গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
নেশার টাকা জোগাড় করতেই আপন ফুপা শামসুদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করেন তানভির আহম্মেদ। এই হত্যাকাণ্ডে তার সঙ্গে আরও দুইসহ তার দুই সহযোগী। হত্যার পর ওই বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তানভীর ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সম্প্রতি সময় রাজধানী উত্তরায় নিজ বাসায় ব্যবসায়ী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ (৭৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মো. মুসলিম (২০) ও মো. আবু সাফি (২৫) নামে জড়িত দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। তাদের কাছ থেকে একটি শাটার গান, ৪ রাউন্ড গুলি, লুন্ঠিত অলংকার ও নগদ ৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ১৫ মার্চ উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে ৮০ নম্বর বাড়ির পাঁচতলায় নৃশংসভাবে ব্যবসায়ী শামসুদ্দিনকে হত্যা করে তারই ভাতিজা তানভীর ও তার দুই সহযোগী। রক্তাক্ত অবস্থায় শামসুদ্দিনকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে। কাছের আত্মীয়রা বাসায় প্রায়শই আসে। ঢাকা শহরে অনেক বাসায় একজনের পরিচয়ে আরও কয়েকজন বাসায় আসে। আত্মীয়ের সঙ্গে অপরিচিত কেউ বাসায় এলে সবাই সাবধানে থাকবেন। প্রতিটি পরিবারের সচেতন থাকা উচিত। নিজের সন্তান কি করছে সবাইকে খোঁজ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, পাঁচজনের সংসারে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ শামসুদ্দিন সুখে শান্তিতে ছিলেন। তানভীর ছিলেন শামসুদ্দিনের স্ত্রী মিশেস রাশিদা বেগমের ভাতিজা। ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাশিদার ভাতিজা তানভীরসহ অপরিচিত আরও দুজন আসেন তাদের বাসায়। রান্নাবান্না শেষে নাতনীকে স্কুল থেকে বাসায় আনার জন্য বাইরে যান রাশিদা বেগম। এ সময় বাসায় একা ছিলেন শামসুদ্দিন। এরপর স্কুল থেকে নাতনিকে নিয়ে বাসায় এসে দেখেন রাশিদার স্বামী নিহত শামসুদ্দিন খাটের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এবং হত্যার পর তারা পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, কেন নিজের ফুপাকে গলা কেটে হত্যা করলো তানভীর, মামলার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রথমে মুসলিম নামের একজনকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সাফি নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, গুলি, কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তানভীর ছিলেন নেশা ও ঋণগ্রস্ত। গ্রেফতার দুজন ও ভারতে পলাতক তানভীরসহ চারজন মিলে একটি টিম গঠন করে। এমন আরও কত ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা এখনও ডিটেক্ট করতে পারিনি। পলাতক তানভীরের ধারণা ছিল তার ফুপুর বাসায় গেলে কয়েক লাখ নগদ টাকা পাওয়া যাবে। এই টাকা দিয়ে সে ঋণ থেকে মুক্ত হবে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাই নেশাগ্রস্ত হওয়ায় নেশার টাকাও জোগাড়ের একটা ব্যবস্থা হবে বলে মনে করে।
নিহতের ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, তানভীরের পরিবারকে আমার মা প্রচুর সাহায্য করেছে। এখনও অনেক সাপোর্ট করে। আমি যে কারখানায় চাকরি করতাম, সেখানে সেও এক থেকে দেড় বছর চাকরি করতো। ওরা ভেবেছিল আমাদের বাসায় অনেক টাকা পয়সা পাবে। কিন্তু কাক্ষিত টাকা পয়সা তারা পায়নি। এর মধ্যে আমার বাবা বাধা দিতে গেলে প্রথমে আমার মামাতো ভাই বাবাকে আক্রমণ করে। আমার মামাতো ভাই যে গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করত সেখানে সে বিভিন্ন পণ্য চুরি করতো। এই চুরির দায়ে তার চাকরি চলে যায়। আত্মীয়তার সম্পর্কে এটা শুধু একটা খুন নয়, বিশ্বাসকে ভঙ্গ করা। পলাতক তানভীরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।