দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রিয়নবি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হয়েছে যে, শরীরে ট্যাটু করা বা উল্কি অঙ্কন করা হারাম, কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) এবং অভিশাপ ও অত্যন্ত জঘন্য অপরাধযোগ্য কাজ। পাশাপাশি এটি অমুসলিমদের সাথেও সাদৃশ্য অবলম্বনের অন্তর্ভুক্ত। সেই সাথে এটি মহান আল্লাহর অপার সৌন্দর্যকে কৃত্রিমভাবে আল্লাহর সৃষ্টিগত সৌন্দর্য বিকৃতির শামিল,যা চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ। তাই নারী-পুরুষ সকলের জন্য শরীরে ট্যাটু বা উল্কি অঙ্কন করা, করিয়ে নেয়া, এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা, এটার ব্যাবসা করা, ইউটিউব বা অনলাইন-অফলাইনে এগুলো মানুষকে শিখানো বা প্রচার করা এককথায় এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কাজ সম্পূর্ণরূপে হারাম ও মারাত্মক অপরাধের শামিল। ইসলামি শরিয়তে এসব কিছুতে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। নিম্ন আলোচ্য বিষয়টি আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।
ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বিধর্মীদের সংস্কৃতি:
ট্যাটু বা উল্কি পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্যতম যা আমাদের দেশসহ পুরো বিশ্বে যুবক ও যুবতীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এটা পশ্চিমা বিশ্বে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটার মাধ্যমে তারা নিজেদের সৌন্দর্যকে বিকৃত করে। সেই সাথে কোন মুসলমান ট্যাটুতে যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় প্রতীক, প্রাণীর ছবি, ড্রাগনের মাথা, প্রাণীর কার্টুন, নারী-পুরুষের ছবি, বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ড এর নাম, অশ্লীল বাক্য ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় অথবা বিপরীত লিঙ্গের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ট্যাটু করা হয়, তখন তার গুনাহ ও ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পায়। একজন মুসলমান হয়ে বিধর্মীদের সংস্কৃতির অনুকরণ করা মানে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাওয়া যা হাদীস শরীফে নবীজির কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
ইসলামী নিদর্শন সমূহের ট্যাটু বা উল্কি আঁকা মারাত্মক অপরাধ:
ট্যাটু বা উল্কি আঁকা মারাত্মক গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইসব ট্যাটু বা উল্কির আঁকা কখনো কোন মুসলমানের সখ হতে পারে না। আরো আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে কিছু মুসলিম যুবক-যুবতী যারা পশ্চিমা খ্রিস্টানদের কৃষ্টি-কালচার এবং তাদের অপসংস্কৃতি ধারণ করে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কালিমা, আল্লাহ, রাসূল, কাবা শরীফ, মসজিদে নববী ইত্যাদি ইসলামি নির্দশনের ট্যাটু অঙ্কন করে এটিকে হালাল করার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটিও অত্যন্ত গর্হিত কাজ ও ইসলামের প্রতি ধৃষ্টতার শামিল। পবিত্র স্থান এবং চিহ্ন সমূহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কন করে এর মাধ্যমে ইসলাম ও কালিমার সম্মানহানি করা, ইসলামের সাথে চরম অন্যায় ও অমানবিক। যা কোন মুসলমান দেখতে ও সহ্য করতে পারে না।কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে অনেক মুসলিম যুবক-যুবতী এসব গর্হিত ও অন্যায় কাজকে এগুলোর ব্যাপারে ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও এগুলো সম্পর্কে না জানার কারণে অথবা হয়ত জেনেও অবজ্ঞা বশত: তথাকথিত ফ্যাশন হিসেবে শরীরে উল্কি অঙ্কন বা ট্যাটু করছে, অনেকে রীতিমত এ কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। অথচ এ কাজ করা যেমন হারাম তেমনি এটাকে পেশা হিসেবে নেওয়া এবং এই পেশা থেকে উপার্জিত অর্থও হারাম।
পবিত্র কুরআনুল কারীমের আলোকে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা:
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন, “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।” (সুরা তিন, আয়াত : ০৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আর তারা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি করবেই।” (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৯)
মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন, “তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বলল,আমি অবশ্যই আপনার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে অবলম্বন করবো। তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদের আশ্বাস দেব; তাদের পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদের আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে,সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।” (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৭-১১৯)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “যখন আল্লাহ ও তার রাসুল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার তাদের নেই। আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্য হয়, সে সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় লিপ্ত হয়।” (সুরা-আহজাব, আয়াত : ৩৬)
হাদিসের আলোকে ট্যাটু বা উল্কির আঁকা :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে এবং যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয়, যেসব নারী উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৯৮, মুসলিম, হাদিস : ৫৬৯৩)
অপর হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,যেসব নারী সৌন্দরে্যর জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, যেসব মহিলা ভ্রæ উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৪)
আরও একটি হাদিস মুসলিম শরিফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)
উল্কির কারণে অজু-গোসলে অসুবিধা :
উল্কির কারণে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে যদি বাধার সৃষ্টি হয়, তাহলে অজু আদায় হবে না। আবার ফরজ গোসলও সম্পন্ন হবে না। ফলে সবসময় অপবিত্র শরীর নিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে। তাই শরীরে উল্কি না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
উল্কি আঁকানোর অপকারিতা:
শরীরে উল্কি আঁকানোর বৈজ্ঞানিক কোনো উপকারিতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। উল্টো উল্কি ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। হেপাটাইটিস,টিউবারকিউলোসিস, টিটেনাসের মতো ইত্যাদি রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উল্কির রংও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ উল্কি আঁকার রাসায়নিক পদার্থ চামড়ার ভেতরের স্তরে প্রবেশ করে। আর যেহেতু এই উল্কি সারা জীবন শরীরে থাকবে, তাই ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থও সারা জীবন দেহে থেকে যাবে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ এমনকি ক্যান্সার হওয়া অসম্ভব কিছু না।
ভয়ংকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি করা হয় উল্কির রং:
এফা মারিয়া কাটস নামে একজন গবেষক একটি গবেষণাগারে কাজ করছেন। শরীরের অঙ্কিত উল্কির জন্য তৈরীকৃত রঙের রাসায়নিক পদার্থ কতটা ক্ষতিকারক, তা নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী থেকে শুরু করে উল্কি আঁকার কালি নিয়ে গবেষণা করি। ২০১০ সালে আমরা বেশ কিছু ট্যাটু-পার্লার থেকে প্রায় ৩৮ ধরনের কালি আমরা সংগ্রহ করি। (চলবে)
লেখক: সহকারি মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।