পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকায় পানি ও গ্যাসের সংকট থাকায় রমজান মাসে ঠিক সময়ে রান্না-বান্না করতে না পেরে অনেকেই দূষিত পানি পান এবং পচা-বাসি খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। চলতি বছরে সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন লাখেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে মৃত্যুর হিসাব না থাকলেও রাজধানীর মহাখালীতে কলেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) মারা গেছেন ২৯ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯,২৩৩ জন রোগী।
আইসিডিডিআর,বি-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোসেন জানান, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এটার কারণ মূলত রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির অভাব। ঢাকা শহরেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। আইসিডিডিআর,বি-এর গণসংযোগ বিভাগ জানায়, সারা বছরই ডায়রিয়া হয় তবে এ বছরের মার্চ মাস থেকে এর প্রকোপ বেড়ে গেছে। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ৪৩ হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মার্চ মাসে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ৫০০ রোগী। আর চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৩শ’র বেশি রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ৮ এপ্রিল ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৮২ জন। এখন প্রতি ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে প্রায় ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত ১ এপ্রিল এক হাজার ২৭৪ জন, ২ এপ্রিল এক হাজার ২৭৪ জন, ৩ এপ্রিল এক হাজার ১৭১ জন, ৪ এপ্রিল এক হাজার ৩৮৩ জন, ৫ এপ্রিল এক হাজার ৩৭৯ জন, ৬ এপ্রিল আরও এক হাজার ৩৭০ জন এবং ৭ এপ্রিল এক হাজার ৩৬১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারিফ হাসান জানান, গত ১৬ মার্চ এক হাজার ৫৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরদিনই (১৭ মার্চ) আরও এক হাজার ১৪১ জন রোগী ভর্তি হন। এরপর যথাক্রমে ১৮ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ এক হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ এক হাজার ২৭২ জন ভর্তি হন। মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জন। এরা হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন।
আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার পর হাসপাতালের সামনে দুইটি আলাদা তাঁবু করা হয়েছে। দুইটি তাঁবুতে মোট শয্যা ১৫০টি। আর হাসপাতালে আছে ৪৫০টি। আরো কিছু রোগীকে অতিরিক্ত বেড করে জায়গা দেয়া হচ্ছে। এখন হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে কমপক্ষে ৬৫০ জন ডায়রিয়া রোগি ভর্তি থাকছেন। তিনি বলেন, প্রতি দিন এক হাজার ৩০০-এর বেশি রোগী এলেও সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা অনেক রোগীকে ফ্লুইড দিয়ে ‘স্ট্যাবল’ করে ফেলি। এরপর চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিই। আর যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে তারাও চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তবে এখন আমরা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।
গরমের এই সময়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং পঁচা-বাসি খাবার খেয়েই বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন আইসিডিডিআর,বি-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, এখন গরম এবং বাতাসে আর্দ্রতা আছে। তাই খাবারে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, এটাও ডায়রিয়ার কারণ। ঢাকায় এমনিতেই এখন পানির সংকট চলছে। আবার গ্যাসের সংকট থাকায় ঠিক সময়ে রান্না-বান্না করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই দূষিত পানি পান এবং পচা- বাসি খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি জানান, সাধারণত শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। কিন্তু এবার প্রাপ্তবয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ তারা নানা কাজে বাইরে থাকছেন। বিশেষ করে যারা নিম্নবিত্ত তারা এই গরমে বাইরের দূষিত পানি এবং শরবত বা জুস খাচ্ছেন। নিম্নবিত্ত মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তারা রাস্তার পাশে কাজ করেন, কেউ রিকশা চলান। এই গরমে তারা যা পাচ্ছেন তাই খাচ্ছেন।
ডা. মো. ইকবাল হোসেন সবাইকে পানিয়ে ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন। আর সেটা যে পরিমাণ পানি হোক না কেন বলক ওঠার পর আরো পাঁচ-সাত মিনিট ফুটাতে হবে। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই হাসপাতালে না গিয়ে খাবার স্যালাইন নিয়ম মেনে খাবার পরামর্শ দেন। যদি বেশি বেশি বমি হয়, চোখ মুখ শুকিয়ে যায়, অবসাদ লাগে তাহলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের সব বিভাগ ও জেলায়ই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ঢাকা বিভাগে তথা রাজধানী ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের হিসেবে ঢাকায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ।
নারায়ণগঞ্জে ৪০ পুলিশ ডায়রিয়া : এদিকে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ব্রক্ষপুত্র নদে গোসলের সময় আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৪০ জন পুলিশ সদস্য ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান। তিনি জানান, সকালে দায়িত্ব পালনকালে একে একে ৪০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী লাঙ্গলবন্দ থেকে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। বাকি ৩৯ জনের মধ্যে ৭ জন এখন ভর্তি আছেন বাকিরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, আমরা তো তাদেরকে খাবার সরবরাহ করে থাকি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ফুড পয়জনিং থেকে হতে পারে এমনটা। হয়তো বাইরের কিছু খেয়ে থাকতে পারেন। সকলেই আপাতত সুস্থ আছেন। একজনের ডায়রিয়া বেশি হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সবাইকে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে, যেহেতু এটি পানিবাহিত রোগ।
চট্টগ্রামে আক্রান্ত আরো ১৪০ জন : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত আরো ২৪০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন শুক্রবার এ সংখ্যা ছিলো ১২৮। গতকাল শনিবার সুস্থ হয়েছেন ৪৪ জন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, গত এক সপ্তাহে জেলার ১৫টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৯৩ জন। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটিসহ মোট ২৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।