল ও ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য এলাকা থেকে ৩০০ বেসামরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
‘মারিউপোল ও অন্যান্য এলাকা থেকে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার দ্বিতীয় ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য হলেও লড়াইয়ে আটকা পড়া সব বেসামরিককে সরিয়ে তারা যেখানে যেতে চায় তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই আরো অনেক কিছু করতে হবে’ বলেছেন তিনি।
জাতিসংঘ আরো বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করেছে কিনা তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনকে ‘নিরস্ত্র’ ও ‘নব্যনাৎসীমুক্ত’ করতে প্রতিবেশী দেশটিতে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে বলে দাবি করে আসছে মস্কো। অপরদিকে মস্কোর এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া ইউক্রেনের ‘সামরিক আগ্রাসন’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ কিইভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের। ১০ সপ্তাহ ধরে চলা ইউক্রেনের যুদ্ধে দেশটির বহু শহর ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে, কয়েক হাজার লোক নিহত ও ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
পুতিনের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার জল্পনা উড়িয়ে দিল ক্রেমলিন
আগামী ৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবসে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার যে ধারণা পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকরা করেছিলেন, তা বাজে কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছে ক্রেমলিন। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি থেকে ইউক্রেনে যে আগ্রাসন শুরু করেছে রাশিয়া, সেটিকে এতদিন যুদ্ধ নয় বরং ‘বিশেষ সামরিক অভিযানই’ বলে এসেছেন পুতিন। কিন্তু পশ্চিমা রাজনীতিবিদরাসহ কিছু রুশ পর্যবেক্ষক ধারণা প্রকাশ করে বলেছেন, পুতিন আগামী সোমবার (৯ মে) ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা কিংবা জয় ঘোষণা করতে পারেন অথবা দুটোই করতে পারেন।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এর কোনো সুযোগ নেই। এটি বাজে কথা’। জাতীয় পর্যায়ে সেনাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হতে পারে- এমন গুঞ্জনে মানুষজনের কান দেওয়া উচিত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকদেরকে পেসকভ বলেন, ‘এমন কথা সত্য নয়। এগুলো আজেবাজে কথা’। সূত্র : এপি, আল-জাজিরা, সিএনএন, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।