পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে বেড়েই চলছে চুরি-ছিনতাই। প্রতিদিন পুরো রাজধানীতে অর্ধশতাধিকের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পথচারীদের টার্গেট করে রাজধানীর দুইশত স্পটে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর থানা এলাকায় যতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগই থানায় রেকর্ড হয় না। অপর দিকে প্রতিদিনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছে ছিনতাই চক্রের সদস্য। তারপরও থামছে ছিনতাই। এতে রাজধানীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটা, বাড়ি ফিরার পথে ছিনতাইকারী কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩২ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব বলছে, এই ছিনতাই চক্র ছোঁ মেরে পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যেতো। এরপর রাজধানীর ভাসমান মার্কেটে সেগুলো বিক্রি করে দিতো। ভাসমান মার্কেটে বিক্রির আগে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলা হতো। যাতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর খোঁজ না পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইলগুলোর মূল ক্রেতা অপরাধীরা। অপরাধীরা এসব মোবাইল কিনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে র্যাব-৩ এর ৭টি আভিযানিক দল রাজধানীর লালবাগ, সিদ্ধিরগঞ্জ, পল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, ওয়ারিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের ৩২ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি ট্যাব, ৭১৭টি স্মার্টফোন, ৭৯৩টি বাটন মোবাইল, ২৮টি ল্যাপটপ ও নগদ ৫৫ হাজার ৬৪৭ টাকা জব্দ করা হয়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অভিযানে গুলিস্তান এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা রাকিবসহ তার চার সহযোগী, পল্টন এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা বিল্লাল হোসেনসহ তার ছয় সহযোগী, রমনা এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা পারভেজসহ তার ছয় সহযোগী, শাহবাগ এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টুসহ তার ছয় সহযোগী, মতিঝিল এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা মো. ইউসুফ বেপারীসহ তার চার সহযোগীসহ মোট ৩১ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মূলত ছিনতাই ও চোরাইকৃত মোবাইল ফোন অল্পদামে কিনে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করতো।
তিনি বলেন, র্যাব-৩ এর আওতাধীন এলাকায় অন্তত ২০টির বেশি মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। চুরি এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজশে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করতো তারা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে মোবাইল ছিনতাই, চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচায় জড়িত সিন্ডিকেট, দেশে অবৈধভাবে আসা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামিদামি মোবাইল ফোনের জমজমাট বাণিজ্য, চোরাইকৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে নানা মাধ্যমে বিক্রির বিষয়টি দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল। ফলশ্রুতিতে র্যাব-৩ এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে থাকে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে এই অপারেশনে র্যাবকে সহযোগিতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট থাকে পথচারীদের মোবাইল। এসব মোবাইল অল্পদামে চোরাই মোবাইল কারবারিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও এসব মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে স্বল্পআয়ের গ্রহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। আইএমইআই পরিবর্তন করার কারণে এসব মোবাইল পরে উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ডাকাতিকৃত, ছিনতাইকৃত ও চোরাইমাল বিক্রি ও কাছে রাখা আমলযোগ্য অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে তারা নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে চোরাই মোবাইল বিক্রি ও আইএমইআই পরিবর্তনের অবৈধ ব্যবসা করছিল।
শুধু র্যাব নয়, গোয়েন্দা পুলিশের প্রায় ৭০ টিম ঢাকা মহানগরীর ৫০ থানা এলাকায় ছিনতাই প্রতিরোধে মাঠে নামানো হয়েছে। পুলিশের তালিকায় রাজধানীর ৫০ থানা এলাকার ২ শতাধিক স্পটে অন্তত অর্ধশতাধিক সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের ৩ শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানী ঢাকায় সুযোগ পেলেই ছিনতাইকারী চক্র ছোঁ মেরে জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। পথে পথে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা দিনে-দুপুরেও ছিনতাই করে। আর মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নগরীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। পুলিশ বিভাগও হঠাৎ ছিনতাই চক্রের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করেছে। একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কারণ তাদের দিন-রাতের যেকোন সময়েই ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে।
গত রোববার রাজধানীর পল্টন মোড়ে সোনারগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যাপক মো. মামুন মাহমুদ ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। জানা যায়, মামুনের পথরোধ করে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ছিনতাইকারী। এ সময় মাহমুদ বাঁধা দিলে তাকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়।
গতকাল ভোরে সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এ সময় তার থেকে ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
শহিদুলের ভাগিনা মামুন জমাদ্দার অভিযোগ করে জানান, শহিদুল ইসলামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায়। সউদী প্রবাসী তিনি। ৭-৮ মাস আগে দেশে এসেছেন। কিছুদিন পর আবার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য কাগজপত্র ঠিক করতে গত রাতে বরগুনা থেকে বাসে করে ঢাকায় রাজারবাগ কালিবাড়ি এলাকায় মামুনের বাসায় আসছিলেন। ভোরে সায়দাবাদে বাস থেকে নেমে মসজিদে বসে সেহরি খান তিনি। এরপর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয় একটি গলি দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুই ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। তার সঙ্গে থাকা টাকাণ্ডপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তাদের মধ্যে একজন তার বাম হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তার সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, এসময় শহিদুলের চিৎকারে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেলে এক রিকশাচালক তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সেখান থেকে মামুন তাকে উদ্ধার করে সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। তার হাতে বেশ কয়েকটি সেলাই দেওয়ার পর তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শুধু পল্টন ও যাত্রাবাড়ী এলাকা নয়, রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এখন এ ধরনের ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয়। বিশেষ করে পান্থপথ, আড়ং ক্রসিং, আসাদ এভিনিউ, শ্যামলী, ধানমণ্ডি-১৫, কলাবাগান, আগারগাঁও, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মিরপুর-২, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, মৌচাক, মগবাজার, কাকরাইল, দয়াগঞ্জ, ওয়ারী, ফকিরাপুল, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা জসিমউদ্দীন রোড, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় এরা বেশি সক্রিয়। তবে এসব এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হলেও থানায় মামলা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
ডিএমপির অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঢাকা মহানগরীতে মামলা হয় ১৪৫টি, ২০২০ সালে ১৭৬টি, ২০১৯ সালে ১৫৫টি, ২০১৮ সালে ২১৬টি, ২০১৭ সালে ১০৩টি, ২০১৬ সালে ১৩২টি, ২০১৫ সালে ২০৫টি ও ২০১৪ সালে ২৬৫টি মামলা দায়ের হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।