গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
হাসান সোহেল : দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন জানেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত অথচ বিশ্বে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি ১২ জনে একজন ডায়বেটিসে আক্রান্ত। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন-আইডিএফ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫’র ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মোট ৭১ লাখ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী ছিল। এছাড়া আরো প্রায় ৭১ লাখ (মোট প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ) মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে বসবাস করছে। যাদেরকে এখনও শনাক্ত কার হয়নি। ওই সময় পৃথিবীতে মোট ৪১ কোটি ৫০ লখ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী ছিল। তারা আরও আশঙ্কা করছে যে, ২০৪০ সালে পৃথিবীতে মোট ৬৪ কোটি ২০ লক্ষ ডায়াবেটিসের রোগী থাকবে। ২০১৫ সনে ডায়াবেটিসের রোগীর মোট সংখ্যা অনুসারে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ দশম অবস্থানে ছিল। কিন্তু ২০৪০ সনে গিয়ে মোট রোগীর সংখ্যা অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে নবম।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা জানান, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ঠ উদ্যোগী এবং বিভিন্নমাত্রায় সফল। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীরা তুলানমূলক খারাপ অবস্থায় জীবন যাপন করছে। এ যাবৎ কালে প্রকাশিত দু’টি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের বিশ শতাংশের কম রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল। এটিই বর্তমান বিশ্বের যে কোন দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রার তূলনায় খারাপ অবস্থা। ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতাগুলোতেও বাংলাদেশী রোগীরা বেশি ভুগছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো, এখানে অতি অল্প বয়সে মানুষ (ছেলে-মেয়েরা) টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের আরও একটি বড় ঝুঁকি হলো- বিপুল সংখ্যক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী, পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি।
এর কারণ হিসেবে দ্রুত নগরায়ণকে দায়ী করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীনগত ত্রুটি রয়েছে যা ডায়াবেটিসের জন্য সহায়ক। তবে এদেশের মানুষের জীবন-যাপন পদ্ধতি ও পরিবেশ ডায়াবেটিসের উপযুক্ত স্থান। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি দেশের কাঠামোগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চেয়ে লাগামহীনভাবে বাড়ছে। যন্ত্রনির্ভর জীবন-যাপন আমাদেরকে শারীরিক শ্রম বিমুখ জাতিতে পরিণত করছে। কম বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই দৈহিক স্থূলতায় ভুগছে। শ্রম বিমুখ জীবন-যাপন ডায়াবেটিসসহ সকল বীপাকজনিত রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান খাদ্যভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা শর্করা ও চর্বি নির্ভর খাদ্যের বলয় থেকে বেরুবার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না। এক্ষেত্রে কমবয়সীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ডা. সেলিম বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে সব বয়সের, সকল পেশার, সকল ধরণের মানুষ দৈহিক শ্রমময় জীবন-যাপন করতে উদ্বুদ্ধ হয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিবেশ বান্ধব উদ্যান-পার্ক, পায়ে হাঁটার উপযোগী সড়ক, খেলা-ধুলার পরিবেশ উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়াকে পাঠ্যক্রমে গুরুত্বসহকারে সংযোজন জরুরী। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য পরিত্যাগ করতে হবে। আনুষ্ঠানিকতায় অথবা আনন্দে উৎসবেও স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। সময় মতো খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব।
ডায়াবেটিসের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়ে থাকে। এ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) দিবসটি উদযাপন করে থাকে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘ডায়াবেটিসের উপর নজর রাখুন’। এতে যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো- ডায়াবেটিসের লক্ষণ নেই এমন প্রাপ্ত বয়স্ক লোককেও ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া। যাতে ডায়াবেটিসের জটিলতা দেখা দেবার আগে তাকে সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনা যায়। একই সঙ্গে ডায়াবেটিসের লক্ষণ বিহীণ সকল মানুষকে সচেতন করা। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা, তাদের ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে কিনা তা দেখা, চিকিৎসা সংক্রান্ত পদক্ষেপ সঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কিনা, তা নজরে রাখা। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।