Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অবহেলায় পড়ে আছে লাখ লাখ টন ইউরিয়া সার

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক আর লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাফার গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা ৮ হাজার টন হলেও প্রতিবছর সার আসে ৪ থেকে ৫ লাখ টন। ফলে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র নদীবন্দর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় জমা পড়ে রয়েছে লাখ লাখ টন ইউরিয়া সার। বাফার গোডাউন ও বন্দরের শেডে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার অযুহাতে মাসের পর মাস বন্দরের বিভিন্ন স্থানে রাখা সার রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে গুণগত মান হারানোর পাশাপাশি এর রাসায়নিক উপকরণ ও দুর্গন্ধ বন্দর এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে বাফার কর্মকর্তারা মুখ না খুললেও কৃষিকাজে এই সার ব্যবহার করে সুফল আসবে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকেরা আর লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষি-জমিতে ব্যবহারের জন্য দেশের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া, পটাশ ও জিম সারের সিংহভাগ সরকারি বিতরণ সংস্থা বাফার গোডাউনে সরবরাহ করা হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের মাধ্যমে। ইরি ও বোরো মৌসুমে কৃষি জমিতে ব্যবহারের জন্য অত্যাধিক পরিমাণে আনা হলেও সারা বছরই এই বন্দরে ছোট-বড় জাহাজে আনা হয় ইউরিয়া সার। আর এই সারগুলো বন্দর এলাকায় খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা হয়। খোলা আকাশের নিচে কোনো রকমে প্লাষ্টিকের কাগজ দিয়ে স্তূপ করে রাখার ফলে অনেক বস্তার ভেতরেই জমাট বেধে যাওয়া ইউরিয়া সার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া এই রাসায়নিক সারের প্রভাবে ইতোমধ্যেই বন্দর এলাকার অধিকাংশ গাছ মারা গেছে।

ইরি মৌসুমের জন্য এই বন্দরে আনা সারের পাশাপাশি গত বছর চীন থেকে আমদানি করা ইউরিয়ার স্তূপও রয়েছে বন্দরে। যেগুলোর অধিকাংশই রোদ-বৃষ্টিতে জমাট বেধে শক্তত হয়ে গেছে। গুনগত মানের কথা না ভেবে এই সারগুলোর জমাট ভেঙ্গে পুনরায় বস্তায় ভরে এ বছরে সার ডিলারদের দেয়া হচ্ছে কৃষকের কাছে বিক্রি করার জন্য বলে অভিযোগ রয়েছে। বন্দর ও বাফার গোডাউনে ধারণক্ষমতা আট হাজার টন। কিন্তু বন্দরে সার আসে চার থেকে পাঁচ লাখ টন। যার ফলে বাধ্য হয়ে বন্দরে খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা হয় সার। এতে সারের গুনগত মান নষ্ট হয়।

রসায়নবিদদের মতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত ইউরিয়া সারের মূল উপাদান নাইট্রোজেন, আর এই নাইট্রোজেন ফসলের জন্য উপকারি উপাদান, যা দীর্ঘদিন খোলা জায়গায় রাখা সারে কিছুতেই বিদ্যমান থাকবে না। ফলে এই সার ব্যবহারে কৃষক কোনো সুফল পাবে না। কৃষকের হাতে গুলগত মান সম্পন্ন ইউরিয়া সার পৌছে দিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার এমনটাই বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
বন্দর শ্রমিকেরা বলেন, এখানে বড় গোডাউন না থাকায় সার বাইরে রাখা হচ্ছে। এত রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে গুনগতমান ও সার জমাট বেধে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে বহন করতে। এখানে বড় গোডাউন হলে আমরা শান্তিতে কাজ করতে পারব।

বাঘাবাড়ি নদী বন্দর ইজারাদার মো. আবুল হোসেন বলেন, বন্দরে বড় একটি সমস্যা সার রাখার বড় কোনো গোডাউন নাই। বন্দর ও বাফার গোডাউনে ধারণক্ষমতা আট হাজার টন। কিন্তু বন্দরে সার আসে চার থেকে পাঁচ লাখ টন। যার ফলে বাধ্য হয়ে বন্দরে খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা হয় সার। এতে সারের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, বন্দরে খোলা আকাশের নিচে রাষ্টায়ত্ব সম্পদ সার রেখে তার গুণগতমান নষ্ট হওয়ার ঘটনা বন্ধে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবারও গুদাম নির্মাণের জন্য আবেদন করা হবে।



 

Show all comments
  • Rafique Mannan ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১:৫৮ এএম says : 0
    অথচ কৃষকরা সার কিনতে গেলে গোডাউনে সার নেই, দোকানে সার নেই ।
    Total Reply(0) Reply
  • Rafique Mannan ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১:৫৮ এএম says : 0
    অথচ কৃষকরা সার কিনতে গেলে গোডাউনে সার নেই, দোকানে সার নেই ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ