Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক মুমিন আরেক মুমিনেন আয়না

তাশরীফ আহমদ | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৯ এএম

হাদীস শরীফে এসেছে- নবী কারীম (সা.) বলেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ। অর্থাৎ আয়না যেমনিভাবে মানুষকে তাদের চেহারার দোষ ধরিয়ে দেয়, তদ্রূপ একজন মুমিন বান্দা অপর মুমিনের জন্য আয়নার ন্যায় হওয়া উচিত যে, মুমিন বান্দা অপরের মাঝে কোন দোষ দেখলে আয়নার ন্যায় তার অপর মুমিন ভাইকে ওই দোষ সম্পর্কে বলে দিবে।
বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম এবং মনীষিণীগণ এমন করতেন। হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলতেন, ওই ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, যিনি আমাকে আমার দোষ সম্পর্কে অবগত করে দেন। তিনি সালমান ফার্সী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে নিজের দোষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। একদা হযরত সালমান ফার্সী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার কাছে আসলে তিনি বললেন, আমার সম্পর্কে এমন কোন কথা তোমার কাছে পৌঁছেছে কি? যা আপনার কাছে খারাপ মনে হয়? সালমান ফার্সি (রা.) বললেন, আমাকে এব্যাপারে ক্ষমা করুন। এরপর উমর রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু অনেক পীড়াপীড়ি সহকারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি শুনেছি আপনি দস্তরখানে দু’রকম তরকারি একত্রিত করেন এবং আপমার কাছে দু’প্রকার পোশাক আছে; এক প্রকার দিনের এবং এক প্রকার রাতের। তিনি বললেন, এছাড়া আরও কিছু শুনেছেন? সালমান ফার্সী (রা.) কোন জবাব দিলেন না।
হযরত উমর (রা.) বিশিষ্ট সাহাবী হুযায়ফা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করতেন, আপনার কাছে রাসূল (সা.) মুুনাফিকদের লিষ্টি দিয়ে গেছেন; ওই লিষ্টিতে আমি উমরের নাম আছে কিনা? হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যিনি আশারায়ে মুবাশশারা তথা জান্নাতে সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহা বীর একজন, যিনি ছিলেন দ্বিতীয় খলীফা, যার সম্পর্কে আল্লাহর হাবীব (সা.) বলেছেন : আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তাহলে উমর নবী হতো। এমন মহান ব্যক্তিত্ত্বের অধিকারী হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নিজেকে কতো দোষী মনে করতেন? মুনাফিকদের লিষ্টিতে তার নাম আছে কি না?
এর ভয় করতেন! আজ আমরা কোথায়? আমরা নিজেদের ফেরেশতাদের মতো নির্দোষী মনে করে থাকি, কেউ যদি আমাদেরকে কোন দোষ সম্পর্কে অবগত করে তাহলে আমরা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠি! আফসোস। বর্তমানে এমন বন্ধু পাওয়া খুবই কঠিন, যে তার বন্ধুর দোষ বলে দিবে।বর্তমানে বন্ধু হলো হিংসুক ও স্বার্থপর। ফলে যেটা দোষ নয় সেটাকেও দোষ মনে করে এবং বন্ধু কোনো দোষ সম্পর্কে জানানোর ব্যাপারে খোশামোদ করলে বন্ধুর দোষ লুকিয়ে রাখে, বলে না, বলতে রাজি হয় না। এইজন্য দাউদ তায়ী রহ. মানুষের সাথে উঠা-বসা ত্যাগ করেছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো,
আপনি মানুষের সাথে উঠা-বসা করেন না কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এমন লোকদের সাথে উঠা-বসা করে কর লাভ? যারা আমাকে আমার দোষ সম্পর্কে অবগত করে না? মোটকথা আল্লাহ প্রেমি এবং আল্লাহ ওয়ালা লোকদের বাসনা এটাই থাকে যে, অন্যের বলে দেওয়ার কারণে তারা নিজেদের দোষ সম্পর্কে অবগত হয়ে নিজের দোষ দূর করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি হলো, কেউ উপদেশের কথা বললে কিংবা দোষ প্রকাশ করলে তাকে মনে করা হয় বড় শত্রু। মূলত এটাই হচ্ছে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।
স্মরণ রাখা উচিত, আমাদের কাপড়ে বিচ্ছু/বিষাক্ত সাপ আছে বলে যদি কেউ আমাকে সতর্ক করে দেয় তাহলে ঐ ব্যক্তির প্রতি আমরা যে পরিমাণ কৃতজ্ঞ হই, কেউ আমাকে আমার ভুল অথবা অসৎ চরিত্র সম্পর্কে অবগত করলে তার প্রতি এর থেকে বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া আবশ্যক। কারণ বিচ্ছু, বিষাক্ত সাপের দংশনে কারণে বেশি থেকে বেশি আমার মৃত্যু হতে পারে, এর জন্য জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে না। কিন্তু অন্তরের দোষ-ত্রুটি নিয়ে মৃত্যু বরণ করলে আল্লাহ না করুক জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে!
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সকলকে নিজদের দোষ-ত্রুটির প্রতি দৃষ্টিদান এবং কেউ আমাদেরকে আমাদের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে অবগত করলে তার প্রতি বাস্তবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার তাওফিক দান করুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ