নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা : জাতীয় দলে অভিষেকটা যার টি-২০ দিয়ে, তিনি তো সংক্ষিপ্ত ভার্সনের এই ক্রিকেটটাই করবেন বেশি উপভোগ। করেছেনও তাই। বিপিএল ‘থ্রি’তে গতবার গেইলহীন ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে লড়াইটা করবে কিভাবে? কপালে ওঠা সে দূর্ভাবনার ভাঁজ থেকে বরিশাল বুলস’কে স্বস্তির জয় উপহার দিয়েছেন ৭৯ রানের ঝড়ো ইনিংসে। সেই থেকে কি ঘরোয়া, কি আন্তর্জাতিক টি-২০, ৩ নম্বরে জায়গাটা পাকা হয়েছে তার। ৫ ম্যাচে ২ লাখ মার্কিন ডলারে ক্যারিবিয়ান টি-২০ দানব ক্রিস গেইলকে কিনেছে চিটাগাং ভাইকিংস। তবে গেইল ঢাকায় পা রাখার আগেই মাঠে টি-২০ ঝড়টা বইয়ে দিয়েছেন সাব্বির রহমান রুম্মান। বিপিএলে বিনোদন মানে এতোদিন যারা তাকিয়ে থাকতেন গেইলের দিকে, সেই গেইল পর্যন্ত গতকাল সাব্বিরের ঝড় শুনলে হবেন বিস্মিত! চারের সঙ্গে সমতালে ছক্কাÑ ৯ চার ৯ ছক্কায় ৬১ বলে ১২২ রান। ২০১২ সালে বিপিএল অভিষেকে বরিশাল বার্নাসের হয়ে ঢাকা গøাডিয়েটর্সের বিপক্ষে গেইলের ৬১ বলে ১১৬ ছিল বিপিএল ইতিহাসে এতোদিন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। গেইলের সেই ঝড় ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি এখন সাব্বিরের!
প্রতিপক্ষ দল রাজশাহী কিংসের হয়ে সাব্বির রহমান রুম্মানের এমন রেকর্ডটা দেখে বিস্মিত হননি রবিশাল বুলস টপ অর্ডার শাহরিয়ার নাফিসÑ ‘রুম্মান যেভাবে ব্যাট করেছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ঠিক এভাবেই খেলতে হয়। আগ্রাসী এবং ধ্বংসাত্মক মেজাজ থাকতে হবে। তার পুরোটাই আছে ওর। ও যেভাবে খেলে তাতে কোনো স্কোরই বড় স্কোর নয়। সে অসাধারণ এক প্রতিভা। বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো প্রাপ্তি। ও খুব ফিট, খুব শক্তিশালী, নিজের খুব বিশ্বাস রেখে খেলে, বিগ হিটার। ও যখন ব্যাট করছে তখন মনে হচ্ছিল আমাদের স্কোর ২২০ থেকে ২৩০ রান দরকার ছিল।’
২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের অর্জন স্বর্ণপদক, গেমসের ইতিহাসে সেরা এই সাফল্যের নায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেকও টি-২০ দিয়ে। ধাপে ধাপে ওয়ানডে এবং টেস্টে নাম লেখালেও এখনো সাব্বিরের গায়ে স্টিকার টি-২০ ক্রিকেটার। নিজেকে এই পরিচয়েই দেখতে পছন্দ করেন সাব্বিরÑ ‘টি-টোয়েন্টি সব সময় আমার ম্যাচ, আমার খেলা। টি-টোয়েন্টি খেলেই আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। ওখান থেকেই ওয়ানডে, পরবর্তীতে টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি এটাই আমার ফরমেট। বিশ্বাস করি আজ না হোক কাল, কাল না হলে একদিন আমি বড় স্কোর গড়বোই। আজ (গতকাল) আমি ৬১ বলে ১২২ রান করে রেকর্ড করেছি। আমি জানি এই রেকর্ড ভাঙতে আরেকজন আসবে।’
১২২ রানের মধ্যে বিপিএল টি-২০তে এক ম্যাচে চার-ছক্কায় ৯০ রান! গেইল ছাড়া বিপিএলে কারো ইনিংসে চার-ছক্কা থেকে আসেনি এতো রান! এই ইনিংসে চার-ছক্কায় সর্বোচ্চ ৯২ রানের রেকর্ডটি এখনো অক্ষত গেইলেরÑ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বিপিএল টু তে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংসের মধ্যে ৯২ রানই নিয়েছিলেন তিনি চার ছক্কায় (৫ চার ১২ ছক্কা)। বিপিএল’র ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসে (ঢাকা গøাডিয়েটর্সের বিপক্ষে বরিশাল বুলসের হয়ে) ১১৬ রানে চার-ছক্কায় ৯০ রানেও বিস্ময়টা ছিল এতোদিন গেইলকে ঘিরে। গেইলের সেই দ্বিতীয় রেকর্ডকে ছুঁয়ে ফেলেছেন গতকাল সাব্বির। বাংলাদেশে ঘুরে ফিরে যে দু’টি মাঠে হচ্ছে আন্তর্জাতিক এবং বিপিএল টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেট, সেই মাঠ দু’টি বড় হওয়ায় চার-ছক্কাগুলো আইপিএল’র চেয়েও অনেক বড়, বড় শটে সাব্বিরের শক্তি দেখে তাই মুগ্ধ বিপিএল ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী সেঞ্চুরিয়ান শাহরিয়ার নাফিসÑ‘আমাদের এখানে টি-টোয়েন্টিতে বাউন্ডারি কিন্তু ছোটো না। অন্য অনেক দেশের চেয়ে অনেক বড়। ছক্কা হাঁকাতে সেই শক্তিটা লাগবে, শটে একটু বেশি পাওয়ার লাগবে, ইমপ্রোভাইজেশন থাকবে হবে। দেশের মাটিতে তো দেখি নাই। আমাদের দেশে যে বাউন্ডারি সেটা হয়তো অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কোনো দেশে নেই। এই বাউন্ডারি সাব্বির যেভাবে পার করছিল, আমার দেখা এটা অন্যতম সেরা ইনিংস। খুব সম্ভবত দেশের মাটিতে আমার দেখা সেরা ইনিংস।’
গতকাল ৯টি ছক্কার প্রতিটিতে উৎসবটা করেছেন নিজস্ব স্টাইলে। এই স্টাইলেই নাকি রিদমটা বেশি পান,আরো বেশি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে হন উদ্বুদ্ধ রুম্মানÑ ‘ওটাই আমার শক্তি। আমি যখন পজিটিভ থাকি, ফোকাস থাকি তখন এভাবে উদযাপন করি। এটা বেশি বেশি করলে অনেক সামর্থ্যবান মনে হয় নিজের কাছে। পরের বলে আরো বেশি গতি পাই।’
টি-২০তে ব্যাটিংয়ে নেমেই এতোটা আগ্রাসী রূপে নিজেকে উপস্থাপনে অন্তর্নিহিত রহস্য শুনিয়েছেন রুম্মান এভাবেইÑ ‘আমি যখন টি-টোয়েন্টি চেজ করি, তখন আমি স্কোরবোর্ডর দিকে তাকাই, তখন রান রেট ফলো করি। কখন আমি রান রেটটা ৫-৬ নিয়ে আসবো, সেদিকেই মনোযোগ দেই।’ তবে পছন্দের ফরমেটের ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিতে দলকে জেতাতে না পারায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেননি রুম্মানÑ ‘এক রান করে ম্যাচ জেতানো আর ১০০ রান করে ম্যাচ জেতানো একই কথা। আমি যদি এক রান করে ম্যাচ জেতাতে পারতাম, তাহলে যে অনুভূতি পেতাম, সেঞ্চুরি করে দল হারলে সেই অনুভূতি থাকবে না। তাই সেঞ্চুরি করেও যখন দল হেরেছে, তা খারাপ লাগার মতোই ব্যাপার।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।