মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর কথা স্বীকার করলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক দলত্যাগী সদস্য। ক্যাপ্টেন নায় মিয়ো থেট গত ৬ বছর ধরে রাখাইনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি পালিয়ে যান এবং জান্তাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে আশ্রয় নেন। সেখানে এসেই তিনি গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। একইসঙ্গে এ নিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ)। ২০১৬ সালে রাখাইনে বড় মাত্রায় অভিযান চালানো শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে ওই বছরই ৯০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালে অভিযান তীব্র করা হলে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। ওই বছর ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আরএফএকে মিয়ো থেট জানিয়েছেন, সেনারা রাখাইনে যা করেছে তাতে সেখানে ‘গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে’। হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে তাতে সাক্ষ্য দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি। নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরে মিয়ো থেট জানান, ২০০৬ সালে মিয়ানমারের পিন-ও-লুইন একাডেমিতে যোগ দেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। প্রথম দিকে তাকে কায়িন ও কাচিন রাজ্যে মোতায়েন করা হয়। তাকে রাখাইনে পাঠানো হয় ২০১৫ সালে, ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেখানেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মিয়ো থেট জানান, ২০১৬ সালে একটি সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে প্রথম অভিযান শুরু করেন তারা। ২০১৭ সালে আরসা’র আরেক হামলার পর বড় অভিযান চালানো হয়। আমরা অভিযানে গিয়ে দেখি, সেখানে কিছুই আর বাকি নেই। স্থানীয়রা প্রায় সবকিছুই নিয়ে চলে গেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন মিয়ো থেট। তিনি বলেন, এক অভিযানে সেনারা গ্রামগুলোতে ছুরি বা এ ধরণের অস্ত্র খুঁজতে অভিযান চালিয়েছিল। সেখানে এক সেনা কর্মকর্তা রোহিঙ্গা মেয়েদের নগ্ন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে আরেক সদস্যের কাছ থেকে আমি জানতে পারি, তার এক সহকর্মী রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করেছে। তবে তার নাম আমার এখন মনে নেই। এছাড়া, একটি ছোট ছেলেকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। আস্তে আস্তে নির্মম সব ঘটনা আমার কানে আসতে থাকে। গ্রামবাসীকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং যারা দৌড়ে পালায় তাদেরকে গুলি করে মারা হয়। বেশিরভাগ লাশকে তাদের গ্রামের কাছেই কবর দেয়া হয়েছে। মিয়ো থেট বলেন, রাখাইনে যা হয়েছে, তা হওয়া উচিৎ ছিল না। এগুলো ছিল অগ্রহণযোগ্য। আমি আমার সহকর্মীদের এ কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা বিশ্বাস করতো, রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ যারা সন্ত্রাসী হামলা করেছে তাদেরকে সমর্থন দেয় এই রোহিঙ্গারা। তাই তাদেরকে তাড়িয়ে না দেয়া পর্যন্ত শান্তি আসবে না। অর্থাৎ, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পুরো একটি জাতিগোষ্ঠীকে বিতারিত করার ইচ্ছা পোষণ করতো। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার যে আন্তর্জাতিক অভিযোগ রয়েছে তাকে সমর্থন করেন বলেও জানান মিয়ো থেট। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হয়েছে তার জন্য মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি দায়ি নয় বলেই মনে করেন সাবেক এই সেনা সদস্য। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী একজন বলির পাঁঠা খুঁজছিল। তাই তারা এনএলডিকে (সুচির দল) ক্ষমতায় আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে অং সান সুচি আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছিলেন মূলত দুটি উদ্দেশ্যে। প্রথম তিনি জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের জন্য নিজেকে দায়গ্রস্থ মনে করেছিলেন। কিন্তু মিয়ো থেট বিশ্বাস করেন, এই গণহত্যার জন্য সুচিকে দায়ি করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, সুচির মোটেও হেগে যাওয়া উচিৎ হয়নি। কারণ, যা হয়েছে তার জন্য তিনি দায়ি ছিলেন না। তিনি কোনো অপরাধ করেননি। সামরিক বাহিনীই রাখাইনের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য দায়ি। তারাই এই বিদ্বেষের বীজ বপন করেছে। আমাকে যদি আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতে ডাকা হয়, আমি সেখানে যাব এবং যা যা জানি সব প্রকাশ্যে নিয়ে আসবো। আরএফএ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।