Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমায়ূনের নুহাশ পল্লী মজার জায়গা

প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রোববার ছিল তোমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমদের ৬৮তম জন্মদিন

লো ক মা ন তা জ


রাজধানীর অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক দুর্গম এলাকায় অবস্থিত বাগানবাড়ী। নির্মল আকাশ। প্রখর সূর্য। গাছের পাতা ভাবলেশহীন। যেন প্রার্থনায় রত। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। যেন প্রাকৃতিক নৈসর্গ। ঢুকে মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই হাতের বাঁ-পাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের ঘর। এর পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান। লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচুবাগের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।
বলছিলাম নুহাশ পল্লীর কথা। হুমায়ূন আহমেদের সমাধির কথা। একটি দুর্গম গ্রাম পিরুজালী। সেই গ্রামেই ১৯৯৭ সালে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে রয়েছে নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ, বনজ গাছ। পাশাপাশি তিনি বানিয়েছেন ঔষধি গাছের বাগান। সব মিলিয়ে মনের মতো করেই ছেলের নামে রাখা নুহাশ পল্লীকে এক স্বপ্নজগত করে তুলেছেন হুমায়ূন। তাই ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছের সেই নন্দন কাননে বারবারই ছুটে গেছেন তিনি। নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন শুটিং স্পট। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। শুটিং এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি ঘরগুলো অবাক করবে আপনাকে। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সকল নাটক সিনেমার অন্যতম শুটিং স্পট এটি। ‘দিঘি লীলাবতী’, হুমায়ূন আহমদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গাগুলোর একটা। সেখানে তিনি অনেক সময় কাটিয়েছেন। অনেক নাটক সিনেমার শুটিং করেছেন। আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। শানবাঁধানো ঘাটের দীঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, পুকুরের উত্তর পাড়ে মাঝারি সাইজের বটগাছ। দক্ষিণে একটি নতুন একতলা ছোট ঘর। বৃষ্টি দেখার জন্য বোধহয় এরচেয়ে ভালো জায়গা আর নেই। বৃষ্টি দেখা ছিল তার সবচেয়ে ভালোলাগার একটি। পুকুরের মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ। তাতে আছে গাছের ছায়া। সেখানে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের সেতু। অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। সুইমিং পুলের পানি অনেক বেশি নীলা। যেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদ একসঙ্গে জলে নেমেছিলেন। আছে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি। যা দেখলে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের মন কাড়বে।
সুযোগ পেলই তিনি নুহাশ পল্লীতে চলে যেতেন সময় কাটাতে। কখনো যেতেন সপরিবার নিয়ে, কখনো বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে। রাতভর আড্ডা দিতেন। তবে এখন আর আসেন না। আসা যাওয়ার সমাধি টেনেছেন সেই ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। বৃষ্টি ভেজা দিনে। বৃষ্টিতে স্নান করে সেই তো গেলেন। থাকবেন অনন্তকাল। আজও আছে স্মৃতি হয়ে। তার সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি দিয়ে অগণিত ভক্তের মাঝে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হুমায়ূনের নুহাশ পল্লী মজার জায়গা
আরও পড়ুন